Ajker Patrika

আঙ্গুরের রস

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ১৫: ৩৪
আঙ্গুরের রস

সে সময় কলকাতার চিৎপুরের ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুলের সামনের বিষ্ণু ভবনে ছিল গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল রুম। সেই কোম্পানির ইনচার্জ ছিলেন তখন ভগবতী ভট্টাচার্য।

সেই ভগবতীবাবুই একদিন আঙ্গুর বালাকে নিয়ে গেলেন নজরুলের কাছে। আঙ্গুর তো আগে থেকেই জানতেন, নজরুল মস্ত বড় কবি। কবিতা লেখেন, কাগজ বের করে এরই মধ্যে জেল খেটে এসেছেন। নজরুল সম্পর্কে একজন অগ্নিগম্ভীর মানুষের মুখাবয়বই মনে মনে এঁকেছিলেন আঙ্গুর বালা।

কিন্তু দেখা হতেই সে মুখাবয়ব যেন দমকা হাওয়ায় প্রদীপের মতো নিভে গেল। কোথায় এক গম্ভীর, অহংকারী মানুষকে দেখবেন বলে স্থির করেছিলেন, অথচ এখন দেখা যাচ্ছে বাঁধভাঙা হাসির বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া এক অন্তরঙ্গ মানুষ! মুখের হাসি যদিও বা থামে, চোখের হাসি একেবারেই থামে না।

আঙ্গুর প্রথম দিনেই নজরুলের মধ্যে আবিষ্কার করলেন হিমালয়ের মহত্ত্ব, শিশুর সারল্য।

নজরুল ছিলেন আঙ্গুর বালার ট্রেনার। প্রথম যে গানটি তিনি আঙ্গুর বালার হাতে তুলে দিয়েছিলেন, সেটি ছিল ‘ভুলি কেমনে আজও যে মনে বেদনা সনে রহিল আঁকা...’। তারপর দিয়েছিলেন, ‘এত জল ও কাজল চোখে পাষাণী আনলে বল কে...?’ গানগুলো হৃদয়ে গেঁথে গেল আঙ্গুরের। এরপর কত যে গান করলেন নজরুলের!

রিহার্সেলে একটা সুন্দর আবহ তৈরি করে দিতেন নজরুল। আর আঙ্গুর গান রেকর্ড করার আগে একটা কথার পুনরাবৃত্তি করতেন। হয়তো একটি নতুন গান লিখে, সুর বেঁধে গাইলেন নজরুল। তারপর তাঁর স্বভাবসুলভ হাসিতে ঘর মাতিয়ে দিয়ে বলতেন, ‘আমি আমার মতো করে গাইলাম। এবার নানি, তুমি আঙ্গুরের রস মিশিয়ে বেশ মিষ্টি করে গাও তে দেখি!’

গ্রামোফোনের হিন্দি-উর্দু গানের ট্রেনার ছিলেন ওস্তাদ জমিরউদ্দিন খাঁ। তাঁর মামির মতো ছিল আঙ্গুর বালার চেহারা। তাই তিনি আঙ্গুরকে নানি বলে ডাকতেন। সেই থেকে আঙ্গুর হয়ে উঠেছিলেন সবার ‘নানি’ নজরুলেরও।

সূত্র: ড. আনোয়ারুল করীম, নজরুল তাঁর সমকালে, পৃষ্ঠা ১৮৩-১৮৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত