Ajker Patrika

জীবন যেমন

সম্পাদকীয়
জীবন যেমন

জীবনকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়েছিলেন সাহিত্যিক শওকত ওসমান। ব্যঙ্গবিদ্রূপ ছিল তাঁর চলনে-বলনে, কথায়-বার্তায়। আবার স্পষ্ট করেও বলেছেন অনেক কথা। নিজের ব্যাপারে কোনো রাখঢাক ছিল না তাঁর।

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ যখন তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গেছেন, তখন প্রশ্নের উত্তরগুলো ছিল তাৎপর্যময়। যেমন ‘নিজেকে আপনি সফল না ব্যর্থ মানুষ বলে মনে করেন?’ এ প্রশ্ন করলে শওকত ওসমান সরাসরি উত্তরের ধার ধারলেন না। বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথের একটা গান তুমি মনে করিয়ে দিলে ডক্টর আজাদ। “কী পাইনি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী...”।’

বাঙালি তিনি আপাদমস্তক। কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশে জন্মালে সবচেয়ে সুখী বোধ করতেন, জিজ্ঞেস করলে তিনি সহজেই বলতে পারেন, ‘আমি পৃথিবীর নাগরিক। এই পরিচয় আমার কাছে এক অহংকারবিশেষ। যেকোনো দেশই আমার দেশ।’

জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। কিশোরকাল থেকেই জীবন মানে ছিল যুদ্ধ।

বাল্যশিক্ষা শুরু হয়েছিল পাঁচ বছর বয়সে সবল সিংহপুর গ্রামের মক্তবে। এরপর নন্দনপুর রূপচাঁদগুপ্ত একাডেমিতে পড়েছেন। আড়াই মাইল হেঁটে যেতে হতো সেখানে। ১৯২৬ সালে নিজ গ্রামেই জুনিয়র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে শুরু করেন পড়াশোনা। এরপর কলকাতায় মাদ্রাসায়-এ-আলিয়ায় পড়াশোনা। সেখানে ছিল ইংরেজি শাখা। সেটাই বেছে নিলেন তিনি। সেখান থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা। সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে আইএ। এরপর কলকাতা করপোরেশনে কেরানির চাকরি। এমএ পাসের পর বাংলা সরকারের অধীনে প্যামফ্লেট রাইটার। ‘কৃষক’ পত্রিকায় কাজ। পরে আপন ভুবনে প্রবেশ।

গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে প্রভাষক। এভাবেই কাটতে থাকে দিন।

সে সময় কখনো কখনো আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয়েছে বটে, কিন্তু সহজে কাবু হওয়ার লোক নন তিনি। জীবনবোধের প্রাচুর্যই তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছে এবং তিনি লক্ষ করেছেন, মেহনতি মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা কম।

আর বার্ধক্য? বার্ধক্য হলো পড়ন্ত বিকেলের মতো। একরকমের আমেজ আছে তাতে। ক্লান্ত বলদ পা ফেলে কিন্তু খুব দৃঢ় তার ভার।

সূত্র: হুমায়ুন আজাদ, সাক্ষাৎকার, পৃষ্ঠা ৬১-৭২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত