সেলিম জাহান
পেশাগত জীবনের বেশির ভাগই (সিকি শতাব্দীর ওপরে) আমি কাজ করেছি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে। এই সিকি শতাব্দীতে বৈশ্বিক উন্নয়নের কতগুলো সন্ধিক্ষণ সারা পৃথিবীর জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই যেমন ২০০০ সালের সহস্রাব্দ ঘোষণাপত্র (মিলেনিয়াম ডিক্লারেশন) এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস); ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, যা কিনা ১৯৩০-এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার চেয়ে গভীরতর ছিল; ২০১৫ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস); ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী কোভিড অতিমারি। বিশ্ব উন্নয়নের এসব সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত উপস্থিতি, অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব তাঁকে শুধু একটি দুর্লভ মাত্রিকতাই দান করেনি, বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ঋদ্ধ করেছে।
এত কথা বললাম দুটো কারণে—এক. বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তাঁকে অনেক সময়ই শুধু দেশজ পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে অভ্যস্ত এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁর মূল্যায়ন করে, সেটা নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয়, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। দুই. প্রধানমন্ত্রীর বৈশ্বিক নেতৃত্ব তাঁর দেশজ নেতৃত্বের মতোই অতুলনীয় এবং তাঁর মূল্যায়ন না হলে তাঁর অতুলনীয় নেতৃত্বের সার্বিক ব্যাপ্তি বোঝা যাবে না। আমার পরম সৌভাগ্য যে জাতিসংঘের মতো সংস্থায় কাজ করার সূত্রে আন্তর্জাতিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা দেখা ও বোঝার সুযোগ হয়েছে।
অনেকেরই হয়তো মনে নেই যে ২০০০ সালে আরও ১৮৯ রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পক্ষে সহস্রাব্দ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক দলিলে একজন স্বাক্ষরদানকারী হিসেবে তিনি যে শুধু ইতিহাসে নিজের জন্য একটি স্থান করে নিয়েছিলেন তা-ই নয়; এই কর্মের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক অঙ্গীকারের অংশ করে নিয়েছিলেন।সেই অঙ্গীকারের সূত্র ধরেই তিনি ব্রতী হয়েছিলেন ৮টি সহস্রাব্দ লক্ষ্য বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অর্জন করতে।
তাঁরই নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার ১৯৯০ সালের চূড়ান্ত দারিদ্র্যের আপাতন ৫৮ শতাংশ থেকে ২০১৯ সাল নাগাদ ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে। এই সময়সীমায় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৫৮ থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার ৩৫ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিশুমৃত্যুর হার কমেছে হাজারে ১০০ থেকে হাজারে ২১। ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ৩৩০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে প্রসারিত হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে—১৯৯০ সালের ৩০০ ডলার থেকে ২০১৯ সালে ২ হাজার ৬৪ ডলারে।
প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য পরিচালনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নের অর্জন তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছাড়িয়ে গেছে। যেমন বাংলাদেশের প্রত্যাশিত গড় আয়ু যেখানে ৭৩, ভারতে সেটা ৬৯ এবং পাকিস্তানে সেটা ৬৭ বছর। অথবা বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুমৃত্যুর হার যেখানে হাজারে ৩১, ভারতে সেটা ৩৮, পাকিস্তানে ৬৭।
২০০৮ সাল ছিল বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি সন্ধিক্ষণ। পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতির তখন অদৃষ্টপূর্ব টালমাটাল অবস্থা। ১৯৩০ সালের মহামন্দার চেয়েও ভয়ংকর অবস্থা—প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী দেশের পরে দেশে। মানুষ কর্মবিহীন হয়ে পড়ছে, হারাচ্ছে তাদের সঞ্চয়, সহায়-সম্বল। সারা পৃথিবীর যখন এমন অবস্থা, তখন প্রধানমন্ত্রী সেই সংকটের আঁচ বাংলাদেশের গায়ে লাগতে দেননি। শক্ত হাতে ধরেছিলেন অর্থনীতির হাল। না, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি, যেমনটা অনেকেই বলেছিলেন; না, কাজ হারিয়ে মানুষ পথে পথে ঘোরেনি, যেমনটা অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন; না, খাদ্যসংকট দেখা দেয়নি দেশে, যেমনটা অনেকেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। দূরদর্শী রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সেই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠেছিলেন।
২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে এবং তার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে এসব লক্ষ্যমাত্রা সাযুজ্যকৃত। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকেই পরিচালিত। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর অধিকার, শিশুর সুরক্ষা, মানবাধিকার ইত্যাদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও অঙ্গীকার সারা বিশ্বেই স্বীকৃত ও অভিনন্দিত। উন্নয়নশীল বিশ্বের স্বার্থ রক্ষার্থে আমরা তাঁকে সর্বদা সোচ্চার হতে দেখেছি।
২০১৯ সাল। সারা বিশ্বের জন্য আরেকটি সন্ধিক্ষণ। পৃথিবী আগে যা দেখেনি, এমন একটি অতিমারিতে আক্রান্ত হলো সারা পৃথিবী। পৃথিবীজুড়ে শুধু মৃত্যু আর মৃত্যু। এত মৃত্যু দেখেনি কো আগে কেউ! মানুষ ঘরে বন্দী, সবকিছু বন্ধ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলে কিছু নেই।একটি প্রতিষেধকের জন্য সারা পৃথিবী মরিয়া। অবশেষে কোভিডের সেই প্রতিষেধক বেরোল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কী অসাধারণ দূরদর্শিতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার! গবেষণা শুরুর আগেই সে গবেষণা তহবিলে অনুদান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেন, গবেষণা সফল হলে তার তাৎক্ষণিক সুফল বাংলাদেশ পাবে। তাই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সফল হয়ে প্রতিষেধক বেরোলে বাংলাদেশে তা অনতিবিলম্বে পৌঁছাল। বিশ্বের নানান দেশে কোভিড প্রতিষেধকের জন্য যখন হাহাকার উঠছে, তখন বাংলাদেশে এর প্রতিষেধক কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছেএবং যে দক্ষতা ও কার্যকারিতার সঙ্গে এই কর্মসূচি বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হয়েছে, তা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর ফল হচ্ছে, মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংখ্যা অত্যন্ত কম। সেই সঙ্গে কোভিডের কারণে পর্যুদস্ত জনগোষ্ঠীকে সাহায্য ও সুরক্ষার জন্য নানান অর্থ অনুদান, বিভিন্ন সাহায্যক্রম দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই সব অনুদান ক্ষুদ্র ও বৃহৎ উভয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে কোভিডের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। সাহায্য করেছে কৃষকদের, নারী উদ্যোক্তাদের, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে। সেই সঙ্গে তিনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন যাতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সচল থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে জনগণকে। এসব ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড সময়কালে এবং তার পরবর্তী সময়ে কোভিডের নেতিবাচক প্রভাব ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা গেছে। সময়মতো রাষ্ট্রনায়কোচিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করতে পেরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকালে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ-গোষ্ঠী থেকে মধ্যম মানের আয় গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ-গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আজ আমরা তাকাচ্ছি ২০৪১-এর দিকে, যখন আমরা বৈশ্বিক অঙ্গনে উন্নত বিশ্বের অংশ হওয়ার আশা রাখি।
ভবিষ্যতের বিশ্ব দ্রুত বদলাচ্ছে। আমরা যে পৃথিবীতে আজ বাস করছি, সেখানে অসমতা, অস্থিতিশীলতা, অবজায়ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সেখানে সুযোগ যেমন আছে, নাজুকতাও সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি। এ অবস্থায় এমন সব রাষ্ট্রনায়কের প্রয়োজন, যিনি শুধু নিজের দেশের জন্য নন, সারা বিশ্বের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমন একজন রাষ্ট্রনায়ক—বিশ্বের আলোর দিশারি।
লেখক: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
পেশাগত জীবনের বেশির ভাগই (সিকি শতাব্দীর ওপরে) আমি কাজ করেছি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে। এই সিকি শতাব্দীতে বৈশ্বিক উন্নয়নের কতগুলো সন্ধিক্ষণ সারা পৃথিবীর জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই যেমন ২০০০ সালের সহস্রাব্দ ঘোষণাপত্র (মিলেনিয়াম ডিক্লারেশন) এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস); ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, যা কিনা ১৯৩০-এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার চেয়ে গভীরতর ছিল; ২০১৫ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস); ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী কোভিড অতিমারি। বিশ্ব উন্নয়নের এসব সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত উপস্থিতি, অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব তাঁকে শুধু একটি দুর্লভ মাত্রিকতাই দান করেনি, বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ঋদ্ধ করেছে।
এত কথা বললাম দুটো কারণে—এক. বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তাঁকে অনেক সময়ই শুধু দেশজ পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে অভ্যস্ত এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁর মূল্যায়ন করে, সেটা নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয়, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। দুই. প্রধানমন্ত্রীর বৈশ্বিক নেতৃত্ব তাঁর দেশজ নেতৃত্বের মতোই অতুলনীয় এবং তাঁর মূল্যায়ন না হলে তাঁর অতুলনীয় নেতৃত্বের সার্বিক ব্যাপ্তি বোঝা যাবে না। আমার পরম সৌভাগ্য যে জাতিসংঘের মতো সংস্থায় কাজ করার সূত্রে আন্তর্জাতিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা দেখা ও বোঝার সুযোগ হয়েছে।
অনেকেরই হয়তো মনে নেই যে ২০০০ সালে আরও ১৮৯ রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পক্ষে সহস্রাব্দ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক দলিলে একজন স্বাক্ষরদানকারী হিসেবে তিনি যে শুধু ইতিহাসে নিজের জন্য একটি স্থান করে নিয়েছিলেন তা-ই নয়; এই কর্মের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক অঙ্গীকারের অংশ করে নিয়েছিলেন।সেই অঙ্গীকারের সূত্র ধরেই তিনি ব্রতী হয়েছিলেন ৮টি সহস্রাব্দ লক্ষ্য বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অর্জন করতে।
তাঁরই নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার ১৯৯০ সালের চূড়ান্ত দারিদ্র্যের আপাতন ৫৮ শতাংশ থেকে ২০১৯ সাল নাগাদ ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে। এই সময়সীমায় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৫৮ থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার ৩৫ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিশুমৃত্যুর হার কমেছে হাজারে ১০০ থেকে হাজারে ২১। ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ৩৩০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে প্রসারিত হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে—১৯৯০ সালের ৩০০ ডলার থেকে ২০১৯ সালে ২ হাজার ৬৪ ডলারে।
প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য পরিচালনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নের অর্জন তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছাড়িয়ে গেছে। যেমন বাংলাদেশের প্রত্যাশিত গড় আয়ু যেখানে ৭৩, ভারতে সেটা ৬৯ এবং পাকিস্তানে সেটা ৬৭ বছর। অথবা বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুমৃত্যুর হার যেখানে হাজারে ৩১, ভারতে সেটা ৩৮, পাকিস্তানে ৬৭।
২০০৮ সাল ছিল বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি সন্ধিক্ষণ। পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতির তখন অদৃষ্টপূর্ব টালমাটাল অবস্থা। ১৯৩০ সালের মহামন্দার চেয়েও ভয়ংকর অবস্থা—প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী দেশের পরে দেশে। মানুষ কর্মবিহীন হয়ে পড়ছে, হারাচ্ছে তাদের সঞ্চয়, সহায়-সম্বল। সারা পৃথিবীর যখন এমন অবস্থা, তখন প্রধানমন্ত্রী সেই সংকটের আঁচ বাংলাদেশের গায়ে লাগতে দেননি। শক্ত হাতে ধরেছিলেন অর্থনীতির হাল। না, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি, যেমনটা অনেকেই বলেছিলেন; না, কাজ হারিয়ে মানুষ পথে পথে ঘোরেনি, যেমনটা অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন; না, খাদ্যসংকট দেখা দেয়নি দেশে, যেমনটা অনেকেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। দূরদর্শী রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সেই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠেছিলেন।
২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে এবং তার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে এসব লক্ষ্যমাত্রা সাযুজ্যকৃত। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকেই পরিচালিত। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর অধিকার, শিশুর সুরক্ষা, মানবাধিকার ইত্যাদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও অঙ্গীকার সারা বিশ্বেই স্বীকৃত ও অভিনন্দিত। উন্নয়নশীল বিশ্বের স্বার্থ রক্ষার্থে আমরা তাঁকে সর্বদা সোচ্চার হতে দেখেছি।
২০১৯ সাল। সারা বিশ্বের জন্য আরেকটি সন্ধিক্ষণ। পৃথিবী আগে যা দেখেনি, এমন একটি অতিমারিতে আক্রান্ত হলো সারা পৃথিবী। পৃথিবীজুড়ে শুধু মৃত্যু আর মৃত্যু। এত মৃত্যু দেখেনি কো আগে কেউ! মানুষ ঘরে বন্দী, সবকিছু বন্ধ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলে কিছু নেই।একটি প্রতিষেধকের জন্য সারা পৃথিবী মরিয়া। অবশেষে কোভিডের সেই প্রতিষেধক বেরোল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কী অসাধারণ দূরদর্শিতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার! গবেষণা শুরুর আগেই সে গবেষণা তহবিলে অনুদান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেন, গবেষণা সফল হলে তার তাৎক্ষণিক সুফল বাংলাদেশ পাবে। তাই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সফল হয়ে প্রতিষেধক বেরোলে বাংলাদেশে তা অনতিবিলম্বে পৌঁছাল। বিশ্বের নানান দেশে কোভিড প্রতিষেধকের জন্য যখন হাহাকার উঠছে, তখন বাংলাদেশে এর প্রতিষেধক কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছেএবং যে দক্ষতা ও কার্যকারিতার সঙ্গে এই কর্মসূচি বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হয়েছে, তা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর ফল হচ্ছে, মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংখ্যা অত্যন্ত কম। সেই সঙ্গে কোভিডের কারণে পর্যুদস্ত জনগোষ্ঠীকে সাহায্য ও সুরক্ষার জন্য নানান অর্থ অনুদান, বিভিন্ন সাহায্যক্রম দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই সব অনুদান ক্ষুদ্র ও বৃহৎ উভয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে কোভিডের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। সাহায্য করেছে কৃষকদের, নারী উদ্যোক্তাদের, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে। সেই সঙ্গে তিনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন যাতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সচল থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে জনগণকে। এসব ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড সময়কালে এবং তার পরবর্তী সময়ে কোভিডের নেতিবাচক প্রভাব ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা গেছে। সময়মতো রাষ্ট্রনায়কোচিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করতে পেরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকালে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ-গোষ্ঠী থেকে মধ্যম মানের আয় গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ-গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আজ আমরা তাকাচ্ছি ২০৪১-এর দিকে, যখন আমরা বৈশ্বিক অঙ্গনে উন্নত বিশ্বের অংশ হওয়ার আশা রাখি।
ভবিষ্যতের বিশ্ব দ্রুত বদলাচ্ছে। আমরা যে পৃথিবীতে আজ বাস করছি, সেখানে অসমতা, অস্থিতিশীলতা, অবজায়ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সেখানে সুযোগ যেমন আছে, নাজুকতাও সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি। এ অবস্থায় এমন সব রাষ্ট্রনায়কের প্রয়োজন, যিনি শুধু নিজের দেশের জন্য নন, সারা বিশ্বের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমন একজন রাষ্ট্রনায়ক—বিশ্বের আলোর দিশারি।
লেখক: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫