Ajker Patrika

সম্মেলন নিয়ে গড়িমসি শীর্ষ নেতাদের

তানিম আহমেদ, ঢাকা
আপডেট : ০২ জুন ২০২২, ১৪: ০৮
সম্মেলন নিয়ে গড়িমসি শীর্ষ নেতাদের

দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন করতে চায় আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করতে বলা হয়েছে ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও তাঁতী লীগকে। কিন্তু এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতারা গড়িমসি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, কেউ কেউ পদ হারানোর আশঙ্কায় ‘সভাপতি শেখ হাসিনার সময়’ পাওয়ার দোহাই দিয়ে সম্মেলন পিছিয়ে দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সর্বশেষ সভায় এসব সম্মেলন করতে তাগাদা দেন। এরপর গত ১০ মে সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এ নির্দেশনার কথা অবহিত করে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি অনুযায়ী তাদের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করতে বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের সমালোচনা করেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। লেখক বলেন, ‘নেত্রী সম্মেলনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেননি। ওবায়দুল কাদের সাহেব হয়তো সম্মেলন নিয়ে “মনগড়া কথা বলেছেন”।’ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যে অবাক হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও। এ বিষয়ে দলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, লেখক ভট্টাচার্য এ কথা বলে চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন।

ওই তিন সংগঠনের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক পদ থাকলেও সংগঠনগুলোয় মূলত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই সর্বেসর্বা। সম্মেলন হলেই পদ ছাড়তে হবে, এমন আশঙ্কায় সম্মেলনে আগ্রহী নন কেউ কেউ।

আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এ বিষয়ে আজকের পত্রিকা’কে বলেন, সংগঠনগুলো নেত্রীর সুবিধাজনক সময়ে সম্মেলন করবে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আটটি সহযোগী সংগঠন ও দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলো হলো মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ। আর ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। এর মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।

ছাত্রলীগের সর্বশেষ দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। সে সময় নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই সম্মেলন শেষ হয়। পরে ওই বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠায় ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাঁদের সরিয়ে দিয়ে আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী সভায় জয় ও লেখককে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোহান খান বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাচ্ছেন যেকোনো প্রকারে সম্মেলনকে দেরি করাতে। সম্মেলন পেছানোর গড়িমসির কারণে যদি কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তাহলে এর দায়ভার তাঁদেরই নিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ৪ মার্চ। সেখানে সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম। এর আগে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০০৩ সালের ১২ জুলাই।

২০১৭ সালের ১৭ মার্চ যুব মহিলা লীগের দ্বিতীয় সম্মেলনে সভাপতি পদে নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৪ সালের ৫ মার্চ সংগঠনটির প্রথম সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যুব মহিলা লীগের শীর্ষ নেতারা সময় নিচ্ছেন বলে দাবি যুব মহিলা লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, ১৮ বছর ধরে তাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন। এবার হয়তো আর থাকবেন না, এমন কথা অনেকেই বলছেন। পদ হারানোর ঝুঁকিতে তাঁরা সম্মেলন আয়োজনে দেরি করতে চান।

সম্মেলন আয়োজনে গড়িমসি করছেন—এমনটা মানতে চান না মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুই নেতা। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুফিয়া খাতুন বলেন, তিনি আগামী নভেম্বর মাসে সম্মেলন করতে চান। বৃষ্টির কারণে জুন ও জুলাই মাসে সম্মেলন চান না যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার। তিনি বলেন, আগস্টের পর যেকোনো দিন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সম্মেলন করতে চান।

আওয়ামী লীগের আরেক সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের সম্মেলন হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। সেখানে ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলী সভাপতি ও খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও সম্মেলনের কোনো উদ্যোগ নেই সংগঠনটির। শওকত আলী বলেন, সম্মেলনের বিষয়ে তাঁদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি আওয়ামী লীগ থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত