Ajker Patrika

নদী পেরিয়ে টিকা গ্রহণ

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ৫০
নদী পেরিয়ে টিকা গ্রহণ

পদ্মা ও গড়াই নদী দ্বারা ত্রি-বিভক্ত কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রায় ছয় লাখ মানুষের বাস। কিন্তু করোনার টিকাকেন্দ্র রয়েছে মাত্র একটি। ওই টিকাকেন্দ্রে নৌকা দিয়ে যেতে হয় ছয় ইউনিয়নের মানুষদের। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। নদী পারাপারেও বাড়ছে চাপ ও দুর্ঘটনা।

সে জন্য পদ্মা নদীর ওপারে (উত্তরাঞ্চল) ও গড়াই নদীর এপারে (দক্ষিণাঞ্চল) অস্থায়ী দুটি টিকাকেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা।

জানা গেছে, পদ্মা ও গড়াই নদীর মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে উপজেলা পরিষদ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানাসহ সরকারি ও বেসরকারি সব দপ্তর। রয়েছে প্রধান শহর, জেলা ও রাজধানী শহরের চলাচলের যানবাহনের স্থান। রয়েছে কুমারখালী পৌরসভা, নন্দনালপুর, শিলাইদহ, কয়া, সদকী ও জগন্নাথপুর এই পাঁচ ইউনিয়ন। এখানে প্রায় তিন লাখ মানুষের বাস। এখানকার গ্রহীতারা প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকাকেন্দ্রে ভিড় করেন টিকার জন্য।

আরও জানা গেছে, গড়াই নদীর এপারে (দক্ষিণাঞ্চল) চাপড়া, বাগুলাট, চাদপুর, পান্টি ও যদুবয়রা এই পাঁচ ইউনিয়নে প্রায় তিন লাখ মানুষের বাস। এখানকার গ্রহীতারা নৌকা দিয়ে গড়াই নদী পাড়ি দিয়ে টিকার জন্য যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে প্রতিদিনই নদী পারাপারে বাড়ছে ভোগান্তি, ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া তাঁদের ভোগান্তির সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে সময় ও অর্থ। অনেকে আবার ভোগান্তি এড়াতে টিকা নিতেই অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া পদ্মা নদীর ওপারে (উত্তরাঞ্চল) দুর্গম চরে সাদিপুর ইউনিয়ন। এখানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। তাঁদের ১০ কিলোমিটার নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে টিকাকেন্দ্রে আসতে হয়। এতে অর্থ ও সময় অপচয়ের পাশাপাশি বাড়ে ভোগান্তি। ফলে এখানকার মানুষের মাঝে টিকাগ্রহণে অনীহা রয়েছে।

এ বিষয়ে সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘টিকাকেন্দ্র অনেক দূরে হওয়ায় মানুষের আগ্রহ কম। মাত্র ২ হাজার ৩০০ মানুষ টিকা নিয়েছেন। কেন্দ্র হলে খুব উপকৃত হতো।’

চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশিদুজ্জামান তুষার বলেন, নৌকায় পাড়ি দিয়ে কেন্দ্রে যেতে মানুষের ভোগান্তি হয়। দুর্ঘটনা ঘটে। এপারে কেন্দ্র হলে ভালো হতো।

চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মণির হাসান রিন্টু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে প্রায় এক লাখ মানুষের বসবাস। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা নিতে গিয়ে মানুষের সময় ও অর্থের অপচয় হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পাঁচ ইউনিয়নবাসীর জন্য একটি অস্থায়ী বা স্থায়ী টিকাকেন্দ্র হলে ভালো হয়।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত উপজেলায় টিকার জন্য অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৭০। এর মধ্যে প্রথম ডোজ ১ লাখ ২০ হাজার ৬০৪ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে ৫৭ হাজার ১৬৭ জনের।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আকুল উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে দুবার করে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অস্থায়ী টিকাকেন্দ্র স্থাপন করলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাপ কমবে। দূরবর্তী মানুষের ভোগান্তিও কমবে। কিন্তু টিকাকেন্দ্র স্থাপনে টেকনিক্যাল সমস্যা আছে।’

উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ‘কেন্দ্র স্থাপন করা গেলে মানুষ সহজে টিকা নিতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন ও ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত