Ajker Patrika

‘ভোট আসি যন্ত্রণা হইচে, ঘুমবারও পাওছি না’

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ (রংপুর)
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ৪৭
‘ভোট আসি যন্ত্রণা হইচে, ঘুমবারও পাওছি না’

‘ভোরে মাইকের আওয়াজোত ঘুম ভাঙে। এই ভোটের মাইক রাত ১টা পর্যন্ত বাজে। এক প্রার্থীর মাইকিং যাইতে না যাইতে আরেক প্রার্থী মাইকিংয়ের গাড়ি চলি আইসে। ভোট আসি যন্ত্রণা হইচে। ভোট না বেরাইলে ভালো করি ঘুমবার পাওছি না।’

আচরণবিধি ভেঙে ভোটের প্রচারে অতিষ্ঠ হয়ে এভাবেই নিজের কথা জানালেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের বাসিন্দা একরামুল হক (৬০)।

তারাগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে ২৮ নভেম্বর। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীদের প্রচারণা তুঙ্গে। কিন্তু প্রচারের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ জায়গায় মানা হচ্ছে না নির্বাচনী আচরণবিধি। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ইচ্ছেমতো প্রচার কাজ চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।

আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের দেয়াল, যানবাহনে পোস্টার, লিফলেট লাগানো যাবে না। বেলা ২টার আগে ও রাত ৮টার পর মাইকে প্রচার করা যাবে না। কিন্তু এসবের কোনো কিছুকে তোয়াক্কা করছেন না প্রার্থীরা। তাঁরা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চালাচ্ছেন প্রচারণা। করছেন মোটরসাইকেল শোডাউন। রাত ৮টার আগে প্রচারণা বন্ধ থাকার

কথা থাকলেও রাত ৮টার পর জনসভা শুরু হয়ে রাত ১টা পর্যন্ত চলছে। প্রচারে জীবন্ত প্রাণীর ব্যবহার নিষেধ থাকলেও তা দেখা গেছে কোথাও কোথাও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ির দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। হোটেল-রেস্তোরাঁয় চলছে ভোটারদের খাওয়ানো। মোটরসাইকেল শোডাউনের পর দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থও।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্র জানায়, ১২ নভেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৩০, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে ৭১ ও সদস্যপদে ১৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দেয়ালে দেয়ালে প্রতিযোগিতা করে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। সকালেই জমে উঠেছে হাটবাজারের চায়ের দোকানগুলো। সেখানে ভিড় করছেন বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। চা-বিড়ি খাইয়ে চলছে ভোট প্রার্থনা।

সয়ার ইউনিয়নের হাজীরহাট বাজারের একটি দোকানে বসে ‘ভোটের চা’ পান করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব ইসলাম (৪৫)। তাঁর যন্ত্রণাটি কিছুটা মধুর বললেও বলা যায়। তিনি বলেন, ‘ভোট আলচে চা-বিড়ি খাওয়ার খরচ কমছে। হাটোত আইলে কায় যে কাক ডাকে চা খিলায় তার দিশা নাই। যদি চা না খান, তাইলে মন খারাপ করে। মনে করে ভোট তাঁর মার্কাত দিবার নেই। ওই জন্যে হামরা যায় খিলায় তারে খাওছি।’

একই ইউনিয়নের শ্যামগঞ্জ কাচারি এলাকার অতুল চন্দ্রের ঘরের দেয়ালজুড়ে সাঁটানো হয়েছে প্রার্থীদের পোস্টার। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাই, বাধা দিলেও শোনে না। জোর করি দেয়ালোত পোস্টার নাগায়।’

ইকরচালী ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের মোসলেম মিয়া (৪০) বলেন, ‘ভাই, হামার ইউনিয়নোত ৪টা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ওয়ার্ডত ৭টা মেম্বার প্রার্থী। প্রতিদিন কোনো না কোনো প্রার্থীর জনসভা হওচে। রাইত ১২টা থাকি ১টা পর্যন্ত এই জনসভা চলে। প্রার্থী, কর্মীরা বাড়িত আসি ডাকে যায়। না যায়াও পারি না। ওই জন্যে রাইত ঘুম জাগি যাই। ভোটের পরে যেন কারও শত্রু না হই। তা ছাড়া, কামাইও আছে।’

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি অমান্য করলে তাঁদের জেল-জরিমানা করা হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি মাইক জব্দ ও জরিমানা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

গুমে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে পরবর্তী ঘোষণার আগপর্যন্ত বাংলাদেশি সব ফ্লাইট বাতিল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত