Ajker Patrika

সেই ভাষণ

আনিসুজ্জামান
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ১২: ৫৭
সেই ভাষণ

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আনিসুজ্জামান ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১ মার্চ বাংলা বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। পরীক্ষার্থীরা আসছে-যাচ্ছে। এ রকম একটা সময় বাইরে শোনা গেল স্লোগানের আওয়াজ। কয়েকজন উত্তেজিত ছাত্রনেতা এসে উপস্থিত হলো পরীক্ষার হলে। তারা বলল, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের নিয়ে সভা করছেন, খানিক পরে কর্মসূচি পাওয়া যাবে। পরীক্ষা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আলী আহসান, বহিরাগত সদস্য অধ্যাপক মযহারুল ইসলাম, অভ্যন্তরীণ সদস্য ড. মোহাম্মদ আবদুল আউয়ালের সঙ্গে পরামর্শ করে পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।’

বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ২ মার্চ কেবল ঢাকায়, ৩ মার্চ সারা প্রদেশে ধর্মঘটের কথা থাকলেও কার্যত ১ মার্চ থেকেই ধর্মঘট শুরু হয়ে গিয়েছিল। মার্চের প্রথম সপ্তাহজুড়েই চট্টগ্রামে ধর্মঘট চলে। ৩ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর গুলিতে নানা জায়গায় আন্দোলনকারীরা নিহত হন। মানুষ বুকে আশা নিয়ে অপেক্ষা করে সাতই মার্চের জন্য। সাতই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে নির্ধারিত হবে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভাগ্য।

রেডিওতে সরাসরি ভাষণ প্রচার হবে, এ রকম কথা ছিল। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সে ভাষণ প্রচার করা হয়নি। বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর প্রতিবাদে কাজ বন্ধ করে দিলেন। আনিসুজ্জামানরা সেই ভাষণ শুনলেন পরদিন সকালে। কী অসাধারণ ভাষণ! শুনলে সর্বশরীর রোমাঞ্চিত হয়।

সাতই মার্চ আনিসুজ্জামান ফোন করেছিলেন ঢাকায়, মুনীর চৌধুরীকে। মুনীর চৌধুরী রেসকোর্সে গিয়েছিলেন। কণ্ঠস্বরে উত্তেজনা। মুনীর চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বর্ণনা দিলেন, জনসমুদ্রের বিবরণ দিলেন, মানুষের প্রতিক্রিয়া জানালেন। তখন গভীর রাত। কিন্তু আনিসুজ্জামান স্পষ্ট অনুভব করছিলেন, বিকেলের অভিজ্ঞতা তখনো সম্মোহিত করে রেখেছে মুনীর চৌধুরীকে। মুনীর চৌধুরীর সঙ্গে সেটাই ছিল আনিসুজ্জামানের শেষ কথা।

সূত্র: আনিসুজ্জামান, আমার একাত্তর, পৃষ্ঠা ২৩-২৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত