Ajker Patrika

ঘূর্ণিঝড় ও জলবায়ু পরিবর্তনের দায়

সম্পাদকীয়
ঘূর্ণিঝড় ও জলবায়ু পরিবর্তনের দায়

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশে কোনো নতুন বিষয় নয়। প্রতিবছরই কমবেশি এর মোকাবিলা করতে হয় আমাদের। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বসবাসের অভ্যাস হয়ে গেছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের। নানা ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনসচেতনতা গড়ে ওঠায় এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবন ও সম্পদহানির পরিমাণও কমে এসেছে। তারপরও বছরে একাধিক বার ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব হয়। এক দিন আগেও হলো।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে রূপ নিয়ে শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে। এতে কিছু কিছু অঞ্চলে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়ে।

শনিবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, মিধিলির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমনচাষিরা। ভারী বর্ষণ ও ঝোড়ো হাওয়ায় কয়েক হাজার একর জমির আমন ধান নুয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও আবার তলিয়ে গেছে পুরো খেত।

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর আমনের বীজতলা। বৃষ্টির কারণে সুন্দরবনের দুবলারচরের শুঁটকিপল্লির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, বরিশাল, কক্সবাজারের টেকনাফ, সেন্ট মার্টিনসহ বহু জায়গায় নানা ধরনের ক্ষতি হয়েছে।

মিধিলির কারণে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরা হয়তো সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পাবেন। এসবের জন্য সরকারের আলাদা বরাদ্দ থাকে। তবে ত্রাণসহায়তা বণ্টনে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও সব সময় ওঠে। এবার এর পুনরাবৃত্তি না হলে মানুষ খুশি হবে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ যখন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, সেই সময়ই জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী একটি অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘জলবায়ু-সংকট মানবসৃষ্ট। নানাভাবে আমরা পরিবেশকে নষ্ট করছি। সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো বিভিন্ন লাভজনক প্রকল্পের আওতায় এনে প্রতিনিয়ত তা ধ্বংস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে কম দায়ীরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে। আবার যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, জলবায়ু অভিযোজনে তারাই সবচেয়ে কম সক্ষমতাসম্পন্ন। তাই এই সংকট মোকাবিলায় জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

জলবায়ুবিষয়ক সমস্যা একটি বড় বৈশ্বিক সংকট। জলবায়ু মারাত্মক রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষেরই অযথার্থ, কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের কারণে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা যে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, সে কথাও আলোচনা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। কিন্তু যারা জলবায়ুর এই নেতিবাচক পরিবর্তনের জন্য দায়ী, তারা তাদের বিষাক্ত থাবা বাড়িয়েই রেখেছে। এখান থেকে বের হতে হবে

গোটা পৃথিবীকে। আর আমাদের দেশেও পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, এমন সবকিছু থেকে বিরত থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হবে। পরিবেশদূষণ কমলে জলবায়ুর পরিবর্তনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সে কথাটা আমরা যেন মনে রাখি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত