Ajker Patrika

সমুদ্রসৈকতে বিরল গোলাপি ডলফিন! ভাইরাল ছবিগুলো বাস্তব নয় 

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৪, ২২: ৩০
সমুদ্রসৈকতে বিরল গোলাপি ডলফিন! ভাইরাল ছবিগুলো বাস্তব নয় 

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের হ্যাটেরাস সমুদ্রসৈকতে বিরল গোলাপি ডলফিন দেখা গিয়েছে দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিগুলো পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ‘১৯ জুন সকালে সুন্দর বিরল গোলাপি ডলফিনটি সমুদ্রসৈকতে আটকা পড়ে। এমন ডলফিন এক হাজারে একটি নেই।’ ‘মাছের হাট–Macher Hat’ নামের ১ লাখ ৪০ হাজার ফলোয়ারের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ২০ জুন ছবিগুলো এই দাবিতে পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ রোববার (২৪ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শতাধিক শেয়ার হয়েছে, রিঅ্যাকশন পড়েছে প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি। পোস্টের কমেন্টবক্সে নেটিজেনরা এমন ‘বিরল গোলাপি’ ডলফিন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। 

ভাইরাল ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

ছবিগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রে ভুয়া তথ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘ভেরিফাই দিস’র ওয়েবসাইটে গত বৃহস্পতিবারে (২০ জুন) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে ভাইরাল ছবিগুলোর দুটি পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটি নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের মেরিন ফিশারিজ বিভাগের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে জানায়, অঙ্গরাজ্যটির সমুদ্রসৈকতে গোলাপি ডলফিন দেখা যাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) বরাত দিয়েও ভেরিফাই জানায়, গোলাপি ডলফিনের ভাইরাল ছবিগুলো বাস্তব নয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার সমুদ্রসৈকতে বিরল গোলাপি ডলফিন দেখা যাওয়ার দাবিটি ভুয়া। ছবি: ভেরিফাই দিস ‘এনওএএ’র এই তথ্যের ভিত্তিতে ভাইরাল ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি ছবি শনাক্তকারী একাধিক ওয়েবসাইট দিয়ে যাচাই করে দেখে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। এআই ছবি শনাক্তকারী একাধিক ওয়েবসাইটের বিশ্লেষণে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ছবিগুলো এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ থেকে শতভাগ। 

পরে আরও খুঁজে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপসে গত বৃহস্পতিবারে (২০ জুন) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বুধবার (১৯ জুন) থেকে ফেসবুক, টিকটক, এক্স, ইনস্টাগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনায় গোলাপি ডলফিন পাওয়ার দাবিতে বেশ কিছু ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিগুলো বাস্তব নয়। 

‘অ্যালেক্স লেক্স’ নামে নর্থ ক্যারোলাইনাভিত্তিক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছবিগুলো এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করেছে। অ্যাকাউন্টটিতে একইভাবে তৈরি আরও একাধিক ছবি রয়েছে। এর একটিতে এক ব্যক্তিকে গোলাপি ডলফিন বারবিকিউ করতে দেখা যাচ্ছে। আবার আরেকটি ছবিতে গোলাপি ডলফিনের গলায় লেখা রয়েছে ‘আলেক্স লেক্স নেভার লাই’ বা অ্যালেক্স লেক্স কখনো মিথ্যা বলে না। অন্য একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘গোলাপি ডলফিন সম্পর্কে পোস্ট দিয়ে আপনার ফেসবুক ফিড ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’ 

বিরল গোলাপি ডলফিনের ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি। ছবি: হাইভ বাংলাদেশের বাইরে ছবিটি ‘আউটার ব্যাঙ্কস ভাইবস’ নামের একটি পেজ থেকে সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয়েছে। পেজের পোস্টটিতে আজ রোববার (২৪ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি রিঅ্যাকশন পড়েছে, শেয়ার হয়েছে ৮১ হাজারের বেশি এবং কমেন্ট পড়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার। 

স্নোপস জানায়, ‘অ্যালেক্স লেক্স’ অ্যাকাউন্টটির সঙ্গে ‘আউটার ব্যাঙ্কস ভাইবস’ পেজটির সম্পর্ক থাকতে পারে ৷ কারণ, ‘অ্যালেক্স লেক্স’ অ্যাকাউন্টটি থেকে ‘আউটার ব্যাঙ্কস ভাইবস’ পেজের কনটেন্ট শেয়ার করতে দেখা গেছে। পেজটির ইউআরএল লিংকেও ‘অ্যালেক্স লেক্স’ এর নাম দেখা যায়। এ ছাড়া পেজটি ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর ‘অ্যালেক্স লেক্স’ নামেই প্রথম খোলা হয়েছিল। 

প্রসঙ্গত, গত মে মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ছবি দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি বেশ কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছিল। যা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। ওই ছবিগুলোও সর্বপ্রথম পাওয়া যায় এই পেজটিতে। অর্থাৎ পেজটি এআই প্রযুক্তি দিয়ে কনটেন্ট তৈরি করে শেয়ার করে থাকে। 

স্নোপসও দাবিটির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের মেরিন ফিশারিজ বিভাগে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নর্থ ক্যারোলাইনায় গোলাপি ডলফিন দেখা যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। 

গোলাপি ডলফিনের ভাইরাল ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি। ছবি: গোলাপি ডলফিনের ভাইরাল ছবিগুলো নির্মাতার ফেসবুক পেজ থেকে সার্বিক বিশ্লেষণে এটি স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার সমুদ্রসৈকতে বিরল গোলাপি ডলফিন দেখা যাওয়ার দাবিতে ভাইরাল ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি। 

গোলাপি ডলফিনের কী অস্তিত্ব আছে? 

স্নোপস জানাচ্ছে, গোলাপি ডলফিনের অস্তিত্ব আছে, যদিও এরা অত্যন্ত বিরল। দুই প্রজাতির গোলাপি ডলফিন রয়েছে। এর একটি আমাজন নদীর ডলফিন (এটি পিংক রিভার ডলফিন নামেও পরিচিত) এবং দ্বিতীয়টি অ্যালবিনো বোটলনোজ ডলফিন। 

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের তথ্যানুযায়ী, আমাজন নদীর ডলফিনগুলো শুধু মিঠা পানিতে বাস করে এবং প্রাথমিকভাবে বলিভিয়া ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়ানা, পেরু এবং ভেনেজুয়েলার আমাজন এবং ওরিনোকো নদীর অববাহিকায় পাওয়া যায়। এই ডলফিনগুলো গোলাপি রং নিয়ে জন্মায় না, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এদের রঙের বিকাশ ঘটে। এই ডলফিনরা সাগরে বাস করে না। 

অপরদিকে বোটলনোজ ডলফিন জিনগত কারণে গোলাপি হয়ে থাকে। ২০০৭ সালে এমন একটি ডলফিনের দেখা মেলে যুক্তরাষ্ট্রের লুজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত