Ajker Patrika

মুক্তিযুদ্ধ

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ০৯: ৪৭
মুক্তিযুদ্ধ

ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। পরিবার থেকে কোনো রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা পাননি। ক্যাডেট কলেজ শিখিয়েছিল, যা-ই হোক না কেন, পাকিস্তানই ফার্স্ট। কেউ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বললে তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে যেত। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান থেকে একাত্তর পর্যন্ত যত আন্দোলন হয়েছে, তাতে মোটেই আলোড়িত হননি সৈয়দ জামিল আহমেদ; বরং তিনি বুঝতে পারতেন না, কেন পাকিস্তান ভেঙে ফেলা হচ্ছে। একবার তো বেফাঁস কথা বলতে গিয়ে একটুর জন্য মারের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।

সাতই মার্চের ভাষণও তাঁকে স্বাধিকারের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করেনি; বরং পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনে তিনি ভাবতেন, এসব কী কথা! এরা পাকিস্তান ভাঙবে নাকি?

বোধোদয় হলো ২৬ মার্চ। ২৬ মার্চ রাত দুটোর সময় জামিলকে ডেকে তুলেছিলেন তাঁর বাবা। সে সময় তাঁরা থাকতেন সিদ্ধেশ্বরীতে। বাড়ি থেকে দক্ষিণের দিকে তাকিয়ে দেখেন লাল আকাশ। এ রকম লাল আকাশ তিনি আগে কখনো দেখেননি। ২৭ মার্চ দুই ঘণ্টার জন্য কারফিউ তুলে নিলে শান্তিনগর বাজার, গুলিস্তান, কাঠপট্টি, নয়াবাজার ঘুরে দেখলেন সব পুড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ফিরে আসছিলেন যখন, তখন গুলিস্তান সিনেমা হলের পাশে একজন মানুষের লাশ দেখতে পেলেন। খুলি উড়ে গেছে। মগজটা যেন ফাঁকা কতবেল। দেখেই বোঝা যায়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে অল্প কিছুক্ষণ আগে। মাথা ফাঁকা, মাছি ভন ভন করছে। শান্তিনগর বাজার যেন পোড়ো ভূমি।

এসব দেখার পর সৈয়দ জামিল আহমেদকে আর কিছু বলে দিতে হয়নি। তিনি উপলব্ধি করলেন—আর কেন পাকিস্তান?

পাকিস্তানের প্রেমে মত্ত ছেলেটি এরপর ঢাকা শহরেই ৫-৬টা অপারেশন করেছেন। যুদ্ধের সময় পিন খুলে ক্লিপের ওপর হাতের বুড়ো আঙুল চাপা দিয়ে একটা গ্রেনেড পকেটে নিয়ে হাঁটতেন তিনি। যদি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চলে আসে, গ্রেনেডের পিন খুলতে সময় লাগবে, সেটা ভেবেই সেভাবে চলতেন। সেই লাজুক ছেলেটাকে একাত্তর শিখিয়েছে ভয় না পেতে।

সূত্র: সাখাওয়াত টিপু সম্পাদিত ‘তর্কবাংলা’, পৃষ্ঠা ৪৮-৫০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত