Ajker Patrika

বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি

সম্পাদকীয়
বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি

শনিবারের আজকের পত্রিকার ভেতরের পাতায় নারী নির্যাতন বিষয়ে কয়েকটি সংবাদ ছাপা হয়েছে। খবরগুলো পড়লেই বোঝা যায়, নারীর ব্যাপারে পুরুষদের অসহিষ্ণুতা অনেক ক্ষেত্রেই সীমা অতিক্রম করছে। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, খবরগুলোর অন্তত তিনটিতে স্ত্রীর সঙ্গেই অস্বাভাবিক ও লজ্জাকর আচরণ করেছেন স্বামীরা।

বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি কাকে বলে, তার উদাহরণ পাওয়া যাবে খবরগুলোয়। এক স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করিয়েছেন এক বন্ধুকে দিয়ে। তারপর আবার অসুস্থ স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিয়েছেন বাপের বাড়ি। স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ বাড়িতে রেখে আরেক স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা পালিয়েছেন। যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছেন আরেক স্বামী।
ঘটনাগুলোর স্থান-কাল-পাত্র উল্লেখ করা হলো না। কারণ, এই একই ধরনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে চলেছে। আলাদাভাবে কয়েকটি জায়গার নাম তুলে ধরলে মনে হতে পারে, তা স্থানীয় ঘটনা। আসলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এ রকম তলানিতে গিয়ে ঠেকল কেন, তা নিয়ে সামাজিক গবেষণা হওয়া উচিত। শনিবারের আরেকটি সংবাদে দেখা যাচ্ছে, সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীও উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে; অর্থাৎ নারী নির্যাতনের এই ধারা অব্যাহত আছে। এমনকি শেষোক্ত ঘটনায় থানা-পুলিশের 
ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

ব্যাপারটা এমন নয় যে এই প্রথম নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটল। আমাদের সমাজে নারীকে সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয়। গৃহিণী হন আর চাকরিজীবী, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী সমান অধিকার পান না। আচরিত জীবনে পুরুষই সংসারের প্রধান হন এবং তাঁর হাতেই থাকে ক্ষমতা। নারীর ক্ষেত্রে সেই ক্ষমতার অপব্যবহার হরহামেশাই ঘটে থাকে। ফলে যে শিশু বেড়ে উঠছে এ রকম এক পরিবেশে, সেই শিশু নারীকে সম্মান করতে শেখে না। এই পুরুষদের কাছে মা, স্ত্রী, বোন, কন্যা কেউই নিরাপদ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের তকমা নিজেরাই নিজেকে দেওয়ায় কোনো দিন তাঁরা প্রশ্নের মুখোমুখি হন না। নারীরা প্রশ্ন তুললে নির্যাতনের মুখে পড়েন।

ইদানীং রক্ষণশীলতা ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে। মুক্ত হাওয়ার জায়গায় বদ্ধ পরিবেশই অনেকে মেনে নিচ্ছেন। নারী-পুরুষের সম-অধিকারের যে স্লোগান বিশ্বব্যাপী একটা ভারসাম্য আনবে বলে মনে হয়েছিল, সেই স্লোগান আমাদের দেশে ম্রিয়মাণ হয়ে উঠছে। এর একটা বড় কারণ হচ্ছে, নারী সম্পর্কে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির রক্ষণশীলতা। 
বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি তো বটেই, কিন্তু তার চেয়ে বড় ব্যাপার, বিয়ে একটি সংসার গড়ে তোলে, তাতে ভালোবাসায়ঘেরা একটি পরিবারের জন্ম হয়। কিন্তু বিয়ের পর যখন স্বামীই নিজ স্ত্রীকে বন্ধুর মাধ্যমে ধর্ষণ করিয়ে তা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেন, তখন ভাবনার গলদটি চোখের সামনে এসে ধরা দেয়। আর উত্ত্যক্ততার ঘটনা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।

পুরুষেরা নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে সমাজের এই দুষ্টক্ষত ওপড়ানো যাবে না। সচেতন মানুষদের উচিত, সব মহলেই নারী-পুরুষ সমান অধিকারের বিষয়টি নিয়ে প্রচারণা চালানো। নিজ পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ফিরে এলে এ অঘটনগুলো ঘটবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জম্মু-কাশ্মীরে ধ্বংস করা হলো ৪৪ হাজার কেজি রসগোল্লা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত