Ajker Patrika

অমাবস্যা–পূর্ণিমায় বাড়ে বাতের ব্যথা—বিজ্ঞান কী বলছে

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩: ৫২
অমাবস্যা–পূর্ণিমায় বাড়ে বাতের ব্যথা—বিজ্ঞান কী বলছে

অমাবস্যা–পূর্ণিমা নিয়ে নানা সংস্কার প্রচলিত আছে। এমনই একটি সংস্কার অমাবস্যায়–পূর্ণিমায় বাড়ে বাতের ব্যথা। এমন সংস্কারের কী বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে, নাকি এটি কেবলই মানুষের অন্ধ বিশ্বাস? 

আর কেনই বা হয় বাতের ব্যথা? বাতরোগ বর্তমান বিশ্বে খুবই সাধারণ, বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ক্ষেত্রে। তবে শিশু থেকে যেকোনো বয়সের মানুষই বাতে আক্রান্ত হতে পারে। এটি পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। 

বাত অস্থিসন্ধিতে ব্যথা এবং প্রদাহের মতো সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী। অস্থসন্ধি বলতে বোঝায়, যেখানে দুই বা তার বেশি হাড় মিলিত হয়। ১০০ টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের বাত আছে। এটি সাধারণত চলমান বা দীর্ঘস্থায়ী একটি শারীরিক সমস্যা।

বাতের সবচেয়ে সাধারণ দুটি ধরন হলো—

অস্টিওআরথ্রাইটিস: এটি বাতের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ এতে আক্রান্ত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে তরুণেরাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। এটি সাধারণত হাত, হাঁটু, নিতম্ব এবং মেরুদণ্ডের অস্থসন্ধিতে দেখা দেয়। যদিও অস্টিওআরথ্রাইটিস যেকোনো অস্থিসন্ধিরই ক্ষতি করতে পারে। 

রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস: এই ধরনের বাতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অস্টিওআরথ্রাইটিসের তুলনায় কম। এটি সাধারণত দেখা দেয় ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে। নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হয়।

এটি শরীরের ‘অটো ইমিউন অবস্থা’, অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অতি সংবেদনশীল হয়ে পড়লে অস্থিসন্ধিগুলোতে ব্যথা এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করে। সময়ের সঙ্গে এটি অস্থিসন্ধির আরও ক্ষতি করতে পারে এবং শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গকেও প্রভাবিত করতে পারে। 

এই দুই প্রকারের বাইরে বাতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ধরনগুলো হলো: 

গেঁটে বাত: গেঁটে বাত বা গাউট (ইংরেজি: Gout) হচ্ছে একটি প্রদাহজনিত রোগ। এতে সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি ও এর আশপাশের টিস্যুতে মনোসোডিয়াম ইউরেট মনোহাইড্রেট ক্রিস্টাল জমা হয়। সাধারণত মাত্র ১–২ শতাংশ মানুষ এই ধরনের বাতে আক্রান্ত হয়। তবে নারীদের তুলনায় পুরুষেরা ৫ গুণ বেশি আক্রান্ত হয়। 

অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস: এই ধরনের বাত পিঠের নিচের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিগুলোতে প্রভাব ফেলে। 

সোরিয়াটিক আরথ্রাইটিস: এই ধরনের বাত সোরিয়াসিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের হয়। 

জুভেনাইল আরথ্রাইটিস: ১৬ বছরের কম বয়সীদের এবং কিশোরদের মধ্যে এই ধরনের বাত দেখা দেয়। 

আবহাওয়ার সঙ্গে বাতের ব্যথার সম্পর্কের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই দাবি বিশেষজ্ঞেরবাত কেন হয়? 
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স মেডিসিন জানায়, বাত কেন হয় তা নির্ভর করে বাতের ধরনের ওপর। অস্টিওআরথ্রাইটিস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির আলাদা হয়ে যাওয়া বা এর ওপর অতিরিক্ত চাপের কারণে হয়। রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিসসহ আরও বেশ কিছু বাতের ক্ষেত্রে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজস্ব টিস্যুতে আক্রমণের কারণে হয়। অস্থিসন্ধিতে ক্রিস্টাল জমা হওয়ার কারণে গাউট বা গেঁটে বাত হয়।

বাতের কিছু ধরন আবার জিনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যেসব মানুষের জেনেটিক মার্কার (একটি নির্দিষ্ট ডিএনএ ক্রম) ‘HLA–B 27 ’, তাদের অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার বাতের কিছু ধরনের কারণ জানা যায় না। 

বাতের সঙ্গে আবহাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি? 
এই প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রকাশনা হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের জ্যেষ্ঠ ফ্যাকাল্টি এডিটর রবার্ট এইচ. শমারলিং বলেন, মেডিকেল মিথ বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাগুলোর সত্যাসত্য যাচাই করা কঠিন। যেমন, দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে প্রচলিত যে, আবহাওয়া বাতের ব্যথাকে প্রভাবিত করে। আমার অনেক রোগী বাতের ব্যথা এবং আবহাওয়ার মধ্যে স্পষ্ট সংযোগ লক্ষ্য করেন। 

কেউ কেউ এই সংযোগ সম্পর্কে এতটাই বিশ্বাসী যে, তারা মনে করে, আবহাওয়াবিদদের চেয়ে তারা আবহাওয়ার ভালো ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে! হতে পারে যে তাদের এই ধারণা সত্য। কিন্তু বিজ্ঞান এটিকে সমর্থন করে না। খুব সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বর্ষাকাল এবং পিঠ বা জয়েন্টে ব্যথার লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি। এই গবেষণা পর্যাপ্ত পরিমাণ ডেটার ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছিল। 

রবার্ট এইচ. শমারলিং বলেন, তবে আমার রোগীরা যখন বলেন, তাঁরা অস্থিসন্ধির ব্যথা লক্ষ্য করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারেন, আমি তাঁদের বিশ্বাস করি। কারণ, অনেক মানুষ এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পান এবং এটিকে অস্বীকার করা যায় না। যদিও এটি গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের বিপরীত। কিন্তু আমি যেহেতু বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করি, তাই যতক্ষণ আমি প্রমাণ না পাচ্ছি, আমার কাছে আবহাওয়ার সঙ্গে বাতের ব্যথার সম্পর্ক সন্দেহের তালিকাতেই থাকবে। 

বাত নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের আরথ্রাইটিস ফাউন্ডেশন জানায়, অস্থিসন্ধির ব্যথা এবং আবহাওয়ার মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়, যদিও এগুলো বিদ্যমান কিছু ফলাফলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেমন, ২০১৯ সালের একটি ব্রিটিশ গবেষণায় অস্থিসন্ধির ব্যথা এবং আবহাওয়ার তিনটি উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া যায়। যথা, বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা, বায়ুচাপ এবং বায়ুর গতি। তবে তাপমাত্রার সঙ্গে ব্যথার কোনো তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। আবার ২০১৫ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে চালানো কিছু গবেষণায় বাতের ব্যথার সঙ্গে তাপমাত্রার সম্পর্ক পাওয়া যায়। 
 
সর্বোপরি, আবহাওয়া যদি প্রকৃতপক্ষে বাতের ব্যথাকে প্রভাবিত করেও তবে গবেষণাগুলোর ফলাফল বলছে, বাতের ব্যথার সঙ্গে আবহাওয়ার সংযোগ পরিষ্কার নয় এবং এটি সরাসরি নাও হতে পারে। 

অমাবস্যা–পূর্ণিমার সঙ্গে কি বাতের ব্যথার সম্পর্ক আছে? 
বিশ্ব আরথ্রাইটিস দিবস উপলক্ষে ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর ভারতের হায়দরাবাদের যশোদা হসপিটালসের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও অর্থোপেডিক সার্জন ডা. শশী কন্থ জি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসে একটি নিবন্ধ লেখেন। এই নিবন্ধে তিনি বাত নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ভুল ধারণা খণ্ডন করেন। পূর্ণিমায় বাতের ব্যথা বাড়ে এ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, এটা সম্পূর্ণ ভুল এবং বহুল প্রচলিত মিথ। দুটির মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। এটি কিছুটা কাকতালীয়, কিছুটা মানসিক। 

বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নিরাময়ে কাজ করা কলকাতাকেন্দ্রিক সমব্যথী পেইন ক্লিনিকের ওয়েবসাইটেও এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে বলা হয়েছে, এটি একটি সাধারণ ভুল ধারণা। দীর্ঘস্থায়ী বাতের ব্যথার মতো কিছু ব্যথা সময়ে সময়ে বাড়ে বা কমে। কিন্তু এর সঙ্গে চন্দ্রচক্র বা পূর্ণিমার কোনো সম্পর্ক এখনো পাওয়া যায়নি। 

একইভাবে অমাবস্যার সঙ্গেও বাতের ব্যথার কোনো সম্পর্ক নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যায় না। 

যেহেতু, বাতের ব্যথার সঙ্গে অমাবস্যা বা পূর্ণিমার সম্পর্ক মেডিকেল মিথ বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাগুলোর একটি এবং সাধারণ মানুষ দুইয়ের মধ্যে যোগসূত্রও পান, তাই রবার্ট এইচ. শমারলিংয়ের ভাষায় বলতে হয়, এ বিষয়ে যেহেতু কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি, তাই এটি এখন পর্যন্ত প্রমাণিত না। 

(ডিসক্লেইমার: এই প্রতিবেদন আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের সাধারণ ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের আওতাভুক্ত নয়। এটি অমাবস্যা বা পূর্ণিমার সঙ্গে বাতের ব্যথার সম্পর্ক নিয়ে ইন্টারনেটে নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। এটি স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক কোনো নিবন্ধ নয়। যেহেতু বিষয়টি চিকিৎসা সম্পর্কিত, তাই ভবিষ্যতে এটি পরিবর্তন হলেও হতে পারে।)

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত