মেসিদের চিন্তা আছে, নেই

নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার পথে শুধু প্রতিপক্ষের কাছে নয়, আর্জেন্টিনাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে রেফারির কাছেও! শেষ আটে ডাচ বাধা টপকানো গেলেও আর্জেন্টিনার বড় একটা ক্ষতি করে গেছেন স্প্যানিশ রেফারি মাতেও লাহোজ।

উত্তেজনার ম্যাচে আর্জেন্টিনার ৮ ফুটবলারকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন লাহোজ। বাদ যাননি লিওনেল মেসি, কোচ লিওনেল স্কালোনি ও তাঁর সহকারী ওয়াল্টার স্যামুয়েলসও। মুক্ত হস্তে কার্ড দেখিয়ে আর্জেন্টিনা ভক্তদের মনে ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছিলেন লাহোজ। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ফুটবলার টানা দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখার নিষেধাজ্ঞায় খেলতে পারেন না পরের ম্যাচ।

ভক্তদের মনে শঙ্কা ছিল, কোয়ার্টার ফাইনালে হলুদ কার্ড দেখা মেসি যদি সেমিফাইনালেও কার্ড দেখেন তবে কি তিনি ফাইনালে খেলতে পারবেন?

 এ রেফারিং নিয়ে ম্যাচের পর  আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি ক্ষোভ নিয়ে বলেছিলেন, ‘সবাই দেখেছে কী হয়েছে। ফিফার এই ব্যাপারে ভেবে দেখা উচিত। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমন রেফারি তারা রাখতে পারে না। রেফারি তাঁর কাজে ব্যর্থ হলে তো হবে না।’

মেসির মতো এমিলিয়ানো মার্তিনেজও রেফারি লাহোজের কঠোর সমালোচনা করেছেন। মার্তিনেজ স্প্যানিশ এই রেফারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন। আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক বলেছিলেন, ‘রেফারি সবকিছু তাদের (নেদারল্যান্ডস) পক্ষে দিচ্ছিলেন। কোনো কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ১০ মিনিট দিয়েছেন। দুই থেকে তিনবার বক্সের বাইরে থেকে তাদের ফ্রি-কিক নিতে দিয়েছিলেন। তাদেরকেই গোল করতে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি ব্যর্থ রেফারি। তাঁর মতো রেফারি আমরা আর চাই না।’

আর্জেন্টিনা সমর্থকদের স্বস্তির খবর, ফিফার নিয়ম অনুযায়ী সেমিফাইনালে কার্ড দেখলেও ফাইনালে খেলতে মেসির সামনে কোনো বাধা থাকবে না, যদি শেষ চারে ক্রোয়েশিয়াকে টপকাতে পারে আর্জেন্টিনা। ফিফার নিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) হেড অব রেফারিজ আজাদ রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কোয়ার্টার ফাইনালের কার্ডের হিসাব শেষ চারে প্রযোজ্য হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বললেন, ‘আর্জেন্টিনার জন্য স্বস্তি হচ্ছে, যেসব খেলোয়াড় শুধু কোয়ার্টার ফাইনালে হলুদ কার্ড দেখেছেন, তাঁরা যদি সেমিতেও হলুদ কার্ড দেখেন, তবু ফাইনাল খেলতে তাঁদের সমস্যা হবে না যদি তাঁরা ফাইনালে উঠতে পারেন। তবে যাঁরা দ্বিতীয় রাউন্ড ও কোয়ার্টার ফাইনালে হলুদ কার্ড দেখেছেন, তাঁরা আবার সেমিফাইনালে খেলতে পারবেন না। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোয় দ্বিতীয় রাউন্ড ও কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত এক নিয়ম। সেমিফাইনাল থেকে ফাইনাল পর্যন্ত আরেক নিয়ম।’

মেসিকে নিয়ে জটিলতা না থাকলেও সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারাতে হচ্ছে দুজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। দ্বিতীয় রাউন্ড ও কোয়ার্টার ফাইনালে কার্ড দেখায় ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অভিজ্ঞ লেফটব্যাক মার্কোস আকুনিয়াকে পাচ্ছে না আলবিসেলেস্তেরা। একই কারণে রাইটব্যাক গঞ্জালো মন্তিয়েলও খেলতে পারবেন না ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে।

আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে বিশ্বকাপ ইতিহাসে রেকর্ড হলুদ ১৮ কার্ড দেখিয়ে সমালোচনার তুঙ্গে স্প্যানিশ রেফারি লাহোজ। প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি কড়া হওয়ায় ম্যাচে দুই দলের খেলোয়াড়েরা মেজাজ হারিয়েছেন বলে মনে করেন আজাদ রহমান, ‘তিনি অল্পেই রেগে যাচ্ছিলেন। রেফারিদের সাধারণত সহনশীল হতে হয়। অনেক সময় অনেক কিছু এড়িয়েও যেতে হয়।

লাহোজকে সাইড বেঞ্চেও কার্ড দিতে দেখা গেছে। এসব ক্ষেত্রে সহকারী রেফারি অভিযোগ না করা পর্যন্ত সাধারণত প্রধান রেফারি হস্তক্ষেপ করেন না। কিন্তু তাঁকে বেশি আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা গেছে। একপর্যায়ে আমরা মেসির মতো শান্ত ফুটবলারকেও মেজাজ হারাতে দেখলাম।’

নেদারল্যান্ডস ম্যাচে কার্ডের ছড়াছড়িতে রেফারিকেই কাঠগড়ায় তুলছেন বাফুফের প্রধান রেফারি আজাদ।