Ajker Patrika

ট্রেনের টিকিট যখন চা-বিড়ির দোকানে!

সম্পাদকীয়
ট্রেনের টিকিট যখন চা-বিড়ির দোকানে!

আমাদের দেশটি এক আজব দেশ। নিয়ম না মানাটাই এখানে নিয়ম এবং আইন ভঙ্গ করাটাই যেন আইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাগরিকদের হয়রানির জন্যই যেন একশ্রেণির সরকারি কর্মচারীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। সাধারণ জনগণকে সেবা দেওয়াই সরকারি কর্মচারীদের কাজ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘটছে তার উল্টো। রেলের টিকিট কাউন্টারে না পাওয়া গেলেও পাওয়া যায় স্টেশনের চা-বিড়ির দোকানে!

১১ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ভাগলপুর ও সরারচর রেলস্টেশনের কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কাউন্টারে টিকিট না পাওয়া গেলেও স্টেশনের দোকানগুলোতে দ্বিগুণ-তিন গুণ দামে তা মিলছে। কোনো উৎসব নেই, কিন্তু তারপরও সহজে মিলছে না ট্রেনের টিকিট।

সংবাদসূত্রে আরও জানা যায়, এখানে তিন-চার বছর আগে ২০-৫০ টাকা বেশি দিলে কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যেত, এখন আর কাউন্টারে টিকিট মেলে না। বাজিতপুরে দুটি স্টেশনের ৭৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয় কালোবাজারিদের হাত দিয়ে। কিছু অসাধু কর্মচারীর মাধ্যমে কাউন্টারের টিকিট চলে যায় কালোবাজারিদের হাতে। তারা বেশি দামে সেসব টিকিট বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

আমরা যদি বাজিতপুরের ঘটনাটিকে প্রতীকী হিসেবে ধরে নিই, তাহলেও দেখতে পাব, সারা দেশের রেলস্টেশনের এটা নিয়মিত ঘটনা। বাংলাদেশের এমন কোনো রেলস্টেশন নেই, যেখানে টিকিট নিয়ে কালোবাজারি হয় না। এমনকি কমলাপুর রেলস্টেশনেও প্রকাশ্যে টিকিট কালোবাজারি হতে দেখা যায়। দেশের অনেক মানুষই নিরাপদ যাতায়াত ও তুলনামূলক কম ভাড়ায় ট্রেনে যাতায়াত করা পছন্দ করে। কিন্তু নানা অনিয়ম-অবহেলায় আমাদের দেশে ট্রেন যোগাযোগ আধুনিক ও আরামদায়ক হয়ে ওঠেনি। এর ওপর রেলের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে টিকিট পাওয়ার ভোগান্তি না কমে বরং দিন দিন বেড়েই চলছে।

রেলের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য বর্তমান সরকার পৃথক রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করেছে। এ ছাড়া টিকিটপ্রাপ্তি সহজ করার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে অনলাইন ও মোবাইল টিকিট সার্ভিস। এরপরও টিকিট নিয়ে দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’ প্রবাদটির সফল প্রয়োগ দেখা যায় বাংলাদেশ রেলওয়েতে। ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তন করেও কমেনি কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য।

রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন আছে। পৃথিবীর সব দেশে রেলযোগাযোগ মানুষের অগ্রাধিকার পেলেও আমাদের দেশে তা হচ্ছে না।

বছরের পর বছর ধরে নানা অবহেলা ও অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রীয় এ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে মানুষের মনে যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, তা দূর করার জন্য যে কঠোর ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন, সেখানেই রয়েছে বড় ঘাটতি।

রেলের উন্নতির জন্য টিকিট সহজলভ্য করা, সঠিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া, কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কমানোর মতো কাজগুলো কেন করা হচ্ছে না, এ প্রশ্নের জবাব রেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর কাছে আশা করা কি অন্যায়?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত