Ajker Patrika

সব শেষ হয়ে গেছে

সব শেষ হয়ে গেছে

১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আগুস্তো পিনোশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটালেন চিলিতে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সালভাদর আয়েন্দেকে হত্যা করলেন। প্রেসিডেন্টের ভবনে জ্বলল আগুন। পাবলো নেরুদার প্রিয় বন্ধু নিহত হলে কবি নির্বাক হয়ে গেলেন।

কিন্তু এদিনটি এ রকম হওয়ার কথা ছিল না। নেরুদাকে নিয়ে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর সমাপনী উদ্‌যাপন করার কথা ছিল এদিনটিতেই। বহু বন্ধু আসবে এদিন নেরুদার বাড়িতে। নেরুদা ফাউন্ডেশনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসবেন আয়েন্দের বিচার বিভাগের মন্ত্রী সার্জিও ইনসুনজার, ফাউন্ডেশনের সদর দপ্তরের নীলনকশা নিয়ে আসবেন পুমন্তা দেত্রালকাতে। খাদ্যরসিক বন্ধু ফার্নান্দো আলেগরিয়াও আসছেন। তাঁদের জন্য মাতিলদে রান্না করেছেন চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয়।

মাতিলদে সকালে খবর শোনার জন্য রেডিওর নব ঘোরালেন। আতঙ্কজনক খবরটি শোনা গেল তখনই। দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। হঠাৎ শোনা গেল আয়েন্দের কণ্ঠস্বর। পাবলো নেরুদা গভীর হতাশা নিয়ে বললেন, ‘সব শেষ হয়ে গেছে।’

ভীষণ উচ্ছল পাবলো নেরুদার মুখে হাসি নেই। কবিতার পর কবিতা লিখে যে মানুষ পাঠকের হৃদয় হরণ করে নিয়েছেন, কূটনীতিতে যিনি পারদর্শী, আয়েন্দের জন্য নির্বাচনী সভায় যিনি অনলবর্ষী বক্তা, সেই নেরুদা একেবারে চুপ।

মাতিলদে জিজ্ঞেস করেন, ‘নাশতা করবে?’

কথাটা যেন নেরুদার কানে ঢোকে না। পাগলের মতো রেডিওর এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যাচ্ছেন তিনি। সান্তিয়াগো স্টেশন শোনার পরই চলে যাচ্ছেন বিদেশি কোনো স্টেশনে। সত্যটা জানতে হবে। রাজধানীর বাইরে মেন্দোজা স্টেশন নেরুদার শেষ ভরসাস্থলে ঠুকে দেয় শেষ পেরেক। জানা যায়, আয়েন্দে নিহত হয়েছেন। যে লা মনেদা প্রাসাদে তিনি থাকতেন, সেখানেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাসাদে তখনো আগুন জ্বলছে।

কিছুদিন আগেই নির্বাচনী প্রচারণায় দেশের জনগণের ব্যাপারে পাবলো নেরুদা বলেছিলেন, ‘এখন তাদের শতাব্দী-দীর্ঘ ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে হবে।’ 
আয়েন্দে নিহত হওয়ার পর সেই স্বপ্ন ম্লান হয়ে গেল নেরুদার। ‘সব শেষ হয়ে গেছে’ কথাটাই হয়ে উঠল তাঁর সার্বিক অনুরণন। 

সূত্র: মাতিলদে উরুতিয়া, মাই লাইফ উইথ পাবলো নেরুদা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত