Ajker Patrika

সহিংসতা পরিহার করে হাঁটতে হবে নির্বাচনের পথেই

আহমেদ শমসের, সাংবাদিক 
সহিংসতা পরিহার করে হাঁটতে হবে নির্বাচনের পথেই

দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে তা শিগগিরই কমবে বলে মনে হয় না। বিএনপি যেমন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন থেকে পিছু হটার মনোভাব দেখাচ্ছে না, তেমনি সরকার ও আওয়ামী লীগও বিএনপির সঙ্গে কোনো সমঝোতা দেখাতে চাইছে না। বিএনপির প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাব অত্যন্ত কঠোর।

মঙ্গলবার গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে সহিংসতার জন্য উচিত শিক্ষা দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা অগ্নি-সন্ত্রাস করছে, তাদের সাজাটা যাতে যথাযথ হয়, সেই ব্যবস্থাটা নিতেই হবে। শুধু ওই শাস্তি দিলে হবে না, যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, সেই হাত পুড়িয়ে দিলে তাদের শাস্তিটা হবে। তাতে যে মানুষগুলোকে ওরা পুড়িয়েছে, তাদের কষ্টটা বুঝতে পারবে।’

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি সহিংসতা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নিজেরাই পালাল। পালিয়ে আবার অবরোধের ডাক। কিসের অবরোধ? কার জন্য অবরোধ?’

চলমান সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপের অনুরোধ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন ডায়ালগ করবে, সেদিন আমি ডায়ালগ করব।’

বিএনপি নির্বাচন থামাতে পারবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৪ সালে পারেনি, ২০১৮ সালে পারেনি। এবারও পারবে না। নির্বাচন যথাসময়ে হবে।

তারা তো চাচ্ছে এটাই (নির্বাচন বানচাল)। তারা তা পারবে না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ ওদের সঙ্গে নেই। জনগণকে কষ্ট দিয়ে রাজনীতি হয় না। এটা তারা ভুলে যায়।’

পোশাকশ্রমিকদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘হঠাৎ তাদের মাঠে নামানো এবং সেখানে আবার জ্বালাও-পোড়াও করা, কোনো কোনো কারখানায় আগুন দেওয়া...যে কারখানা দিয়ে রুটি-রুজি আসে, সেই কারখানা ধ্বংস করলে তোমাদের চাকরিটা থাকবে কোথায়? সব তো গ্রামে ফিরে যেতে হবে।

এটা তো বাস্তবতা।’

দেশে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কৃত্রিমভাবে করা হচ্ছে। এত আলু উৎপন্ন হচ্ছে। তারপর হঠাৎ দাম বাড়ানো। এখানে তো কিছু কাজ আছে। বর্ষাকালে মুরগি এমনিতেই একটু কম ডিম পাড়ে। ডিমের দাম বাড়ল কেন, সেটা নিয়ে চিৎকার। যখন বললাম আমদানি করব, তখন আমদানি আর করা লাগল না।

এর আগেই দাম গেল কমে। এখন আবার দেখলাম বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, আলু আমদানি করবেন। পচাবে কিন্তু তারপরও দাম কমাবে না। এটা তো ঠিক না। সে জন্য বলেছি, দোকানে দোকানে নয়, যারা মজুত করছে, তাদের ধরতে হবে।’

বিরোধী দল দমনে সরকারকে যতটা সক্রিয় বা তৎপর দেখা যায়, ততটা তৎপরতা মজুতদার বা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কেন দেখা যায় না, সে প্রশ্ন অবশ্য মানুষের মনে আছে।

দেশে বিএনপির যে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক অবস্থা তাতে সরকার পতনের আন্দোলনে তারা সফল হবে বলে কেউ বিশ্বাস করে না। নির্বাচন যথাসময়ে যে হবে, সেটা এখন অনেকটাই স্পষ্ট। কিন্তু বিএনপিকে বাদ দিয়ে আরও একটি নির্বাচন করলে রাজনৈতিক সংকট বাড়বে না কমবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। যাঁরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে তাঁরা মনে করেন, সব দলের অংশগ্রহণেই নির্বাচন হওয়া উচিত। তাঁরা এটাও মনে করেন, বিএনপির উচিত তাদের রাজনৈতিক কৌশল বদল করা। মানুষ যে তাদের হঠকারী আন্দোলনের সঙ্গে নেই, সেটা কয়েক দিনের ঘটনার মধ্য দিয়ে অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে। মানুষের সমর্থনের ওপর বিএনপির এত ভরসা, অথচ তারা কেন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছে না, সেটা অনেকেই বুঝতে পারে না।

দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হতে পারে না–এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপিসহ সব দলেরই উচিত, দলীয় সরকারের অধীনে কীভাবে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব, সেটা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা। মানুষের শক্তি যে বড় শক্তি তা বিশ্বাস করে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশের জন্য মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করা দরকার। মানুষের মধ্যে জাগরণ তৈরি করাও যে একটি আন্দোলন, এটা সব রাজনৈতিক দলকে বুঝতে হবে। মানুষ যদি দলে দলে গিয়ে ভোট দেয়, নীরব ভোটবিপ্লব ঘটায় তাহলে প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হতে বাধ্য।
ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এসওয়াই কোরাইশি সম্প্রতি বাংলাদেশে এসে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘একটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সব ক্ষমতা রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ভারতের নির্বাচন কমিশনের যে সব ক্ষমতা আছে, সেই সব ক্ষমতা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনেরও আছে। তাদের ওপর কেন বিশ্বাস স্থাপন করা যাবে না তার কোনো কারণ আমি দেখি না।’

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কোরাইশি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন ভারতের নির্বাচন কমিশন দৃশ্যত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতো দায়িত্ব পালন করে। ভারতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কমিশন সর্বময় ক্ষমতা পায়। কোনো প্রধানমন্ত্রী থাকে না, মুখ্যমন্ত্রী থাকে না, ইসির অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের ইসি ক্ষমতাসীন সরকারকে কার্যত অকার্যকর করে ফেলে, তারা নতুন কোনো স্কিম নিতে পারে না, কাউকে বদলি করতে পারে না। এতে নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা বাড়ে।’

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে তেমন কর্তৃত্ব সম্পন্ন করার কাজটিতে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অনাগ্রহের কারণ বোধগম্য নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ‘সন্ত্রাসী খেল’ ফাঁস করে দিলেন জঙ্গিগোষ্ঠী জইশের সদস্য

বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে আসিফ নজরুলের পুরোনো ফেসবুক পোস্ট নতুন করে ভাইরাল করলেন হাসনাত

বাংলাদেশসহ ৫ প্রতিবেশীকেই নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করছে ভারত

‘সোহরাব-রুস্তম’ সিনেমায় ইলিয়াস কাঞ্চনের নায়িকার জীবনের করুণ অবসান!

৫ ইসলামি ব্যাংকে বসছে প্রশাসক, একীভূতকরণে লাগবে দুই বছর: বাংলাদেশ ব্যাংক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত