Ajker Patrika

আরও দুটি শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদনের তোড়জোড়

রাহুল শর্মা, ঢাকা
আরও দুটি শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদনের তোড়জোড়

দেশে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। কিন্তু বেড়ে চলেছে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাখা’ বা ‘স্টাডি সেন্টার’ খোলার প্রবণতা। বর্তমানে তিনটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি ক্যাম্পাস রয়েছে দেশে, যা নিয়ে উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। এ অবস্থার মধ্যেও আরও দুটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা অনুমোদনে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। বিশ্ববিদ্যালয় দুটি হলো যুক্তরাজ্যভিত্তিক লিডস ট্রিনিটি ইউনিভার্সিটির স্টাডি সেন্টার এবং মালয়েশিয়াভিত্তিক মাহসা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৮-১০টি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার খোলার আবেদন করেছে। এর মধ্যে দুটির বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) বলা হয়েছে। সরকারের প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তি এগুলোর জন্য জোর তদবির করছেন। অনেকটা বাধ্য হয়ে এগুলোর বিষয়ে মতামত দিতে ইউজিসিকে বলা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, কার্যক্রমে থাকা অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক মোনাস কলেজও আরও কয়েকটি প্রোগ্রাম শুরু করার অনুমতি চেয়েছে। বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

মতামত চাওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান। তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি ক্যাম্পাসের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে মতামত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

তবে প্রয়োজনীয়তা নিরূপণের আগে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার অনুমোদনের বিরোধিতা করছেন শিক্ষাবিদেরা। তাঁরা বলছেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা আগে নিরূপণ করতে হবে। তারপরও অনুমোদন দেওয়া উচিত। না হলে শিক্ষাব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি ক্যাম্পাস অনুমোদনের আগে এর আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা নিরূপণ করা দরকার। না হলে শিক্ষাব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

একই সুরে কথা বলেন শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রয়োজন না থাকার পরও অনেক কিছু হচ্ছে। এটাও (বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা) তেমনি। কারণ, আমাদের নীতি নাই, নিয়ম নাই। এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়বে।’ 
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ৫৩টি সরকারি, ১১২টি বেসরকারি এবং ৩টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে এসব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৬ জন। ২০২২ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৭১৭ জনে।

অনুমোদন পাওয়া কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো কার্যক্রম শুরু করেনি। আবার সনদ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকটির ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করেছে ইউজিসি।

প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ না করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদনের বিরোধিতা করেছেন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি সেন্টারগুলো আইনের তোয়াক্কা করে না। প্রয়োজন না থাকারও পরও এগুলো অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষাব্যবস্থায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আবু ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছে। তবে সভায় এখন পর্যন্ত কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। দু-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের ব্যাপারে ইউজিসি থেকে যে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর বিস্তারিত মতামতসহ আমরা ফের তথ্য চেয়েছি। কমিশন থেকে সুস্পষ্ট মতামত এলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: ফেসবুকে বাকের মজুমদার

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় এক দিনে ১০০ ডলার কমল সোনার দাম

যুদ্ধ বলিউডের সিনেমা নয়: ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

টাকা চুরি করতে দেখে ফেলায় দুই খালাকে হত্যা করে কিশোর: ডিবি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত