Ajker Patrika

চায়ের নার্সারির গ্রাম

হোসেন রায়হান, পঞ্চগড়
আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ০৮: ৫২
চায়ের নার্সারির গ্রাম

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রাম বিরাজোত। মনোরম সবুজ এই গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে খড়ের তৈরি শেড। শেডের নিচেই যত্ন করে গড়ে তোলা নার্সারি। কোনো ফুল বা ফলদ বৃক্ষ নয়, সব নার্সারিতেই শোভা পাচ্ছে চায়ের চারা। এ জন্য আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা বিরাজোতকে চেনেন ‘চায়ের নার্সারি গ্রাম’ হিসেবে।

পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তরের এই গ্রামে কয়েক বছর আগেও ছিল অভাব ও অসচ্ছলতা। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে ছিল ছনের তৈরি কাঁচা ঘর। কিন্তু ৫-৭ বছরের ব্যবধানে বদলে গেছে পুরো চিত্র। এখন গ্রামের সব বাড়িতেই পাকা ঘর উঠেছে। ঘরের জানালায় লাগানো হয়েছে চকচকে থাই গ্লাস। গ্রামের যেসব বাসিন্দা আগে বাইসাইকেলে চড়ে পথ চলতেন, এখন তাঁরা মোটরসাইকেল চালান। আগে যাঁরা পাথর উত্তোলন করে বা অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন, তাঁরা এখন করেন নার্সারিতে চায়ের চারা পরিচর্যার কাজ। বলতে গেলে চায়ের চারা-ই বদলে দিয়েছে গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনমান।

দিন বদলের গল্প শোনালেন বিরাজোত গ্রামের আলেয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমার স্বামী ভ্যান চালাতেন। এই আয় দিয়ে সংসার চলত না। আমরা এখন নার্সারি করেছি। তিন সন্তান নিয়ে বেশ ভালো আছি।’

বিরাজোত গ্রামের বেশির ভাগ আবাদি জমিই এখন চায়ের নার্সারি। স্থানীয় লোকজন জানান, এই গ্রামে ১২০ থেকে ১৩০টি পরিবারের বসবাস। এই পরিবারগুলোর কমবেশি সবাই চা নার্সারির সঙ্গে যুক্ত। এ গ্রামের দেখাদেখি পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতেও চায়ের নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে। এরই মধ্যে পাশের ডাঙাপাড়া, কামারপাড়া, পতিপাড়া, বন্দিপাড়া ও সাহেবীজোত গ্রামে শুরু হয়েছে নার্সারি ব্যবসা।

নার্সারি মালিকদের কেউ নিজস্ব জমিতে, আবার কেউ অন্যের জমি চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে নার্সারি গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি নার্সারিতে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ চারা তৈরি করা হয়। প্রতিটি চারা বিক্রি হয় ৫-১৫ টাকা দামে। জেলার চা বাগানের চাহিদা মিটিয়ে সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় এসব চারা।

চায়ের নার্সারি থেকে আয় যেমন হয়, তেমনি আবহাওয়া খারাপ হলে ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়। বিরাজোত গ্রামের নার্সারি মালিক সফিকুল ইসলাম জানান, চায়ের চারার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো ঝড়, বৃষ্টি ও বাতাস। প্রায় প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পান না। সহজ শর্তে ঋণ ও কারিগরি প্রশিক্ষণ পেলে নার্সারিকেন্দ্রিক অর্থনীতি আরও এগিয়ে নিতে পারবেন বলে আশাবাদী সফিকুল।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ২১টি নার্সারির নিবন্ধন নিয়েছেন। এর মধ্যে বিরাজোত গ্রামের সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া নিবন্ধনের বাইরে শতাধিক নার্সারি রয়েছে ৷ মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চাষের মৌসুম চলাকালে এই নার্সারি করা যায়।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলার যেসব এলাকায় চায়ের নার্সারি হয়, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নার্সারির সংখ্যা বিরাজোত গ্রামে। চায়ের নার্সারি করে মানুষ বেশ উপকৃত হচ্ছেন। ওই গ্রামের নার্সারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা বেশ কয়েকবার কর্মশালা করেছি। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন মানুষ এই ব্যবসায় ঝুঁকছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দাম্পত্য কলহের গুঞ্জন, মুখ খুললেন জাহিদ হাসান

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

‘আপত্তিকর’ ভিডিও: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠালেন গভর্নর

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের যৌন সহিংসতার প্রসঙ্গ জাতিসংঘে তুললেন ভারতীয় দূত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত