Ajker Patrika

এ সপ্তাহে কিস্তি না দিলে ঋণখেলাপি

আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ৩৭
এ সপ্তাহে কিস্তি না দিলে ঋণখেলাপি

করোনার সময় পাওয়া প্রণোদনার ঋণের কিস্তি শিথিলের বিশেষ সুবিধা শেষ পর্যন্ত পাচ্ছেন না বড় ঋণগ্রহীতারা। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সদ্যবিদায়ী বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তির ১৫ শতাংশ পরিশোধের বিধান রেখে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মৌখিকভাবে তাদের চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এ সময়ের পর ঋণগ্রহীতাদের স্বাভাবিকভাবে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। কেউ ৬ জানুয়ারির পর কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে তাঁরা ঋণখেলাপি হবেন। ব্যবসায়ীদের এমনটিই জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, এর ফলে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়বে। ওই সময় ব্যবসায়ীরা এমনিতেও কিস্তি দিতে পারবেন না। তখন ঋণ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা কিস্তি শিথিলের সুবিধা আরও কিছুদিন পাবেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক জি এম আবুল কালাম আজাদ জানান, মোটাদাগে প্রণোদনার ঋণের কিস্তি শিথিলের সুবিধা আর বাড়ানো হচ্ছে না। মৌখিকভাবে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, ৬ জানুয়ারির মধ্যে ১৫ শতাংশ টাকা দিয়ে খেলাপি না হওয়ার সুবিধা নিতে। এর পর আর এ সুযোগ থাকছে না।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে ওমিক্রনের পরিস্থিতি আর কিছুদিন দেখার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আমরা বলেছি, অন্তত জুন পর্যন্ত যদি ঋণের কিস্তি শিথিল থাকে, তাহলে সবার জন্য ভালো হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা না করে, ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কিস্তির ১৫ শতাংশ পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে। তার মানে ৬ জানুয়ারির পর কিস্তি না দিতে পারলে খেলাপি হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আগে বলেছিল ২৫ শতাংশ দিলেই খেলাপি হবে না। আর এখন বলেছে ১৫ শতাংশ। তাতে ব্যাংকগুলো কিছুটা কম টাকা পাবে। আমরা বলেছিলাম, আগের মতোই ২৫ শতাংশ কিস্তি সুবিধা জুন পর্যন্ত বহাল থাকলে ব্যাংকের লাভ হতো।’

জানা যায়, নতুন প্রজ্ঞাপন জারির ফলে ব্যাংকগুলো ২৫ শতাংশের বদলে ১৫ শতাংশ হারে কিস্তির টাকা পাবে। এতে কিছুটা কম টাকা পাবে ব্যাংকগুলো। এর মধ্য দিয়ে খেলাপি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হলো বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ওই দিনের বৈঠকে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, রিহ্যাবসহ ব্যবসায়িক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা প্রায় সবাই ঋণের কিস্তি শিথিলের বিষয়টি যেভাবে আছে, সেভাবে জুন পর্যন্ত বহাল রাখার দাবি করেছিলেন।

করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে, সরকার শিল্প ও সেবা খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি না দিলেও কাউকে খেলাপি করা যাবে না। পরে দফায় দফায় এ সুবিধার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সবশেষ সদ্যবিদায়ী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তাতেও ব্যবসায়ীরা আপত্তি করে সময় বাড়ানোর দাবি জানান। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তেমন একটা সাড়া দেয়নি।

এদিকে ব্যাংকাররাও প্রণোদনার ঋণের কিস্তি নিয়ে বেশ উদ্বেগের মধ্যেই আছেন। করোনার কারণে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় এত দিন কিস্তি না দিলেও কাউকে খেলাপি দেখানো হয়নি। ফলে ব্যাংক কোনো কিস্তি না পেয়েও ঋণ হালনাগাদ দেখিয়ে আসছে। এতে ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র বোঝা যায়নি। এখন কিস্তি পরিশোধের শিথিলতা তুলে দেওয়ায় খেলাপি বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যদি ঋণগ্রহীতারা সময়মতো কিস্তি পরিশোধ না করেন, তাহলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের আসল চিত্রটা দেখা যাবে। তিনি মনে করেন, সামনে খেলাপি ঋণ বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত