Ajker Patrika

লঞ্চের ওপর তরুণীকে প্রকাশ্যে পেটাচ্ছিলেন যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ মে ২০২৫, ১৪: ৪৭
যাত্রীবাহী লঞ্চের কেবিনে ‘পিকনিকে’ আসা অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের প্রকাশ্যে মারধর করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
যাত্রীবাহী লঞ্চের কেবিনে ‘পিকনিকে’ আসা অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের প্রকাশ্যে মারধর করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রাবিরতি দেওয়া একটি যাত্রীবাহী লঞ্চের ডেকে এক নারীকে মারধরের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে টাকাপয়সা ও মোবাইল ফোন লুটের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, গতকাল শুক্রবার রাত ৮টার দিকে লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জ ঘাটে নোঙর করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভাঙচুরের খবর পেয়ে সেখানে যান তাঁরা। পরে ভেতরে ঢুকে বেশ কিছু দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন এবং মারধরের শিকার তরুণীর সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসেন।

ঘটনাস্থলে ছিলেন এমন একজন সাংবাদিক জানান, ঢাকা-লালমোহন রুটের লঞ্চটি প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। লঞ্চটির দ্বিতীয় তলার বেশ কয়েকটি কেবিনে ২০-২৫ জন নারী ও পুরুষ ছিলেন। তাঁরা ঢাকা থেকে এসে পিকনিক করে ওই লঞ্চের কেবিন ভাড়া করে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন বলে জানিয়েছেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সাদা রঙের পোশাক পরিহিত এক তরুণীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে নিয়ে লাঠি সদৃশ বস্তু দিয়ে পেটাচ্ছেন এক যুবক। এ সময় ৫০-৬০ জন বিভিন্ন বয়সী পুরুষ সেই দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনে ধারণ করে উল্লাস করতে দেখা যায়। পরে জানা যায়, মারধরকারী যুবকের নাম নেহাল আহমেদ জিহাদ। তাঁর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ শহরে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নেহাল আহমেদ জিহাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্থানীয় ২০০-৩০০ লোক তাদের আচরণ ও বেশভূষায় ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণ করতে চলে আসে। আমি তাদের নিবৃত্ত করতে ভাই হিসেবে শাসন করেছি। এটা আমার করা উচিত হয়নি। আবার আমি এটা না করলে মানুষ তরুণীদের জামাকাপড় টেনে খুলে ফেলত। আরও বেশি হেনস্তা করত। তা ছাড়া স্থানীয়দের কাছ থেকে অন্তত আটটি মোবাইল ফোন আমি তাদের উদ্ধার করে দিয়েছি। আমি মারধরের ঘটনায় অনুতপ্ত।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, থেমে থাকা লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় উঠে কেবিনে থাকা পিকনিকের যাত্রীদের নির্বিচারে পেটাচ্ছে ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল। এ সময় তারা লঞ্চের কেবিনগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছে এবং দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমভি ক্যাপ্টেন নামের লঞ্চটিতে পিকনিকের উদ্দেশ্যে আসা অন্তত ছয়জন যাত্রী মারধরে আহত হয়েছে। এর মধ্যে দুজন তরুণী। তবে, তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, তারা সবাই ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাসিন্দা।

এ ছাড়া লঞ্চটিতে অন্তত ৩০০ জন সাধারণ যাত্রী ছিলেন। তাদের সঙ্গে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও স্থানীয়দের উত্তেজনা দেখে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

লঞ্চের উপর তরুণীকে প্রকাশ্যে পেটাচ্ছিলেন যুবক, ভিডিও ভাইরাল
লঞ্চের উপর তরুণীকে প্রকাশ্যে পেটাচ্ছিলেন যুবক, ভিডিও ভাইরাল

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম আজকের পত্রিকা'কে জানান, সন্ধ্যার নাশতা কেনার জন্য ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী লঞ্চ থেকে পন্টুনে নামে। সেখানে থাকা স্থানীয়রা মাদকসেবী সন্দেহে তাদের পিছু নিয়ে লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করলে লঞ্চের ম্যানেজার মো. শফিক তাদের প্রবেশে বাধা দেন। এতে উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়ে লঞ্চে ঢুকে ভাঙচুর, লুট ও যাত্রীদের মারপিট করে। পরে খবর পেয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজনা কমে আসে।

প্রকাশ্যে তরুণীদের মারধরের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ঘটনাটি যেহেতু নদীতে ঘটেছে, এ বিষয়ে নৌ পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে ‍শুনেছি।’

মুক্তারপুর নৌ পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে থানা-পুলিশের সঙ্গে আমরাও ছিলাম। মারধরের ঘটনার পর আমরা লঞ্চটিকে অনেক দূর পর্যন্ত পাহারা দিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসি। ভুক্তভোগীরা পরে মারধর ও লুটের ঘটনায় অভিযোগ করবেন বলে আমাদের জানান। আজ (শনিবার) সকাল পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত