শরৎ সাবারওয়াল
পাকিস্তানে চলমান অশান্তির মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে বহুমুখী সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইমরান খানকে এমন এক সময় গ্রেপ্তার করা হলো, যখন দেশটিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা বিরাজ করছে—গড় মুদ্রাস্ফীতি ৩০ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে—কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুযোগ বলতে গেলে নেই।
ইমরান খানকে আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) গ্রেপ্তার করেছে, একজন আবাসন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর সরকারের লেনদেনের সময় রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ১৯ কোটি পাউন্ড ক্ষতি করার জন্য ইমরান খান এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির ভূমিকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসলে ইমরান খান তাঁর নিজের তৈরি করা ফাঁদে পড়েছেন। তিনি ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছিলেন, যার মধ্যে নওয়াজ শরিফের সরকারি পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা এবং একটি সন্দেহজনক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের জবাবদিহির মামলা দিয়ে ঘায়েল করেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে সেনাবিরোধিতা ও জাতীয়তাবাদের সস্তা তত্ত্বের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করার পরে, একটি আগাম নির্বাচনের জন্য তাঁর চেষ্টা শাহবাজ শরিফ সরকারের সঙ্গে তাঁকে একটি রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে ফেলেছে, যা নির্লজ্জভাবে সাংবিধানিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে পাঞ্জাব প্রদেশের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনকে বিলম্বিত করেছে। এই তিক্ত লড়াইয়ে রাষ্ট্রের সব প্রধান প্রতিষ্ঠান—প্রেসিডেন্ট, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বারা সমর্থিত সরকার, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সেনাবাহিনী—সবাই এ বিষয়ে পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করেছে।
ইমরান খানের জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে একটি কার্যকর রাজনৈতিক পাল্টা ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য কঠোর অর্থনৈতিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে, সরকার তাঁকে একাধিক আদালতে মামলা দিয়ে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে, বেশির ভাগই দুর্নীতির অভিযোগে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করে অযোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। কোনো মামলায় তাঁকে আটকাতে সরকারের অক্ষমতার কারণে এ কৌশলটি এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। তবে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের প্রয়োজনীয় সমর্থনের অভাবের কারণেও এটি সফল হয়নি। এমনকি ইমরান খানের প্রতি তাঁর পরিচিত বিদ্বেষ সত্ত্বেও।প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান তাঁকে কয়েক মাসের মধ্যে ডিজি (আইএসআই) পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
যা-ই হোক, ইমরান খান সম্প্রতি তাঁর পুরোনো অভিযোগ আবার নতুন করে ওঠানোর সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ইমরানের অভিযোগ, আইএসআইয়ের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের প্রধান মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসির তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সেনাবাহিনী ইমরানের এই অভিযোগ সম্পর্কে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর) ইমরানের অভিযোগকে ‘বানোয়াট ও বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেছে। আইএসপিআর এক বিবৃতিতে চাঞ্চল্যকর অপপ্রচারের মাধ্যমে সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের লক্ষ্যে পরিণত করার ধারাবাহিক কৌশলের কথা উল্লেখ করে, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের মিথ্যা অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। তবে কেউ যদি এই আহ্বানে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়। এই বিবৃতির দুই দিনের মধ্যেই ইমরান খান গ্রেপ্তার হন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইমরান খানকে আদালত চত্বর থেকে তুলে নিয়েছিল পাঞ্জাব রেঞ্জার্সরা, যাদের নিয়ন্ত্রণ আসলে সেনা কর্মকর্তাদের হাতে।
ইমরান খানের গ্রেপ্তার পাকিস্তানজুড়ে পিটিআই-সমর্থকদের সহিংস আন্দোলনকে উসকে দিয়েছে, যার লক্ষ্যই হচ্ছে সেনাবাহিনী। লাহোরের কোর কমান্ডারের বাসভবনসহ সরকারি ও সেনাবাহিনীর সম্পত্তি লুটপাট এবং আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানজুড়ে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় এ ধরনের সহিংসতার ঘটনাগুলো সম্পর্কে খুব একটা জানা যাচ্ছে না। যা-ই হোক, পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েনে সরকারের পদক্ষেপ পরিস্থিতি যে ভয়াবহ হয়েছে, সেই ইঙ্গিত দেয়।
নানা অননুমেয় ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের পরিস্থিতি বিবর্তিত হচ্ছে। যেমন ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তিনি কি বর্তমান সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে কোনো হাঁফ ছাড়ার সুযোগ পাবেন? তিনি কি সরকারি পদে অযোগ্য ঘোষিত হবেন? চলমান অস্থিরতা কোন পথে যাবে? এতে করে কি সেনাবাহিনী দেশের শাসনব্যবস্থায় আরও বেশি হস্তক্ষেপ করবে? অনেক প্রশ্নই উঠে আসছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হয়তো পিটিআইয়ের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে, যাঁদের অনেকেই ইমরানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ইমরান খানের মতো বিপুল জনপ্রিয় নেতার অনুপস্থিতিতে পিটিআই আন্দোলনের গতি ধরে রাখতে পারেনি।
পাকিস্তানের বর্তমান অস্থির পরিবেশে এই অনুমানও কি বাস্তবানুগ? আমরা হয়তো আগামী দিনগুলোতে এই প্রশ্নের উত্তর পাব। তবে এটা নিশ্চিত যে পাকিস্তান সংকটের মধ্যেই থাকবে এবং পাকিস্তানের সমস্যাগুলো মোকাবিলায় সরকারের শক্তিকে আরও কমিয়ে দেবে।
পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে, এ বছরের শেষের দিকে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে পিটিআই সম্ভবত জয়ী হবে। সেনাসমর্থিত জোট সরকার যদি অসাংবিধানিক উপায়ে সেই ফল পাল্টে দিতে যায়, তাহলে তা আরও বড় সংকট সৃষ্টি করবে দেশটির জন্য। আসলে, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সাবেক সেনাপ্রধান কামার বাজওয়ারের বছরের পর বছর ধরে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের কূটকৌশলের ফল।
নানা সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগের সঙ্গে দেশটির পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন চীন। কারণ, তারা পাকিস্তানে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের সাম্প্রতিক ইসলামাবাদ সফরের সময়, চীন এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠবে, স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।
কিন্তু মনে হচ্ছে তাঁর এই উপদেশ বোধ হয় পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ও রাজনীতিকদের কানে ঢোকেনি। তবে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া দায়সারা গোছের। তারা শুধু গণতান্ত্রিক নীতি এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে দায় সেরেছে। কিন্তু পরমাণু অস্ত্রধারী দেশটির বিপর্যয়ের আশঙ্কায় তারা আসলেই উদ্বিগ্ন।
প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের জন্যও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত। তবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের কোনো কিছু বলার সুযোগ খুবই কম। তবে ভারতেরও বিষয়টি গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত।
লেখক: পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার
(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
পাকিস্তানে চলমান অশান্তির মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে বহুমুখী সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইমরান খানকে এমন এক সময় গ্রেপ্তার করা হলো, যখন দেশটিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা বিরাজ করছে—গড় মুদ্রাস্ফীতি ৩০ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে—কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুযোগ বলতে গেলে নেই।
ইমরান খানকে আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) গ্রেপ্তার করেছে, একজন আবাসন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর সরকারের লেনদেনের সময় রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ১৯ কোটি পাউন্ড ক্ষতি করার জন্য ইমরান খান এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির ভূমিকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসলে ইমরান খান তাঁর নিজের তৈরি করা ফাঁদে পড়েছেন। তিনি ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছিলেন, যার মধ্যে নওয়াজ শরিফের সরকারি পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা এবং একটি সন্দেহজনক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের জবাবদিহির মামলা দিয়ে ঘায়েল করেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে সেনাবিরোধিতা ও জাতীয়তাবাদের সস্তা তত্ত্বের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করার পরে, একটি আগাম নির্বাচনের জন্য তাঁর চেষ্টা শাহবাজ শরিফ সরকারের সঙ্গে তাঁকে একটি রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে ফেলেছে, যা নির্লজ্জভাবে সাংবিধানিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে পাঞ্জাব প্রদেশের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনকে বিলম্বিত করেছে। এই তিক্ত লড়াইয়ে রাষ্ট্রের সব প্রধান প্রতিষ্ঠান—প্রেসিডেন্ট, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বারা সমর্থিত সরকার, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সেনাবাহিনী—সবাই এ বিষয়ে পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করেছে।
ইমরান খানের জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে একটি কার্যকর রাজনৈতিক পাল্টা ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য কঠোর অর্থনৈতিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে, সরকার তাঁকে একাধিক আদালতে মামলা দিয়ে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে, বেশির ভাগই দুর্নীতির অভিযোগে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করে অযোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। কোনো মামলায় তাঁকে আটকাতে সরকারের অক্ষমতার কারণে এ কৌশলটি এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। তবে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের প্রয়োজনীয় সমর্থনের অভাবের কারণেও এটি সফল হয়নি। এমনকি ইমরান খানের প্রতি তাঁর পরিচিত বিদ্বেষ সত্ত্বেও।প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান তাঁকে কয়েক মাসের মধ্যে ডিজি (আইএসআই) পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
যা-ই হোক, ইমরান খান সম্প্রতি তাঁর পুরোনো অভিযোগ আবার নতুন করে ওঠানোর সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ইমরানের অভিযোগ, আইএসআইয়ের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের প্রধান মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসির তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সেনাবাহিনী ইমরানের এই অভিযোগ সম্পর্কে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর) ইমরানের অভিযোগকে ‘বানোয়াট ও বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেছে। আইএসপিআর এক বিবৃতিতে চাঞ্চল্যকর অপপ্রচারের মাধ্যমে সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের লক্ষ্যে পরিণত করার ধারাবাহিক কৌশলের কথা উল্লেখ করে, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের মিথ্যা অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। তবে কেউ যদি এই আহ্বানে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়। এই বিবৃতির দুই দিনের মধ্যেই ইমরান খান গ্রেপ্তার হন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইমরান খানকে আদালত চত্বর থেকে তুলে নিয়েছিল পাঞ্জাব রেঞ্জার্সরা, যাদের নিয়ন্ত্রণ আসলে সেনা কর্মকর্তাদের হাতে।
ইমরান খানের গ্রেপ্তার পাকিস্তানজুড়ে পিটিআই-সমর্থকদের সহিংস আন্দোলনকে উসকে দিয়েছে, যার লক্ষ্যই হচ্ছে সেনাবাহিনী। লাহোরের কোর কমান্ডারের বাসভবনসহ সরকারি ও সেনাবাহিনীর সম্পত্তি লুটপাট এবং আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানজুড়ে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় এ ধরনের সহিংসতার ঘটনাগুলো সম্পর্কে খুব একটা জানা যাচ্ছে না। যা-ই হোক, পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েনে সরকারের পদক্ষেপ পরিস্থিতি যে ভয়াবহ হয়েছে, সেই ইঙ্গিত দেয়।
নানা অননুমেয় ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের পরিস্থিতি বিবর্তিত হচ্ছে। যেমন ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তিনি কি বর্তমান সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে কোনো হাঁফ ছাড়ার সুযোগ পাবেন? তিনি কি সরকারি পদে অযোগ্য ঘোষিত হবেন? চলমান অস্থিরতা কোন পথে যাবে? এতে করে কি সেনাবাহিনী দেশের শাসনব্যবস্থায় আরও বেশি হস্তক্ষেপ করবে? অনেক প্রশ্নই উঠে আসছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হয়তো পিটিআইয়ের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে, যাঁদের অনেকেই ইমরানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ইমরান খানের মতো বিপুল জনপ্রিয় নেতার অনুপস্থিতিতে পিটিআই আন্দোলনের গতি ধরে রাখতে পারেনি।
পাকিস্তানের বর্তমান অস্থির পরিবেশে এই অনুমানও কি বাস্তবানুগ? আমরা হয়তো আগামী দিনগুলোতে এই প্রশ্নের উত্তর পাব। তবে এটা নিশ্চিত যে পাকিস্তান সংকটের মধ্যেই থাকবে এবং পাকিস্তানের সমস্যাগুলো মোকাবিলায় সরকারের শক্তিকে আরও কমিয়ে দেবে।
পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে, এ বছরের শেষের দিকে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে পিটিআই সম্ভবত জয়ী হবে। সেনাসমর্থিত জোট সরকার যদি অসাংবিধানিক উপায়ে সেই ফল পাল্টে দিতে যায়, তাহলে তা আরও বড় সংকট সৃষ্টি করবে দেশটির জন্য। আসলে, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সাবেক সেনাপ্রধান কামার বাজওয়ারের বছরের পর বছর ধরে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের কূটকৌশলের ফল।
নানা সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগের সঙ্গে দেশটির পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন চীন। কারণ, তারা পাকিস্তানে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের সাম্প্রতিক ইসলামাবাদ সফরের সময়, চীন এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠবে, স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।
কিন্তু মনে হচ্ছে তাঁর এই উপদেশ বোধ হয় পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ও রাজনীতিকদের কানে ঢোকেনি। তবে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া দায়সারা গোছের। তারা শুধু গণতান্ত্রিক নীতি এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে দায় সেরেছে। কিন্তু পরমাণু অস্ত্রধারী দেশটির বিপর্যয়ের আশঙ্কায় তারা আসলেই উদ্বিগ্ন।
প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের জন্যও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত। তবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের কোনো কিছু বলার সুযোগ খুবই কম। তবে ভারতেরও বিষয়টি গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত।
লেখক: পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার
(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৬ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৬ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৬ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫