Ajker Patrika

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড ও কিছু প্রশ্ন

সম্পাদকীয়
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড ও কিছু প্রশ্ন

বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের হৃদয়বিদারক কাহিনি ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন। ছয় ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর কাজ চলেছে। অবশেষে যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তখন সেদিকে তাকিয়ে সবাই বুঝতে পেরেছে, সাত মার্কেটের প্রায় ছয় হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদের বেচাকেনার স্বপ্ন দেখেছিলেন মার্কেটগুলোর যে ব্যবসায়ীরা, তাঁদের স্বপ্নের এ রকম পরিসমাপ্তি ঘটবে, সেটা কল্পনাতেও আনতে পারেননি। মাত্র ছয় ঘণ্টায় তাঁরা হারালেন তাঁদের পুঁজি, তাঁদের স্বপ্ন, তাঁদের ভবিষ্যৎ।

ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, এটা সাধারণ অগ্নিকাণ্ড নয়। ষড়যন্ত্র করে এই আগুন লাগানো হয়েছে। বঙ্গবাজার থেকে এই ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার জন্য কেউ জেনে-বুঝে এই সর্বনাশ করেছে বলে মনে করছেন অনেক ব্যবসায়ী। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগ আমলে নেয়নি, কিন্তু সন্দেহটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সুরক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর এই আশ্বাস কার্যে পরিণত হলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পাবেন।

আরও কয়েকটি অপ্রীতিকর বিষয় নিয়ে কথা বলা দরকার। এই ঘটনাগুলো কি আমাদের জাতীয় চরিত্রের প্রকাশ কি না, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে। অগ্নিকাণ্ডের পর উৎসুক জনতার কারণে উদ্ধার এবং আগুন নেভানোর কাজে বাধা পড়েছে। এই অতি উৎসাহী মানুষেরা সেখানে আসলে গিয়েছিলেন কেন? মানুষের সর্বনাশ দেখতে? তাঁরা কি এটাও বুঝতে পারেন না যে রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়ানোয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঠিকভাবে জায়গামতো পৌঁছাতে পারছিল না? এই জনতাকে রুখবে কে? স্বাধীন দেশের স্বাধীন জনগণ যখন কোনো ভালো কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন বুঝতেই হবে, আমাদের মৌলিক শিক্ষাতেই (পাঠ্যপুস্তক নয়) গন্ডগোল আছে।

যখন আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করছে ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন, তখন একশ্রেণির মানুষ দোকানের মালামাল লুট করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নৈতিক শিক্ষার প্রশ্নে কি এভাবেই আমরা হেরে যেতে থাকব? মানুষের দুর্দশায় যখন মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোই নিয়ম, তখন যেকোনো পরিস্থিতিতে কীভাবে ফায়দা লোটা যায়, সেটাই যদি মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে, তাহলে বোঝা কঠিন হয় না যে সত্যিই আমাদের নৈতিক জ্ঞান কোনো কাজে আসছে না। কিংবা নিয়মনীতি ইত্যাদি যে মেনে চলার ব্যাপার, সেটা শুধু আদেশ-নিষেধ, কথোপকথনেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে, ব্যক্তিজীবনে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।

এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য যে প্রশিক্ষণ দরকার, যে লোকবল, পানির আধার ইত্যাদি দরকার, তার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। আমাদের বাড়িঘর, মার্কেট ইত্যাদি তৈরির ক্ষেত্রে তা অগ্নিকাণ্ড থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে কি না, সেটা যাচাই করার নিয়ম থাকলেও তা ঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবে। উৎসুক জনগণের অকারণ উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। এ রকম ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষের ‘পর্যটক’ হয়ে যাওয়া ঠেকানোর জন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জম্মু-কাশ্মীরে ধ্বংস করা হলো ৪৪ হাজার কেজি রসগোল্লা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত