Ajker Patrika

স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপির গুরুত্ব

ফারহানা মিলি
স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপির গুরুত্ব

অনিয়মিত জীবনযাত্রা, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্যসহ বহুমূত্রের মতো সমস্যার কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৃত্যুর অন্যতম কারণ স্ট্রোক। এটি মৃত্যুহারের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ২০১৮ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১ হাজারে ১১ দশমিক ৩৯ জনের স্ট্রোক হয়।

স্ট্রোকের কারণ মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হওয়া। রক্তনালি ছিঁড়ে গেলে বা ব্লক হলে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের কোষ মরে যায়। এ কারণে রোগীর বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। 

স্ট্রোকের সাধারণ লক্ষণ

  • কথা বলায় বা বুঝতে সমস্যা হওয়া
  • শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যাওয়া
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • ঢোক গিলতে সমস্যা হওয়া
  • শারীরিক ভারসাম্যহীনতা এবং তীব্র মাথাব্যথা 
  • স্ট্রোক হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসাসহায়তা নেওয়া জরুরি।

স্ট্রোক প্রতিরোধ
যদিও স্ট্রোক অনেক সময় আকস্মিকভাবে হয়, কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ঝুঁকি কমানো যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: সবজি, ফলমূল, পূর্ণ শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া।
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম: প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা।
ধূমপান ও মাদক পরিহার: তামাক ও মাদকের ব্যবহার ছেড়ে দেওয়া। 
রক্তচাপ ও রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করাও এ ক্ষেত্রে জরুরি।

স্ট্রোকের প্রভাব
প্রতিটি স্ট্রোকের প্রভাব আলাদা। এটি মস্তিষ্কের ক্ষতির স্থান ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে।

সাধারণ প্রভাবগুলো হলো

  •  কথা বলার ও বোঝার সমস্যা অর্থাৎ অ্যাফাসিয়া
  • খাওয়া বা ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া অর্থাৎ ডিসফ্যাজিয়া
  • চলাফেরা ও দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা হওয়া
  • বিষণ্নতা বা উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যা
  • স্ট্রোক পুনর্বাসনে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপির ভূমিকা

স্ট্রোকের ফলে অনেকে যোগাযোগ ও খাবার গেলা নিয়ে সমস্যায় ভোগেন। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগী স্ট্রোকের পরে ভাষাগত সমস্যা বা অ্যাফাসিয়ায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে কথা বলা, বোঝা এবং লেখার দক্ষতা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

নিউরোপ্লাস্টিসিটি ও পুনরুদ্ধার
স্ট্রোকের পর মস্তিষ্কের কোষ পুনরায় তৈরি হয় না। তবে মস্তিষ্কের অন্য অংশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত অংশের কাজ চালিয়ে নিতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যকে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্ট্রোকের পরেও রোগীরা তাঁদের হারানো দক্ষতা ফিরে পেতে পারেন।

স্ট্রোকের পরে রোগীর পুনর্বাসন সাধারণত হাসপাতালে শুরু হয়। ডিসচার্জের পরে বাড়িতে বা পুনর্বাসন কেন্দ্রে এর চিকিৎসা অব্যাহত থাকে। স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির কথা বলা, ভাষার ব্যবহার ও খাবার গেলার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। স্ট্রোকের পরের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন সঠিকভাবে পরিচালিত হলে একজন ব্যক্তি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। তবে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৮ অনুসারে পাঁচ বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি ডিগ্রি সম্পন্নকারী থেরাপি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

পরামর্শ দিয়েছেন: ফারহানা তাবাসসুম রিয়া, ক্লিনিক্যাল স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট, সিআরপি, সাভার এবং সদস্য, এসএসএলটি

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত