Ajker Patrika

বৃষ্টি হলেই কি স্বস্তি মিলবে

সম্পাদকীয়
বৃষ্টি হলেই কি স্বস্তি মিলবে

প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে দেশ। তাপমাত্রার পারদ এতটা ঊর্ধ্বমুখী অতীতে আর হয়েছে বলে মনে হয় না। বলা হচ্ছে, এপ্রিল মাসেই দেশে তাপপ্রবাহ ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। প্রচণ্ড গরমে অস্থির মানুষ। এর মধ্যেই হিট স্ট্রোকে বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ অসহনীয় কষ্ট ভোগ করছে। এ ছাড়া কৃষি অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যে।

আজকের পত্রিকায় রোববার প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মে মাসের শুরুতে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সেই বৃষ্টিতে হয়তো কিছুটা স্বস্তি মিললেও মিলতে পারে। তবে অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে কিছু আশঙ্কার কথাও প্রকাশ করা হয়েছে। অস্বাভাবিক গরমের কারণে এবার ফসলের ক্ষতি হতে পারে; বিশেষ করে এখন মাঠে থাকা বোরো ফসল তাপপ্রবাহে নষ্ট হতে পারে। মাটির আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় বাড়তি সেচ দিতে হচ্ছে। আবার ব্যাপক লোডশেডিংয়ের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে খেতের পানি সেচ। এতে পুড়ে যাচ্ছে ভুট্টা, গম, বাদামসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলের ফসলের খেত। অতি তাপপ্রবাহে আম, কাঁঠাল, লিচু, তুলাসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল-ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। সব মিলিয়ে সার্বিক খাদ্যনিরাপত্তার সংকট হতে পারে।

প্রাণিসম্পদ, যেমন গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিও তাপপ্রবাহের কারণে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আছে। বাড়িতে যাঁরা খামার করেছেন, তাঁরা সেগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন। মুরগির খামার, গরুর খামারে খরচ বাড়ছে। অধিকাংশ খামার গ্রামাঞ্চলে হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন কমছে, বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। চিড়িয়াখানার বন্য প্রাণীর জন্য তৈরি হয়েছে বড় সমস্যা। চিড়িয়াখানার পরিবেশ তাপপ্রবাহ সামাল দেওয়ার উপযোগী নয়। ছায়াময় জায়গা নেই, নেই পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। আমাদের প্রাকৃতিক বনভূমিতে যে গাছপালা ও বন্য প্রাণী আছে, সেগুলোও বিপর্যয়ের মুখে।

এই পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে আজকের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, প্রথম অবস্থায় ২ বা ৩ মে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। এরপর ৫ বা ৬ তারিখ থেকে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে।

টানা তাপপ্রবাহ থেকে নিস্তার পাওয়ার একমাত্র উপায় বৃষ্টি। ফলে মে মাসের শুরুতে বৃষ্টি হলে তাপপ্রবাহ অবশ্যই কমবে, কিন্তু সেটা কত দিন স্থায়ী হবে, তা নিশ্চিত বলা যাবে না। আবহাওয়াবিদেরা এটাও বলছেন যে মে মাসেও গরম বাড়তে পারে।

প্রকৃতি যে আমাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করছে, তার দায় আমাদেরই। আমরা প্রকৃতির অনেক কিছুই নষ্ট করে ফেলেছি। নির্বিচারে গাছ কেটেছি। উন্নয়নের মহাযজ্ঞে প্রকৃতির ওপর যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তাতে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। নদ-নদী, বিল, জলাশয়, পাহাড়-পর্বত—সবই দখল ও বিনষ্ট করার ফল এই উষ্ণায়ন। তাই আগের স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হলে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব না হলেও কীভাবে খাপ খাইয়ে চলা যায়, সেই জ্ঞান রপ্ত করতে হবে বৈকি!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত