Ajker Patrika

একটি শাটল ট্রেনের গল্প

আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯: ৪৫
একটি শাটল ট্রেনের গল্প

‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের ফ্রিজে রাখা মাংস নিয়ে গেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা’—ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দেখে মুহূর্তেই বিশ্বাস করে ফেলবেন না। এভাবে মিম বানিয়ে স্রেফ মজা লুটছে অনেকে। অথচ এখন মজা করার সময় নয়। গুরুত্বপূর্ণ খবর হচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়েছেন, ভাঙচুর করেছেন। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে অনেকে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন এর পেছনে কারণ একটি শাটল ট্রেন!

খবরে বলা হয়েছে, রেললাইনের ওপরে হেলে পড়া একটি গাছে ধাক্কা লেগে শাটল ট্রেনের ছাদে থাকা অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তখনই। শিক্ষার্থীদের আরও খেপিয়ে তোলে আহত এক সহপাঠীর মৃত্যুর গুজব। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯ জনের চিকিৎসা চলছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর তাঁদের মধ্যে তিনজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। 
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শুধু যে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়েছেন তা-ই নয়, ভাঙচুর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৭০টি বাস, হামলা করেছেন পুলিশ বক্স ও শিক্ষক ক্লাবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই ক্রোধ, এই ক্ষোভ এক দিনের ওই এক ঘটনায় কিন্তু তৈরি হয়নি। সেদিনের শাটল ট্রেনের কাণ্ড শুধু তাঁদের উসকে দিয়েছে, তাঁরা বাধ্য হয়েছেন বস্তাভর্তি ক্ষোভ উগরে দিতে। বিকেলে রেললাইনের ওপর হেলে পড়া গাছটি কয়েক ঘণ্টা পরেও সরানোর ব্যবস্থা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের ধারণক্ষমতা অনেক কম বলে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের ট্রেনের ছাদে উঠে যাতায়াত করতে হয়। এসব জেনেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের এমন আচরণকে ন্যক্কারজনক ও ছাত্রসুলভ নয় বলে অবাক হয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। খুব সত্যি কথা। এমন আচরণ করার সুযোগটা তাঁদের কে বা কারা দিল, সেই প্রশ্নটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করে যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতেও বোঝা যায় এই শিক্ষার্থীরা তাঁদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের মান এবং বগির সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেললাইনের মান ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বহিরাগতরা শাটল ট্রেনে চলাচল করেন বলে জায়গা না পেয়ে শিক্ষার্থীরা ট্রেনের ছাদে চড়ে কিংবা দরজায় ঝুলে যাতায়াত করেন। যদিও তা অনিরাপদ, কিন্তু এ ছাড়া তাঁদের আর উপায় কী?

তবে বিবৃতিতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাঙচুরের ঘটনায়ও নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আগে থেকেই সতর্ক হয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিত, তাহলে হয়তো কয়েকটি তরুণ প্রাণ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছটফট করত না। আর তাঁদের সহপাঠীরাও খেপে উঠতেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত