Ajker Patrika

ইতালির জেনেটি ট্রেন: ১৯১১ সালে যাত্রা করে ১৮৪৫ সালে কি মেক্সিকো পৌঁছেছিল

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ৩০
ইতালির জেনেটি ট্রেন: ১৯১১ সালে যাত্রা করে ১৮৪৫ সালে কি মেক্সিকো পৌঁছেছিল

‘১৯১১ সালের ১৪ জুন। ইতালির জেনেটি নামক এক কোম্পানি ঘোষণা করল, তারা তাদের নতুন একটি ট্রেন লঞ্চ করতে চলেছে। যেটার প্রথম সফরে যাত্রীদের দেওয়া হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যাত্রার সুযোগ। সেকালের হিসেবে ট্রেনটির সাজ সরঞ্জাম, খাবার দাবার ছিল যথেষ্টই লোভনীয়। বেশ আকর্ষণীয় সুযোগই বলতে হয়। ফলে অনেকেই প্রথম সফরে যাওয়ার আর্জি জানালেন। শেষমেশ সফরের দিন দেখা গেল গাড়ির চালক মিলিয়ে মোট ১০৬ জন যাত্রী ট্রেনটিতে যাত্রা করছেন। গ্রীষ্মের সকালে মোট ১০৬ জন যাত্রী নিয়ে সেই জেনেটি ট্রেন তার যাত্রা শুরু করল। সব ঠিকই ছিল। ট্রেন চলছিল নিয়মমাফিক। যাত্রীরা বেজায় খুশি। সকলেই গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত চুটিয়ে উপভোগ করছেন এই ট্রেন জার্নি। এমন সময়ই ট্রেনটি এসে পৌছাল লম্বারডি পাহাড়ের কাছাকাছি। এই পাহাড়ের পেটের ভিতর দিয়ে একটি অন্ধকার টানেল। এই টানেল পার করেই ট্রেনটিকে পৌঁছতে হবে গন্তব্যে। যদিও টানেলে ঢোকার আগে সেই ট্রেনের যাত্রীরা ভাবতেও পারেনি তাদের সঙ্গে কি ঘটতে চলেছে।...’ 

এমন একটি রহস্যগল্প কয়েক বছর ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমেও প্রচার হয়ে আসছে।

রহস্যময় ট্রেনটি সম্পর্কে দাবি করা হয়, ট্রেনটি যাত্রাপথে ওই টানেলে প্রবেশ করার পর আর বের হয়নি। ট্রেনটির কোনো হদিসও মেলেনি। তবে ওই ট্রেনেরই দুজন যাত্রীর খোঁজ পাওয়া গেছে। তাঁরাই সেই টানেলের ভেতরে তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।

কথিত ওই দুই যাত্রীর বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, ‘ট্রেনটি টানেলের মাঝামাঝি পৌঁছাতেই অদ্ভুত সাদা কুয়াশা ঘিরে ফেলে। সেই অদ্ভুত কুয়াশায় ট্রেনের যাত্রীদের সবারই দম বন্ধ হয়ে আসে। সবাই ছটফট করতে থাকে। ট্রেন জুড়ে হইচই পড়ে যায়। আতঙ্কে যাত্রীরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে। ঠিক সেই সময়, একদম শেষ মুহূর্তে এই দুজন যাত্রী ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন। এরপর তাঁদের চোখের সামনে ট্রেনটি মিলিয়ে যায়!’

ট্রেনটি সম্পর্কে আরও দাবি করা হয়, একই ট্রেন নাকি টাইম ট্রাভেল করে ১৮৪৫ সালে মেক্সিকোতে গিয়ে পৌঁছেছিল!

আসলেই কি এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল? জেনেটি নামের কোনো রেল কোম্পানি এবং তাদের এমন ট্রেনের আসলেই কোনো অস্তিত্ব ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

সূত্রের খোঁজে 
জেনেটি নামের ট্রেনটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে গুগল অ্যাডভান্স সার্চে সম্ভাব্য প্রথম কনটেন্টটি পাওয়া যায় অ্যানসিয়েন্টস বিজি নামের একটি ওয়েবসাইটে।  ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি প্রকাশিত। বাংলা ভাষায় ট্রেনটি নিয়ে সম্ভাব্য প্রথম প্রতিবেদন পাওয়া যায় ভারতীয় বাংলা ভাষার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার ওয়েবসাইটে, ২০২১ সালে। ভারতীয়সহ ইংরেজি ভাষার বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমেও ট্রেনটি নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ওই সময় থেকেই ট্রেনটি সম্পর্কে প্রচার হয়ে আসছে। সবখানেই ঘটনার বর্ণনা প্রায় একই। কোনো প্রতিবেদনেই নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ নেই। 

প্রতিবেদনগুলোতে যেসব ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো যাচাই করে করে দেখা গেছে, একেক প্ল্যাটফর্মে একেক স্থানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, কিছু প্রতিবেদনে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অবস্থিত ফিনিক্স পার্ক টানেল নামে একটি রেলওয়ে টানেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কোথাও ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনশায়ারে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত রেলওয়ে টানেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। 

জেনেটি ট্রেনের অস্তিত্ব অনুসন্ধানে
অনুসন্ধানে জেনেটি ট্যুরিজিমো নামে ইতালির একটি ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের অ্যাবাউট সেকশনের তথ্য অনুযায়ী, ইতালির ভেনেতো অঞ্চলে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে জেনেটি ট্যুরিজিমো। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৭ সালে মারিও জেনেটি নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসের সঙ্গে রেল সেবা দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।

যেখানে রহস্যময় জেনেটি ট্রেনটির ইতিহাস সম্পর্কে দাবি করা হয়, এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯১১ সালে। অর্থাৎ জেনেটি ট্যুরিজিমোর প্রায় ৫০ বছর আগে। 

ইতালিতেই ম্যাসিমো জেনেটি নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান একটি ইতালীয় কফি শপ চেইন। 

ইতালির বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে জেনেটি নামে একটি পোশাক ব্র্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে নির্মাণ সামগ্রী বিক্রয়কারী আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়। 

অন্তত ইন্টারনেটে জেনেটি নামে কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি রেলওয়ে কোম্পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

ইতালিতে ট্রেনসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে ইন্টারনেটে অনুসন্ধানে জেনেটি নামে কোনো কোম্পানির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৮৩৯ সালে ইতালিতে প্রথম ট্রেন যাত্রা শুরু হয়। দেশটিতে রেল সেবাদানকারী তিনটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা যায়। এর মধ্যে ট্রেনিটালিয়া রেলওয়ে কোম্পানিটি ইতালির সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রধান রেল কোম্পানি। এর বাইরে আছে— ইতালো রেলওয়ে কোম্পানি ও ট্রেনর্দ–মিলানো লমবার্ডি রেলওয়ে। 

এ ছাড়া ইতালির রেলওয়ের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৮৮৪ সালে দেশটিতে তিনটি বেসরকারি রেলওয়ে কোম্পানি ছিল। ১৯০৫ সালে এসে সরকারি রেলসেবা প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। এরপরের ইতিহাস থেকেও জেনেটি নামের কোনো কোম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।

যেহেতু দাবি অনুযায়ী, জেনেটি ট্রেনটি ১০৬ জন যাত্রীসহ হারিয়ে গেছে, নিঃসন্দেহে এটি অনেক বড় ঘটনা। এই ট্রেনের যাত্রীদের নামের তালিকা, ট্রেনটির দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার সংবাদ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারিত হওয়ার কথা। কিন্তু বিশ্বের মূল ধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই ঘটনা স্মরণে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায় না। 

অথচ দাবিকৃত এই ঘটনার প্রায় এক বছর পরই ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় টাইটানিক। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ইংল্যান্ডের সাদাম্পটন থেকে ছেড়ে যায় জাহাজটি। এটিই ছিল সেকালের সর্ববৃহৎ জাহাজটির প্রথম সমুদ্রযাত্রা। আটলান্টিকে একটি হিমবাহের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দেড় হাজারের বেশি আরোহী নিয়ে ডুবে যায় টাইটানিক। ঘটনাটি সে সময়কার সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এমনকি এখনো আলোচিত হয়, এ নিয়ে হলিউডে ব্যবসাসফল সিনেমাও হয়েছে।

ইতালির ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান জেনেটি ট্যুরিজিমো ওয়েবসাইট। ছবি: জেনেটি ট্যুরিজিমো

ইউরোপে রেল দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ খুঁজে বিশ শতকে ইতালিতে বড় দুটি রেল দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। যার একটি ঘটেছিল ১৯৬২ সালের ৩১ মে। এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল ইতালির ভোগেরা শহরে যাত্রীবাহী ট্রেনে পণ্যবাহী ট্রেনের ধাক্কায়। এতে ৬৪ জন নিহত হন এবং আহত হন ৪০ জন। আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে এর আগের বছর, ১৯৬১ সালের ২৩ ডিসেম্বর। ইতালির ফিউমারেলাতে ঘটা এই দুর্ঘটনায় একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে গেলে ৭১ জন নিহত হন এবং ২৮ জন আহত হন।

এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালের ২ মার্চ ইতালির সালেরনো শহরের কাছে একটি টানেলে ট্রেনে ৫০০ জনেরও বেশি আরোহীর দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুর তথ্যও  ইন্টারনেট সূত্রে জানা যায়। এই ঘটনা নিয়ে ট্রেনটির নম্বর উল্লেখ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইতিহাস ভিত্তিক ওয়েবসাইট হিস্ট্রি ডটকম। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ট্রেনটির নম্বর ছিল ৮০১৭। 

১৯১২ সালে টাইটানিক জাহাজ ডুবির পর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন। ছবি: সংগৃহীত কিন্তু কথিত জেনেটি কোম্পানির ট্রেনটির গল্পে ঘটনাস্থল, টানেলের নাম বা ট্রেনে নম্বর— এমন কোনো তথ্যই নেই।

ইন্টারনেটে ভাইরাল ঘটনাটি নিয়ে যা জানা যায়
ইন্টারনেটে ভাইরাল জেনেটি ট্রেনের ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপস। ২০২২ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ইতালির জেনেটি রেল কোম্পানির ট্রেনটির যাত্রা শুরুর পর কুয়াশাচ্ছন্ন টানেলে হারিয়ে যাওয়া কোনো বাস্তব ঘটনা নয়; এটির মূল একটি কল্পকাহিনী। পরবর্তীতে ইন্টারনেটে নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং অনেকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করেছেন। 

স্নোপস জেনেটি ট্রেনের রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ করা ই–বরঘি নামের একটি ইতালীয় ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, জেনেটি ট্রেনের গল্পটি ইউক্রেনের লেখক নিকোলে চেরকাশিনের একটি কল্পকাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৫
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত