Ajker Patrika

হিসাবের মারপ্যাঁচে দুর্বল ব্যাংকও লাভে

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ২৭
হিসাবের মারপ্যাঁচে দুর্বল ব্যাংকও লাভে

করোনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তার সুযোগে ব্যাংকগুলো বিপুল অঙ্কের পরিচালন মুনাফা করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি দুর্বল ব্যাংক দ্বিগুণ মুনাফা করেছে। অনেক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রভিশন রাখতে হিমশিম খেলেও হিসাবের মারপ্যাঁচে এখন লাভজনক ব্যাংক! প্রশ্ন উঠেছে এ মুনাফার বাস্তব রূপ নিয়ে। এরই মধ্যে শীর্ষ ব্যাংকার, বিশ্লেষকেরা এটাকে কৃত্রিম মুনাফা বা মুনাফার ফানুস বলে অভিহিত করেছেন। নীতি সহায়তার ফাঁক গলে বাড়তি মুনাফা করলেও বিষয়টি এমন হতে পারে যে, মুনাফা না করেও মুনাফার জন্য কর ও ডিভিডেন্ডের খড়গ পড়বে ব্যাংকের ঘাড়ে। এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী। অবশ্য কর কম দিতে তারা প্রকৃত হিসাবে নেট মুনাফা কমিয়ে দেখায় কি না, এ দুশ্চিন্তায় আছে কর বিভাগ।

এ ব্যাপারে ব্যাংকারদের সংগঠন–এবিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকগুলো বাড়তি মুনাফা দেখিয়েছে সত্য। তবে প্রভিশনের পর কর-পরবর্তী পরিস্থিতি না দেখে বাস্তব চিত্র বোঝা যাবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো ব্যাংক দেখলাম সাড়ে তিন শ কোটি টাকার মুনাফাকে সাত শ কোটিতে নিয়ে গেছে। এত মুনাফা কীভাবে করল? এক বছরে সে কী এমন করল, ব্যালান্সশিটে কিছু নেই, তাহলে কী করল যে মুনাফা দ্বিগুণ হয়ে গেল? এটা নিঃসন্দেহে একটা ইস্যু।’

ঢাকা ব্যাংকের এমডি ও সিইও এমরানুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রথমে আমাদের ব্যাংকের হেলথ ঠিক রাখতে হবে। নীতি সহায়তার জন্য পরিচালন মুনাফাটা বেড়েছে। এর সঙ্গে অবশ্য অনেক ব্যাংক ব্যবসাও করেছে। যেমন আমি আমার ব্যাংকের কথা বলতে পারি। এ বছর আমাদের ঋণ আদায়টা ভালো হয়েছে। অন্যান্য খাতেও আমরা ভালো মুনাফা করেছি। যেসব ব্যাংকে সুশাসন আছে। যারা গ্রাহকদের প্রবৃদ্ধি চায়, তারা হয়তো ব্যাংকের ভবিষ্যতের জন্য নিজেরাই কিছু বাড়তি প্রভিশন রাখবে। এ বছর অবশ্য অনেক ব্যাংকের ঋণ প্রবাহ ভালো ছিল। প্রায় সব ব্যাংকেরই বাণিজ্য থেকেও ভালো আয় হয়েছে।’

বেশি মুনাফা হলে বেশি কর পাবে এনবিআরের আয়কর এলটিইউ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ব্যাংকগুলো বাড়তি কর না দিতে নানান দিকে সুযোগ খুঁজতে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন এলটিইউর কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে এনবিআরের এলটিইউর কমিশনার মো. ইকবাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা তাদের পরিচালন মুনাফা। তারা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রভিশন রাখবে। একটি অংশ ক্যাপিটাল গেইন হিসেবে দেখিয়ে কর ছাড় নেবে। সবকিছুর পর যেটুকু দেখাবে সেটার ওপর আমরা হয়তো কর দাবি করব।’ কর হয়তো কিছুটা বাড়বে। তবে মুনাফা যেভাবে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে সে হারে কর আদায় করা যাবে, এমনটি মনে করছেন না তিনি। এলটিইউর এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সামনে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বসে হিসাব-নিকাশ করে কত কর পাওয়া যাবে, এ রকম একটি ধারণা তাঁরা পাবেন।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদায়ী বছরে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ আগের বছরের চেয়ে ৮০ কোটি টাকা বেশি, পূবালী ব্যাংক ২০৫ কোটি টাকা বেশি, ইস্টার্ণ ব্যাংক ১৮০ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২৩৫ কোটি টাকা এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ৩২ কোটি টাকা বেশি মুনাফা করেছে। এ রকমভাবে কমবেশি প্রায় সব ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। এদের মধ্যে অনেক ব্যাংকই খেলাপি ঋণের কারণে মন্দ ব্যাংকের তালিকায় থেকেও শুধু নীতি সহায়তার কারণে মুনাফা দেখাতে পারছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত