Ajker Patrika

কাঁঠালের সঙ্গে কোকাকোলা পান তিনটি গোখরার ছোবলের সমান বিষাক্ত! তথ্যটির ভিত্তি আছে কি

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪: ২৯
কাঁঠালের সঙ্গে কোকাকোলা পান তিনটি গোখরার ছোবলের সমান বিষাক্ত! তথ্যটির ভিত্তি আছে কি

বাংলা নতুন বছর সবে শুরু। এরপরই আসবে ফলের মাস জৈষ্ঠ্য। এই সময়ে পাকা আম–কাঁঠালের ঘ্রাণে ম ম করে চারদিক। তবে গত বছর এই সময়টাতে কাঁঠাল খাওয়া নিয়ে একটি তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়ে আসছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, কাঁঠাল খাওয়ার পর আপনি যদি কোকাকোলা পান করেন তাহলে আপনার নিশ্চিত মৃত্যু হতে পারে। কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে একসঙ্গে তিনটি সাপের কামড়ের সমান বিষক্রিয়া হয়।’

সম্প্রতিও একই তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

তবে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে দাবিটির সত্যতার পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাহলে দাবিটির ভিত্তি কী? এ নিয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্লকচেইন–ভিত্তিক ব্লগিং ও সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট স্টিমইট–এ অন্তত সাত বছরের পুরোনো এই সম্পর্কিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়।

পোস্টটিতে কাঁঠাল সদৃশ একটি ফল ও কোকাকোলার ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয়, কাঁঠাল খেয়ে কোক পান করলে সেটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাঁচটি বিষধর গোখরার ছোবলের সমান। পৃথিবীতে প্রতি বছর এভাবে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। তারা কখনই জানতে পারে না যে, তাদের কী হয়েছিল। কাঁঠাল খেয়ে কোক পান করলে এই ব্যাপারগুলো আপনার শরীরেও ঘটবে। ক্যাফেইন নেশার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়। ফলে আকস্মিকভাবে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

পোস্টের সঙ্গে যুক্ত ফলটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এটি কাঁঠাল নয়, বরং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এই ফল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের এই ফলের নাম ডুরিয়ান। এটি দেখতে অনেকটা কাঁঠালের মতো। এই ফল পাকলে কাঁঠালের মতোই তীব্র ঘ্রাণযুক্ত হয়।

একই বিষয়ে আরেকটি পোস্ট পাওয়া যায় ২০১৫ সালে ‘Video Sansar’ নামের একটি ফেসবুক পেজে। ওই বছরের ২৫ জুন করা পোস্টটিতে দাবি করা হয়, চীনে ওই সময় এক লোক কাঁঠাল খেয়ে কোকাকোলা পান করেছিলেন। ১৫ মিনিট পরেই ওই ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট, বমি শুরু হয় এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে ঘণ্টাখানেক পর চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর শরীরে কোকাকোলা এবং কাঁঠাল বিষে পরিণত হয়েছিল, যা পাঁচটি গোখরার বিষের সমান।

পোস্টটিতে এসব দাবির পক্ষে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।

পরে এই দুই পোস্টের সূত্রে কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগের এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২০ সালের ১৩ জুলাই প্রকাশিত। এই প্রতিবেদনে ডুরিয়ান এবং কোকাকোলা একসঙ্গে খেলে মৃত্যু হতে পারে—এমন দাবিকে ভুল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার পিয়াপন প্রুয়েক্সাপানিচ এএফপি ফ্যাক্টচেককে বলেন, ‘ডুরিয়ান এবং কোকাকোলা একসঙ্গে খাওয়া বিপজ্জনক নয় এবং এই দুটো একসঙ্গে খেলে তা মানবদেহে তীব্র বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে না। তবে, স্থূলতার ঝুঁকি এড়াতে অন্যান্য উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবারের মতো ডুরিয়ান এবং কোকাকোলা একসঙ্গে বেশি খাওয়া উচিত নয়। তবে ডুরিয়ান এবং কোকাকোলা একসঙ্গে খাওয়া নিরাপদ।

কাঁঠালের সঙ্গে কোকাকোলা পান প্রসঙ্গে ভারতের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক ওয়েবসাইট লিব্রেট–এ একটি আলোচনা পাওয়া যায়। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কাঁঠাল খাওয়ার আগে বা পরে কোক পান করলে কী তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে? এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. রাজীব গুপ্ত নামে ৪২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান বলেন, খাবারের এমন সম্মিলনে মৃত্যুর কোনো ঝুঁকি নেই। তবে এটি ভালো খাদ্যাভ্যাস নয়। 

কাঁঠালের সঙ্গে কোকাকোলা পানে মৃত্যু হতে পারে -এমন দাবিকে ভিত্তিহীন বলছে বিশেষজ্ঞরা।একই প্রশ্নে রিয়াজ খান নামে আরেকজন পুষ্টিবিদ বলেন, ‘না। খাদ্যদ্রব্যের এমন সংমিশ্রণে মৃত্যু হওয়াটা অস্বাভাবিক।’ নরেন্দ্র বাবু নামে আরেকজন পুষ্টিবিদ বলেন, ‘খাদ্যের এমন সংমিশ্রণ মৃত্যু ঘটাতে পারে না। কিন্তু এটি আপনার শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে এবং আপনার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এমন কোনো অভ্যাস অনুসরণ না করাই ভালো।’

একই প্রশ্নের উত্তরে গীতাঞ্জলি আহুজা মেঙ্গি নামে আরেক পুষ্টিবিদ বলেন, ‘এই দাবিকে সমর্থন করে— এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য বা গবেষণা নেই। কোনো খাদ্যই সাধারণত মৃত্যু ঘটাতে পারে না। যদি না তাতে বিষ থাকে বা কোনোভাবে বিষাক্ত হয়।’

নেটিজেনদের একই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দেখা যায় প্রশ্নোত্তর বিষয়ক ওয়েবসাইট কৌরাতেও। এমন এক প্রশ্নের উত্তরে মিশকাত আনাম নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি একই সঙ্গে ২৫০–৫০০ মিলিমিটার কোকাকোলা এবং ৩–৪ কোষ কাঁঠাল খেয়েছেন। কিন্তু তাঁর শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে কিছুটা উদ্বেগ এবং বমিভাব অনুভব করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, এই সম্পর্কিত গুজব শোনার কারণে তাঁর এমনটা হয়ে থাকতে পারে।

এসব তথ্যের বাইরে দাবিটির সমর্থনে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

বরং দেখা যায়, কেবল কাঁঠাল নয়, প্রায় একইরকম দাবি ইন্টারনেটে আরেকটি গ্রীষ্মকালীন ফল আমের ক্ষেত্রেও প্রচার করা হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ব্যাঙ্গালোর মিররে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দাবি ছড়িয়ে পড়েছিল। যেখানে দাবি করা হয়, একজন ভারতীয় চীনে ঘুরতে গিয়ে আমের সঙ্গে কোকাকোলা পান করেছিলেন। ওই ব্যক্তি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকেরা তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে আমের সঙ্গে কোক পান করাকে দায়ী করেছেন। কারণ, আম ও কোক মিলে তীব্র বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। 

এই গল্পটি ২০১৫ সালে চীনে কাঁঠাল খেয়ে কোকাকোলা পানের পর মৃত্যুর ঘটনার গল্পটির সঙ্গে মিলে যায়। 

ফল সম্পর্কে প্রচলিত ভুল নিয়ে আরও পড়ুন:

তবে ব্যাঙ্গালোর মিরর জানায়, আম খেয়ে কোকাকোলা পানের ফলে মৃত্যুর ঘটনার দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং আম ও কোকাকোলার সম্মিলনে কোনো বিষক্রিয়া তৈরি হয় না।

দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন সময়েই কোকাকোলার সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন ফল জুড়ে দিয়ে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে যে, এসব ফলের সঙ্গে কোকাকোলা পান করলে বিষক্রিয়া হয়ে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে।

নির্ভরযোগ্য প্রমাণ না থাকা এবং এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ‘কাঁঠালের সঙ্গে কোকাকোলা পানে তিনটি সাপের কামড়ের সমান বিষক্রিয়া হতে পারে’—এমন দাবিকে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ ‘মিথ্যা তথ্য’ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৫
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত