Ajker Patrika

মিয়ানমারে জান্তা সরকার কি হারতে শুরু করেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ১০: ১২
মিয়ানমারে জান্তা সরকার কি হারতে শুরু করেছে

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মিয়ানমারে জ্বালাও-পোড়াও বাড়িয়েছে জান্তা সরকার। গত রোববার দেশটির উত্তরাঞ্চলের সাগাইং এলাকার ১০টি গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে সরকারি বাহিনী। এতে প্রায় তিন হাজার বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দরিদ্র দেশটির গ্রামগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে ১০ বছর লেগে যেতে পারে বলে সে দেশের অনলাইন গণমাধ্যম ইরাবতীকে জানিয়েছেন স্থানীয় এক বৌদ্ধ ভিক্ষু।

গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে এখন দ্বিতীয় বর্ষাকাল চলছে। জান্তা সরকারের বিদ্রোহীরা সংগঠিত হওয়ার আগেই প্রথম বর্ষা পার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চলতি বর্ষায় জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার (নাগ) ও তাদের সামরিক শাখা গণপ্রতিরক্ষা বাহিনী (পিডিএফ) অনেক বেশি সংগঠিত। বিভিন্ন উৎস থেকে তাদের অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ বেড়েছে।

এশিয়া টাইমস জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মূলত গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্রভিত্তিক। মিয়ানমারের সেই সক্ষমতা নেই। মাঝেমধ্যে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালালেও বন্দুক দিয়েই বিরোধীদের দমনের চেষ্টা করছে জান্তা সরকার। এ অবস্থায় পাহাড়, খানাখন্দময় দেশটিতে চলতি বর্ষায় তাদের হামলা আরও বেশি সমস্যার মুখে পড়ছে। অন্যদিকে জনসম্পৃক্ততা শক্তিশালী হওয়ায় জান্তার বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা বাড়ছে।

এ যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বামারদের সঙ্গে কারেন, কাচিন, চিন, কায়াহ ইত্যাদি ছোট নৃগোষ্ঠীর সুসম্পর্ক। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়ে বামাররা মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। রাজনীতি, সরকারি চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদেরই আধিপত্য। তাই ছোট নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা এত দিন বামারদের শক্র হিসেবে দেখত। কিন্তু এবার তা অনেকটা বদলে গেছে।

অভ্যুত্থানের পরপর প্রধানত শহরকেন্দ্রিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত হতে দেখা গেছে। বামাররাই মূলত এসবের নেতৃত্ব দেয়। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় এ দৃশ্য বদলে যায়। শহুরে মধ্যবিত্ত বামার তরুণেরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সংগ্রামরত বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ তৈরি হয়।

এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের চিন এবং উত্তরাঞ্চলের কাচিন অন্যতম। এরা পিডিএফের তরুণদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দু-তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে এসব তরুণ গ্রাম থেকে শহরে এসে বিভিন্ন সরকারি বাহিনী ও স্থাপনায় চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। এসব গেরিলা হামলায় উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে পড়ছে জান্তা প্রশাসন।

মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশের শহরগুলো ছাড়া বাকি অংশ আগে থেকেই খানিকটা স্থানীয় বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সামরিক অভ্যুত্থানের পর এটা বহুগুণ বেড়ে গেছে। জান্তা সাধারণ মানুষের ওপর যত চড়াও হচ্ছে, ততই তাদের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। ধ্বংসলীলা চালালেও সেখানে তারা প্রশাসন চালাতে পারছে না। প্রশাসন নাগ বা স্থানীয় বিদ্রোহীদের হাতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত