Ajker Patrika

পোশাক কথা

রহমান মৃধা
পোশাক কথা

ছোট পোশাক পরে বিপরীত লিঙ্গকে ‘সিডিউস’ বা প্রলুব্ধ করা বন্ধ করো, বলা হচ্ছে। এই প্রতিবাদে রীতিমতো একদল রাস্তায়ও নেমেছে। চলছে পক্ষে ও বিপক্ষে প্রতিবাদের লড়াই।

বাংলাদেশের মতো অনেক মুসলিম দেশ রয়েছে, যেখানে নারীদের শরীর ঢেকে চলতে হয়। এটাই এযাবৎ হয়ে আসছে। এই প্রথম বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক লোক এটা নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। দেখা যাক, বিষয়টির শেষ কোথায় এবং কীভাবে থামে!

আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগের অনুভূতি। সবে তখন সুইডেনে এসেছি। হঠাৎ দেখি প্রচণ্ড শীতে গাছগুলোর পাতা ঝরে পড়ে গেল। দেখে মনে হলো সবকিছু মরে গেছে। কিছুদিন পরে সেই উলঙ্গ গাছগুলো তুষারে ঢাকা পড়ে এক অপূর্ব নতুন রূপ ধারণ করল। মানুষের মুখ ছাড়া কিছুই দেখার উপায় নেই। বরফ গলে গেল। ধীরে ধীরে শীতের দাপট কমতে শুরু করল। সূর্যের কিরণ দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল। আবার গাছগুলো তার নতুন জীবন ফিরে পেল। নর-নারীর দেহের কাপড় পাতলা ও ছোট হয়ে এল। দেখে মনে হলো অপূর্ব এক নিদর্শন; যার মধ্যে রয়েছে জ্বলন্ত জীবন!

ছাগল, গরু, হাঁস, মুরগির ক্ষেত্রে একটি জিনিস বেশ পরিষ্কার। সেটা হলো, জন্ম থেকেই তাদের যৌন লিঙ্গের ওপর একটি পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। গরু, ছাগলের লেজ এবং হাঁস, মুরগির শরীর ভরা লোম; যার কারণে এরা একে অপরের লিঙ্গ সরাসরি দেখতে পায় না। তার অর্থ এই নয় যে পশুপাখির সঙ্গম হয় না, অবশ্যই হয়।

মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে উলঙ্গ করে। পরে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এটা একটি বেশ সহজ-সরল বিষয়। 
আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে, শীত নিবারণের জন্য মানুষ শরীরকে নানাভাবে ঢাকতে শুরু করে। পরে কাপড়ের ব্যবহার শুরু হয়। এখন সেই কাপড়ের কারণে শুরু হয়েছে নতুন সমস্যা। আর সেটা হলো কে কীভাবে, কতটুকু কাপড় পরছে বা পরছে না!

আজ থেকে ২৫ বছর আগে স্ত্রী মারিয়াকে নিয়ে আমি বাংলাদেশে যাই। আমার স্ত্রীর বাবা স্প্যানিশ এবং মা সুইডিশ। মারিয়া মাল্টি কালচার, বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে বেশ সচেতন এবং মত-দ্বিমতের ওপর যথেষ্ট সম্মান রেখে কথাবার্তা বলে ও চলাফেরা করে।

বাংলাদেশে তার স্বল্প কয়েক দিনের ভ্রমণে শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ পরা এবং জনসমক্ষে শালীনতা বজায় রেখে চলাফেরা করাটাকে বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবেই সে মেনে নিয়েছে। তবে যে ঘটনাটি বর্তমান আন্দোলনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঠিক একই প্রশ্ন করেছিল সে আমাকে, আজ থেকে ২৫ বছর আগে। 
মারিয়ার রিফ্লেকশন ছিল, ‘এ কেমন অবিচার নারীর প্রতি? যে দেশে নারী প্রধানমন্ত্রী, নারীদের শরীর ঢাকা অথচ পুরুষেরা দিব্যি খালি গায়ে রাস্তা-ঘাটে, মাঠে, বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে? নারীরা কি পুরুষের শরীর দেখলে সিডিউস হয় না? আমাদের দেশে (সুইডেনে) আমরা নারী-পুরুষ সবাই হালকা-পাতলা কাপড় পরি, কিন্তু তোমাদের দেশে তো পুরোপুরি ডিসক্রিমিনেশন। এ এক আজব দেশ, শুধু নারীদের প্রতি অবিচার, দেশ চলে কীভাবে? আইন বা ন্যায়বিচারের শাসন আছে কি এখানে?’ 
সুইডেনে সৌদি আরবের মতো নারী-পুরুষ একই দর্শনে বিশ্বাসী। পার্থক্য শুধু সৌদিতে সারা বছর উভয়ের শরীর কাপড়ে ঢাকা থাকে। আর সুইডেনে, বিশেষ করে গরমকালে শরীরে কাপড় অনেক সময় থাকে না বললেই চলে।

নারীর দেহ দেখলে পুরুষ যেমন আকৃষ্ট হয় নারীর প্রতি, তেমনি নারীরাও কিন্তু একইভাবে পুরুষের শরীর দেখলে আকৃষ্ট হয়। এটাও খুব সরল কথা। 
নর-নারীকে নিয়ে ভাবতে ক্ষতি নেই, তবে ভালোবাসতে ভুলে গেলে চলবে না, কষ্ট দেওয়া যাবে না এবং পরস্পরকে সম্মান করতে হবে। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে জন্মেছি, অমানুষ হয়ে যেন না মরি।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবারে পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬, ভারতে ১০

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এনসিপি নেতা সারওয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি: শহিদুল আলম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত