Ajker Patrika

লোভ এবং অবহেলা

সম্পাদকীয়
লোভ এবং অবহেলা

আঁখি ও ইয়াকুব দম্পতির নবজাতক মারা গেছে। তাঁদের এই শূন্যতা, এই কষ্ট যেকোনো বাবা-মা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারেন। বাবা-মা না হলেও সন্তান হারানোর বেদনা যে কতটা গভীরতা যে কেউ বুঝতে পারেন। যাঁদের অবহেলা বা ভুলের কারণে আঁখি ও ইয়াকুব সন্তান হারিয়েছেন, হয়তো তাঁরাও অপরাধবোধে ভুগছেন। তাই নিজেদের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন।

৯ জুন রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে আঁখি ভর্তি হন প্রসবব্যথা নিয়ে। তিনি নিয়মিত দেখাচ্ছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহাকে। কথা ছিল এই চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাভাবিক প্রসব করতে পারবেন আঁখি। ভর্তির সময় সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে ছিলেন না। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে তিনি অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন। প্রথমে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করা হয়, সফল না হলে সিজারের মাধ্যমে আঁখির সন্তান বের করা হয়। কিন্তু জন্মের এক দিন পরেই শিশুটি মারা যায়। এদিকে আঁখির অবস্থাও হয়ে পড়ে গুরুতর।

আঁখির স্বামী ইয়াকুব পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে তো নয়ই, দেশেই ছিলেন না। তিনি জরুরি হেল্পলাইন ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে অভিযোগ করেন, অবহেলা ও প্রতারণার জন্য তাঁর সন্তান মারা গেছে এবং স্ত্রী মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন। এরপর বুধবার তিনি ধানমন্ডি থানায় মামলাও করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা ও ডা. মুনা সাহা দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

দোষীদের শাস্তি কী হবে, সেটা আদালত ঠিক করে দেবেন। কিন্তু এই যে মানুষের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা, তাতে অবহেলা নতুন কিছু নয়। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, দুর্নীতির খবর যেমন অহরহ প্রকাশিত হচ্ছে, তেমনি অবহেলার ঘটনাও কম নয়। আঁখি ও ইয়াকুব দম্পতির ঘটনাটি এর একটি উদাহরণ মাত্র।

ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে নেই—এ তথ্যটি আঁখি ও ইয়াকুবকে দিলে যদি রোগী ভর্তি না হয়, সেই আশঙ্কায় যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপরাধ করেছে, তা কোনোভাবেই মার্জনীয় নয়। যেখানে জীবন-মরণের প্রশ্ন, সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোভের কারণে একটি নবজাতক মারা গেল, আর সেই নবজাতকের মা মৃত্যুঝুঁকিতে পড়লেন, এটার কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে না।

রোগীর চিকিৎসা কে বা কারা করছেন, তা জানার সম্পূর্ণ অধিকার রোগী এবং তাঁর স্বজনদের আছে। সেখানে আঁখি ও তাঁর পরিবার একটি জটিল মুহূর্তে ভরসা করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর। এ রকম সময়ে অসহায় অবস্থায় যে কেউই চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখতে রাজি থাকেন। সেই সুযোগে ফায়দা করে নেয় অসাধুরা। সে কারণেই কি আমাদের দেশের সামর্থ্যবানেরা বিদেশে পাড়ি দেয় একটু উন্নত সেবার আশায়?

জনপ্রতিনিধিরা যখন বলেন, আমাদের দেশেই উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়, তখন তাঁদের কথায় আস্থা রাখেন অনেকেই। কিন্তু চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোভ আর অবহেলা না দমানো গেলে তা সম্ভব হবে কী করে? নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা কি তবে ‘গিনিপিগ’ হয়েই জীবন কাটাবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত