Ajker Patrika

এক প্রতারকের গল্প

সম্পাদকীয়
এক প্রতারকের গল্প

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রতারকটিকে কি দেখেছেন আপনি? শুনেছেন তাঁর কথা? অকুতোভয়ে তিনি বর্ণনা করে গেলেন তাঁর প্রতারণার কথা। অসাধারণ অভিনয় করে বুঝিয়ে দিলেন, প্রতারণা করাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপারই নয়!

আজকের পত্রিকায় যে প্রতারককে নিয়ে খবরটি ছাপা হয়েছে, তাঁর নাম মো. জাবেদ হোসেন। বিমানবন্দরে বিদেশ সফরে যাওয়া অথবা বিদেশ থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের টার্গেট করে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এ রকম ‘প্রতিভা’ আমাদের দেশে বিরল না হলেও ক্যামেরার সামনে অকপটে নিজের প্রতারণার কথা বলার সময় তাঁর যে দেহভাষা ছিল, সেটি কি লক্ষ করেছেন? যে মানুষ জানেন যে তিনি প্রতারণা করছেন এবং এই প্রতারণার জন্য যে মানুষ বারবার জেলে যাচ্ছেন এবং জেল থেকে ফিরে আবার সক্রিয় হচ্ছেন একই রকম প্রতারণায়, তাঁকে কিন্তু বিরল প্রজাতির প্রতারক বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভালো।

খুবই কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো, ভদ্রলোকের কণ্ঠে কোনো লজ্জা নেই, অপমান বোধ নেই। তিনি যা করেছেন, তা ভালো কি মন্দ, সে প্রশ্নও হয়তো তাঁর মনে জাগে না। একসময় বিমানবন্দরে চাকরি করেছেন, সেই চাকরি থেকে অব্যাহতিও পেয়েছেন। তাই বিমানবন্দর অঞ্চলের নাড়িনক্ষত্র তাঁর জানা। তাঁর কথা থেকে জানা যায়, প্রতারক হিসেবে তিনি নতুন কেউ নন; বরং চাকরিসূত্রে যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের কেউ কেউ সে সময় থেকেই প্রতারণা করে আসছিলেন। তাঁদের মাধ্যমেই প্রতারণার হাত মকশো করেছেন মো. জাবেদ হোসেন। গোড়ার এই গলদটাই তো দূর করা হয়নি এখনো!

যাত্রীদের কাছ থেকে কী উপায়ে অর্থ আদায় করে থাকেন এই প্রতারক, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো না। প্রতিবেদনটিতে এবং প্রতারকের ভিডিওতে তা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, এই প্রতারক জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বারবার এখানেই কী করে ফিরে আসেন এবং আবার চালিয়ে যান প্রতারণা-ব্যবসা? তাঁকে যদি চিহ্নিত করাই যায়, তাহলে তাঁর গতিবিধির প্রতি কেন নজর রাখা হয় না? কী কৌশলে তিনি একই কাজ দিনের পর দিন করে যেতে পারেন?

ভাবতে অবাক লাগে, আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় এ ধরনের প্রতারকেরা দিব্যি করে খাচ্ছেন! বিমানবন্দরে বহু ধরনের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তাকর্মীদের আনাগোনা আছে। তাঁদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ধান্দাবাজি যদি চলতেই থাকে, তাহলে তাঁদের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা কী? একের পর এক ধান্দাবাজের দল তাদের ধান্দা করেই যাবে আর পুরো বিমানবন্দর অঞ্চল তাদের আওতায় চলে আসবে, এ কোনো কাজের কথা নয়।

একটা কথা বলে রাখা দরকার, পুলিশ পরিচয়েই প্রতারণা করছে এ ধরনের প্রতারকেরা। পুলিশ বাহিনী কি নিজেদের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এদের এখান থেকে দূর করে দিতে পারে না? জাবেদ হোসেনদের দিন শেষ হয়ে গেছে—এমন কোনো ঘোষণা দেওয়ার মতো শক্তি কি অর্জন করতে পারবে আমাদের বাহিনীগুলো?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত