Ajker Patrika

ভালো মন খারাপ মন

বাসব রায়
ভালো মন খারাপ মন

কারণেই হোক আর অকারণেই হোক, ভালো মন খারাপ হতে সময় লাগে না। আমার মতো ছা-পোষা মানুষের প্রায় সব সময় মন খারাপ থাকে। আসলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা মন নিয়েই যত বিপত্তি। দার্শনিক বিচারে মন হলো বুদ্ধি ও বিবেকবোধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি বিষয়, যা আমাদের আবেগ, অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। এগুলো কঠিন ভাবনা এবং এসব জটিল ভাবনা ভাবার অবকাশ বা বুদ্ধিমত্তা কোনোটিই আমার নেই।

আমি বুঝি মনের ভালো আর খারাপ। কিছু কিছু ঘটনায় মন ভালো হয়ে যায় আবার কিছু বিষয়ে মন খারাপ হয়ে যায়। প্রত্যাশিত কিছু পেলেই মন ভালো থাকে, আবার আশানুরূপ অপ্রাপ্তির যন্ত্রণায়ও মন খারাপ হতে পারে। আমার মতো নিম্নমধ্যবিত্তের মন কোনোভাবেই ভালো থাকে না। এটা করতে সেটা যায়, নুন আনতে পান্তা ফুরায়—এমন মানুষের মন যে এখনো আছে, এটিই বড় ব্যাপার! আমাদের শ্রেণির মানুষের মন থাকাটাও শোভনীয় নয়। তাদের মন থেকেই-বা কী আর না থেকেই-বা কী? আসলেও তা-ই। তবু কিছু ক্ষেত্রে বেশ খটকা লাগে। আমরা পোড়া সিদল দিয়ে পান্তা খেয়েছি, প্রায় আধখাওয়া বা না-খাওয়া অবস্থায় স্কুলে গিয়েছি। বায়না বলতে কিছুই ছিল না। পূজায় ধনীদের ছেলেমেয়েদের নতুন জামা-কাপড় দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত! আহা কী অপূর্ব! কই, মন তো খারাপ হতো না; বরং দেখেই যেন বিশ্বজয়ের হাসি চলে আসত মুখে।

আজকাল সেসব ভেবেই মন খারাপ হয়ে যায়। সেই পান্তাভাত, লঙ্কা পোড়া, বেগুন পোড়া আনন্দ মহাসুখের দিনগুলো হারিয়ে গেছে। আর তাই তো খারাপ হয়ে যায় মন।

সময় বদলে যাওয়ায় আমরাও বদলে গেছি। আমি যেমন নিম্নবিত্ত ছিলাম, আজও তা-ই আছি; বরং বেশির ভাগই খারাপ আছি, কিন্তু মনের হদিসটাই পাই না কোথাও। গ্রামের ধূলিধূসর কাদাবালির পৃথিবীটা বড় চমৎকার ছিল। কেউ কাউকে আলাদা করে ভাবত না, একই অবস্থানে সবারই অবস্থান। ধুলোমাখা পায়ে বা কাদামাখা শরীরে রোদে জ্বলে-পুড়ে টইটই করে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ আজ আর কোথাও নেই।

আমার নিম্নবিত্ত মগজে এত কিছু ঢোকে না; তবু মনটার খচখচানি নানাভাবে বিব্রত করে আমাকে। আমি কেন বড় কিছু হতে পারিনি, কেন বিত্তশালী হইনি, এতটা টেনেটুনে কেউ জীবন চালায়! এসব ভাবনায় মনটা সত্যিই আর সুস্থ থাকে না, নিজের মন নিজের থেকেই পালিয়ে বেড়ায়। গুনগুন করে একা একাই গেয়ে উঠি, ‘পাগল মন মন রে, মন কেন এত কথা বলে...!’ সত্যিই তো মন এত কথা বলবে কেন?

তবে সময় এবং মানুষের অতি-আধুনিক ভাবনায় মনের অস্তিত্ব বলতে তেমন কিছু আর অবশিষ্ট নেই। এখন বাছ-বিচারহীনভাবে মনগুলো লাগামছাড়া; যা খুশি তা-ই করো—ভাবটা এমন। এখনকার মানুষের মন আর খারাপ হয় না। আগের মতো ফসলের কম উৎপাদন বা দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে এমন তো এখন নয়। বৈশ্বিক কারণে দ্রব্যমূল্য কিছুটা বেড়েছে, তবে তা মানুষকে নিরন্ন রাখবে—এমনটি নয়। মানুষের সক্ষমতা এখন অনেক বেশি। মানুষের মন আর খুব বেশি খারাপও হয় না। ভালো মন নিয়ে বেশির ভাগ মানুষই চলাফেরা করে, তবে গোপনে বা কখনো প্রকাশ্যে খারাপ কাজও করে, যা অন্যদের যন্ত্রণা দেয়।

মনগুলো ভালো থাকুক, দেদীপ্যমান থাকুক সুস্থ ধারার অনুভবগুলো। এটা চাই সব সময়। খারাপ মনগুলোকেও মেকানিজমের মাধ্যমে ভালো করার দায়িত্ব কেউ না কেউ নিতেই পারেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর সহজ উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত