Ajker Patrika

চাচাশ্বশুর, অনশন ও ধর্ষণের মামলা

সম্পাদকীয়
চাচাশ্বশুর, অনশন ও ধর্ষণের মামলা

গোপন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল গৃহবধূ আর তাঁর চাচাশ্বশুরের মধ্যে। সে কথা জানাজানি হয়ে গেলে স্বামী বাড়ি থেকে বের করে দেন স্ত্রীকে। স্ত্রী চলে আসেন চাচাশ্বশুরের বাড়িতে। বিয়ের দাবি জানিয়ে অনশন করেন। কিন্তু তাতে পাত্তা দেননি চাচাশ্বশুর। পরে এই চাচাশ্বশুরের নামে ধর্ষণের মামলা করেছেন গৃহবধূ।

এই তাজ্জব ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোনার মদনে। খবরটি পড়ে প্রথমে মনে হয়েছিল, এ বুঝি কোনো কল্পিত নাটকের বর্ণনা। একজন নারী, যিনি স্বামীকে ছেড়ে চাচাশ্বশুরের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্কে জড়িত হয়েছেন, তিনিই অনশন করছেন বিয়ের দাবিতে। নাট্যকারেরা এই দৃশ্যগুলো খুবই রসিকতা নিয়ে লেখেন, নির্দেশকেরা খুবই হাস্যকরভাবে তা উপস্থাপন করেন। কিন্তু এ ঘটনায় যা দেখা যাচ্ছে, তার কোনো কিছুই হাস্যকর নয়। যে দুজন মানুষ এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের আচরণের দিকে খেয়াল করুন। চাচাশ্বশুর যাঁর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন, তাঁকে এখন গ্রহণ করতে চাইছেন না। গৃহহীন গৃহবধূর ‘রোমিও’ চাচাশ্বশুরের এহেন আচরণের কোনো ব্যাখ্যা মেলে না।

অন্যদিকে গৃহবধূও ততক্ষণ পর্যন্ত চাচাশ্বশুরের কাছে বিয়ের দাবি জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর মনে হয়েছিল, তাঁর ভাগ্যে বিয়ের শিকে ছিঁড়তেও পারে। সেই আশার গুড়ে যখন বালি, তখনই তিনি চাচাশ্বশুরের নামে ধর্ষণের মামলা করেছেন।

মানুষে মানুষে সম্পর্ক কেমন হবে, সেটা সামাজিক কাঠামোই নির্ধারণ করে দেয়। সমাজের কিছু রীতিনীতি মেনে চলতে হয়। যদি কখনো বিবাহিত জীবনের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটে, তাহলে সেই পরিস্থিতিতে করণীয় কী, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এসব ক্ষেত্রে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্কগুলো নির্ধারণ হওয়া উচিত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যে সম্পর্ক হচ্ছে, তা গোপন রাখতে পারলেই তারা খুশি। জানাজানি হয়ে গেলেই কেবল সংকটের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, সামাজিক নিয়ম-নীতির বাইরের জীবনটা যাপন করার মধ্যে একধরনের রহস্যময় আকর্ষণ রয়ে গেছে মানুষের মধ্যে।

ইদানীং অনেক খবর প্রকাশিত হয়, যেখানে দেখা যায় বিয়ের দাবিতে তরুণীরা অনশন করছেন প্রেমিকের বাড়ির সামনে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে বিয়ের আগে তাঁরা স্বামী-স্ত্রীর মতো জীবনযাপনও করছেন। এরপর প্রতারিত হচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা সরাসরি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে বলে মামলা করছেন। অথচ এই সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারত ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান থাকলেই। ভালোবাসার জন্য সম্পর্কের একটা গভীরতার প্রয়োজন হয়, সেই গভীরতা হওয়ার আগেই যখন মন দেওয়া-নেওয়ার চেয়ে শরীর দেওয়া-নেওয়া মুখ্য হয়ে ওঠে এবং পরে যদি একে অপরকে অস্বীকার করা হয়, তখন বুঝতে হয়, সম্পর্কে ফাঁক রয়ে যাচ্ছে।

সমাজে এই সংকটগুলো কিন্তু দানা বাঁধছে ক্রমশ। পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক নীতিবোধ পোক্ত না হলে এই স্থূলতা থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। আর সেই রকম শঙ্কা টিকে থাকলে চাচাশ্বশুর আর ভাতিজাবধূর মতো আরও কত পার্মুটেশন-কম্বিনেশনের দায় বহন করতে হবে আমাদের, কে জানে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত