ফ্যাক্টচেক /ইটভাটায় যুবক ও চিতাবাঘের লড়াইয়ের ভিডিও বাংলাদেশের নয়, ভারতের

লক্ষ্মীপুরে ইটভাটায় এক যুবক ও চিতাবাঘের লড়াইয়ের দৃশ্য—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে। ক্যাপশনে ১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ইটভাটায় একজন যুবক একটি চিতাবাঘের সঙ্গে লড়াই করছেন। এমন সময় ইটভাটার দেয়ালের ওপরে থাকা বেশ কয়েকজন চিতাবাঘটির দিকে ইট ছুড়ে মারেন।

বাংলাদেশ টাইম টিভি নামের ফেসবুক পেজ থেকে আজ বুধবার ২৫ জুন বেলা ১১টা ১২ মিনিটে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। এর ক্যাপশনে লেখা, ‘লক্ষ্মীপুরে এক ইটের ভাটায় মানুষ ও চিতা বাঘের লড়াই। একজন মানুষে বাঘের সাথে লড়াই করতে করতে জীবন যায় যায় অবস্থা। সবাই দেখি তামাশা করছে। আর উপর থেকে ইট মারছে। ভিডিওটা দেখার পর ভাষা হারিয়ে ফেলছি।’ (বানান অপরিবর্তিত)

তবে ‘NA Z EM’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ দিবাগত রাত ১২টা ১৬ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। এর ক্যাপশনে লেখা, ‘না দেখলে মিস। ইট ভাটায় মানুষ ও চিতা বাগের লড়াই!! হাইরে মানুষ—উপরে সবগুলা তামাশা দেখতেছে!!?’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৯৪ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ১৩১টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৩৭টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৫৩ বার।

Juber Ahmed, Muntaha Hosan ও MD Gias Uddin নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি ছড়িয়েছে।

এসব পোস্টে অনেকে ঘটনাটি বাংলাদেশের মনে করে কমেন্ট করেছে। Arafat Husain নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘কেউ বাঘের সাথে বাঘের মুখে লড়াই করতেছে। আর পুরো একটা গ্রাম তামাশা দেখতেছে। কি যুগে বসবাস করতেছি আমরা। সবাই শুধু ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত।’ (বানান অপরিবর্তিত) Juni Khisa লিখেছে, ‘হায়রে মানুষ কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে গেল না।’ (বানান অপরিবর্তিত)

ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ভারতের বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক ওয়ার্ল্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিওর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি গত ২৪ জুন প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর যুবক, চিতাবাঘের সঙ্গে লড়াই, আশপাশের পরিবেশের মিল রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের উত্তর প্রদেশের লখিমপুরের খেরির জুগনুপুর এলাকায় ইটভাটার শ্রমিককে একটি চিতাবাঘ আক্রমণ করে। পরে ইটভাটার শ্রমিক ও চিতাবাঘের মধ্যে লড়াই হলে তা স্থানীয় লোকজন ক্যামেরাবন্দী করে।

একই সার্চে ভারতের জাতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের ওয়েবসাইটে ২৫ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের উত্তর প্রদেশের লখিমপুরের উত্তর খেরি বন বিভাগের আওতাধীন ধৌরাহরা রেঞ্জের বাবুরি গ্রামের কাছাকাছি একটি ইটভাটায় মিহি লাল (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে একটি চিতাবাঘ আক্রমণ করে। পরে স্থানীয় গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে এসে ইটের টুকরা দিয়ে চিতাবাঘটি তাড়ানোর চেষ্টা করেন এবং বন কর্মকর্তাদের খবর দেন। এ ঘটনায় চিতাবাঘের আক্রমণে একজন বনরক্ষী, একজন পুলিশ সদস্য এবং একজন স্থানীয় আহত হয়। পরে একটি উদ্ধারকারী দল এসে চিতাবাঘটি আটক করে। একই দিনে পাশের এলাকার আরেকটি ঘটনায় আরও একটি চিতাবাঘ আটক করে স্থানীয় বন বিভাগ।

দুধওয়া বাফার জোনের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর সৌরিশ সহায় জানান, চিতাবাঘ দুটি পশুচিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চিতাবাঘ দুটির স্বাস্থ্যের অবস্থা শারীরিকভাবে পরীক্ষা করবেন।

লক্ষ্মীপুরে ইটভাটায় এক যুবক ও চিতাবাঘের লড়াইয়ের দৃশ্য—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে।

সুতরাং, লক্ষ্মীপুরে ইটভাটায় এক যুবক ও চিতাবাঘের লড়াইয়ের দৃশ্য দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গতকাল মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভারতের উত্তর প্রদেশের লখিমপুরের উত্তর খেরি বন বিভাগের আওতাধীন ধৌরাহরা রেঞ্জের বাবুরি গ্রামের কাছাকাছি একটি ইটভাটায় মিহি লাল (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে একটি চিতাবাঘ আক্রমণ করে। সেই ঘটনারই দৃশ্য এটি।