স্বাতী চৌধুরী
গাড়িতে বসে একজন সহযাত্রীর সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হচ্ছিল। সহযাত্রী বয়সে তরুণী, বিবাহিত। পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। বর একটি প্রাইভেট ব্যাংকের অফিসার। কথা প্রসঙ্গে তরুণী জানালেন তাঁদের বিয়ের চার বছর পেরিয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পরই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন। যখন দুই মাস, সেই সময় দেশে মহামারি করোনার ভয়ংকর অবস্থা। তাঁর বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার সেবা করতে গিয়ে তিনি নিজেও আক্রান্ত হন। করোনার চিকিৎসাকালীন তাঁর অ্যাবরশন হয়। অবস্থা খুব খারাপ ছিল। চিকিৎসকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তিনি বেঁচে যান।
ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন শিগগিরই যেন আর কনসিভ না করেন, সে জন্য সতর্ক থাকতে। তাই এত দিন বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবেননি। এখন পুরোপুরি সুস্থ। বর-বউ দুজনই চান একটা সন্তান আসুক। কিন্তু চাইলেই তো আর হয় না সব সময়। সে জন্য তাঁরা মোটেই চিন্তিত নন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পরিবার-পরিজন, এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীর যন্ত্রণা। সবার এক প্রশ্ন—বাচ্চা হচ্ছে না কেন?
মাতৃত্বেই যদি নারীর পূর্ণতা হয় তাহলে পিতৃত্বেও পুরুষের পূর্ণতা কেন নয়? মাতৃত্বের জন্য কোনো নারীর হাহাকার থাকতেই পারে, কিন্তু সেটা না পেলে তাঁর জীবন অপূর্ণ, এমন প্রবাদ তো রটিয়েছে আসলে পিতৃতন্ত্র। মাতৃত্বকে মহার্ঘ করে নারীকে ঘরে আটকে রাখা সবচেয়ে সহজ। অথচ বিপরীতে পিতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা পুরুষের মনেও থাকে। কিন্তু পিতৃত্বেই পুরুষের পূর্ণতা—এ রকম কোনো প্রবাদ সমাজে নেই।
অথচ নারীর মাতৃত্বের আবেগকে পুঁজি করে আজকের দিনেও পিতৃত্বের খায়েশ বা বংশ রক্ষার জন্য নারীকেই সন্তান উৎপাদনের মেশিনরূপে ব্যবহার করছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। নিদারুণ পরিহাস হলো, পিতৃত্বের সাধ পূরণ করতে পুরুষকে কিছুই ছাড়তে হয় না, কিন্তু মাতৃত্বের জন্য নারীকে ছাড়তে হয় আরাম-আয়েশ, সাধ-আহ্লাদ, শিক্ষা, ক্যারিয়ার, প্রতিভার বিকাশ; বলা যায় মাতৃত্বের জন্য নারীকে তার সত্তাটাই বিসর্জন দিতে হয়। প্রশ্ন উঠবে, তবে কি একজন নারী মা হবেন না? বিষয় সেটা নয়। বিষয়টি হচ্ছে একজন নারী মা হবেন কি হবেন না, হলে কখন হবেন, কজন সন্তানের মা হবেন—এসব সিদ্ধান্ত সেই নারীরই নিতে পারার কথা; যা আমাদের সমাজব্যবস্থায় সম্ভব হচ্ছে না।
আমাদের সমাজে বিয়ের পরপরই গর্ভবতী না হলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কানাঘুষা ও গঞ্জনা শুরু হয়। বরও তাঁদের সঙ্গ দেয়। সন্তান যদি মেয়ে হয় তখন শুরু হয় আরেক যন্ত্রণা। পুত্রসন্তান না হওয়া পর্যন্ত গর্ভধারণ করতেই হবে! কিন্তু এই বারবার গর্ভধারণের জন্য নারীটির শরীর-মন বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। একজন নারীকে সন্তান ধারণ করতে বাধ্য করার মানে হলো তিনি স্বাধীন মানুষ নন, একটা ক্রীতদাস বা একটা কল। ক্রীতদাস বা যন্ত্রে রূপান্তরিত নারীর জীবনের পূর্ণতা কোন পথে আসে, এ প্রশ্নের কী জবাব দেবেন, যাঁরা বলেন মাতৃত্বেই পূর্ণতা? একটা সন্তান ‘মা’ ডাকলেই কেবল নারীর জীবন পূর্ণ?
জীবনে যখন কোনো অবসর, আনন্দ-বিনোদন থাকে না, সন্তানের পেট ভরানোর জন্য নিজের খাবারটাও ছেড়ে দিতে হয়, অনেকগুলো সন্তান জন্মের জন্য শরীরের সব রক্ত পানি করতে হয়, আবার সেসব সন্তান লালন-পালন করার জন্য বছরের পর বছর নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়, শীতের রাতে ভেজা কাপড়ে থাকতে হয়! যখন সন্তান জন্মদানের জন্য শিক্ষার্থী নারীকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়, কর্মজীবী নারীকে পেশা ছেড়ে দিয়ে পরমুখাপেক্ষী হতে হয়। ক্রীড়া, সংগীত, নৃত্যকলা, চিত্রকলা, লেখালেখির যোগ্যতাসম্পন্ন নারীকে তাঁর প্রতিভার গলা টিপে মেরে ফেলতে হয়! এ কেমন পূর্ণতা?
মানুষের জীবনে পূর্ণতা তো তখনই আসে, যখন তার মৌলিক সব চাহিদা পূরণ হয়। জীবনে আনন্দ-বিনোদন, মানুষের ভালোবাসা, বিশ্বাস, সম্মান ও মর্যাদাপ্রাপ্তির ভেতর দিয়ে যখন তিনি একজন পূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন, তখনই বলা যায় এ জীবন পূর্ণ। একজন নারীর জীবনে যদি এসব প্রাপ্তিযোগ না থাকে, শুধু মাতৃত্বের মিছে অহংকারে ভুলিয়ে তাঁকে তুষ্ট রাখা হবে? পুরুষ তো সারা জীবন সম্পদ, ক্ষমতা প্রতিপত্তি, নাম-যশের পেছনে ছুটে বেড়ান। উপভোগের বিপুল আয়োজন না থাকলে শুধু পিতৃত্ব লাভের মধ্যে তিনি পূর্ণতা পান না।
তবে কেন একজন নারী কেবল মাতৃত্বেই পূর্ণতা খুঁজবেন? বলছি না যে নারীর জীবনের পূর্ণতার জন্য মাতৃত্ব বিসর্জন দিতে হবে। শুধু বলতে চাই, জীবনের বহুবিধ চাহিদাকে বিসর্জন না দিয়েও মাতৃত্ব অর্জন করা যায়। সারা পৃথিবীতে এবং আমাদের দেশেও অসংখ্য নারী আছেন যাঁরা জীবনের সব ক্ষেত্রে সফলতার পাশাপাশি মা হিসেবেও সফল।
বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতির পরও গর্ভধারণের ক্ষমতা পুরুষ বা অন্য কেউ অর্জন করেনি। তাই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির ধারা অব্যাহত রাখতে নারীই সেই অনন্য ভূমিকা পালন করবেন বৈকি! তবে সেটা হওয়া উচিত শুধু নারীর ইচ্ছেতেই। যদি কোনো নারী সন্তান ধারণ করতে না চান, তবে তাঁকে পরিবার পরিকল্পনা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি নিতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে যে কথা বলা যায় সে ধারণাই রাখে না গ্রামীণ কিশোরী বধূরা। এমনকি যে নারীটি কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ছেন, পড়া শেষ না করে তিনি সন্তান নিতে চান না, এসব কথা তিনিও বলতে পারেন না। কারণ এখনো আমাদের দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত একজন নারী তখনই নিতে পারেন, যখন তাতে তাঁর বরের সম্মতি থাকে। তাহলে কোনো নারীর যদি সন্তান জন্ম দেওয়ার ইচ্ছে না হয়, তাঁর ওপর জোরজবরদস্তি চালানো কি অসভ্যতা নয়? মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? অথচ আমাদের ঘরে ঘরে এ রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। অনেক পরিবারে সন্তান জন্ম নিয়ে এমনভাবে কথা বলা হয় যেন একজন নারীকে বিয়ে করে আনা হয়েছে কেবল সন্তান জন্মদানের জন্য।
এ প্রসঙ্গে এ বছর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ক্লডিয়া গোলডিনের ‘শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণের আসল চিত্র’ গবেষণাপত্রের বিষয়টির উল্লেখ প্রাসঙ্গিক মনে করছি। ক্লডিয়া আমেরিকার গত দুই শ বছরের ইতিহাস ঘেঁটে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ ও উপার্জনের ওঠানামার অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন। তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, নারীরা কীভাবে ক্যারিয়ার ও পরিবারের মধ্যে সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করেন, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ তাঁদের মোকাবিলা করতে হয় এবং বিবাহ ও গর্ভধারণের ব্যাপারে নারীদের সিদ্ধান্ত কীভাবে প্রভাবিত হয়। ইতিহাসে উঠে এসেছে কৃষি খামারে বা কলকারখানায় নারী কাজ করলে সন্তানদের দেখাশোনা হবে না বলে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, নয়তো কর্মজীবন বা পরিবার যেকোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হয়েছে। এ চিত্রটি উন্নত দেশ আমেরিকার।
তবে পৃথিবীর অনেক অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের চিত্র তো আরও করুণ। আমাদের দেশেও মাতৃত্ব, সন্তান লালনই প্রধান কাজ বলে এখনো নারীর বাইরের কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতায়নের অন্যতম উপাদান সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার। তাই মাতৃত্ব গ্রহণ করা না-করা এবং মাতৃত্বের কারণে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া আটকানো, কোনোটাই যখন নারীর হাতে থাকে না, তখন মাতৃত্বের মহার্ঘতা নিয়েও ভাবতে হবে বৈকি।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, মহিলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
গাড়িতে বসে একজন সহযাত্রীর সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হচ্ছিল। সহযাত্রী বয়সে তরুণী, বিবাহিত। পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। বর একটি প্রাইভেট ব্যাংকের অফিসার। কথা প্রসঙ্গে তরুণী জানালেন তাঁদের বিয়ের চার বছর পেরিয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পরই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন। যখন দুই মাস, সেই সময় দেশে মহামারি করোনার ভয়ংকর অবস্থা। তাঁর বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার সেবা করতে গিয়ে তিনি নিজেও আক্রান্ত হন। করোনার চিকিৎসাকালীন তাঁর অ্যাবরশন হয়। অবস্থা খুব খারাপ ছিল। চিকিৎসকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তিনি বেঁচে যান।
ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন শিগগিরই যেন আর কনসিভ না করেন, সে জন্য সতর্ক থাকতে। তাই এত দিন বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবেননি। এখন পুরোপুরি সুস্থ। বর-বউ দুজনই চান একটা সন্তান আসুক। কিন্তু চাইলেই তো আর হয় না সব সময়। সে জন্য তাঁরা মোটেই চিন্তিত নন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পরিবার-পরিজন, এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীর যন্ত্রণা। সবার এক প্রশ্ন—বাচ্চা হচ্ছে না কেন?
মাতৃত্বেই যদি নারীর পূর্ণতা হয় তাহলে পিতৃত্বেও পুরুষের পূর্ণতা কেন নয়? মাতৃত্বের জন্য কোনো নারীর হাহাকার থাকতেই পারে, কিন্তু সেটা না পেলে তাঁর জীবন অপূর্ণ, এমন প্রবাদ তো রটিয়েছে আসলে পিতৃতন্ত্র। মাতৃত্বকে মহার্ঘ করে নারীকে ঘরে আটকে রাখা সবচেয়ে সহজ। অথচ বিপরীতে পিতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা পুরুষের মনেও থাকে। কিন্তু পিতৃত্বেই পুরুষের পূর্ণতা—এ রকম কোনো প্রবাদ সমাজে নেই।
অথচ নারীর মাতৃত্বের আবেগকে পুঁজি করে আজকের দিনেও পিতৃত্বের খায়েশ বা বংশ রক্ষার জন্য নারীকেই সন্তান উৎপাদনের মেশিনরূপে ব্যবহার করছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। নিদারুণ পরিহাস হলো, পিতৃত্বের সাধ পূরণ করতে পুরুষকে কিছুই ছাড়তে হয় না, কিন্তু মাতৃত্বের জন্য নারীকে ছাড়তে হয় আরাম-আয়েশ, সাধ-আহ্লাদ, শিক্ষা, ক্যারিয়ার, প্রতিভার বিকাশ; বলা যায় মাতৃত্বের জন্য নারীকে তার সত্তাটাই বিসর্জন দিতে হয়। প্রশ্ন উঠবে, তবে কি একজন নারী মা হবেন না? বিষয় সেটা নয়। বিষয়টি হচ্ছে একজন নারী মা হবেন কি হবেন না, হলে কখন হবেন, কজন সন্তানের মা হবেন—এসব সিদ্ধান্ত সেই নারীরই নিতে পারার কথা; যা আমাদের সমাজব্যবস্থায় সম্ভব হচ্ছে না।
আমাদের সমাজে বিয়ের পরপরই গর্ভবতী না হলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কানাঘুষা ও গঞ্জনা শুরু হয়। বরও তাঁদের সঙ্গ দেয়। সন্তান যদি মেয়ে হয় তখন শুরু হয় আরেক যন্ত্রণা। পুত্রসন্তান না হওয়া পর্যন্ত গর্ভধারণ করতেই হবে! কিন্তু এই বারবার গর্ভধারণের জন্য নারীটির শরীর-মন বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। একজন নারীকে সন্তান ধারণ করতে বাধ্য করার মানে হলো তিনি স্বাধীন মানুষ নন, একটা ক্রীতদাস বা একটা কল। ক্রীতদাস বা যন্ত্রে রূপান্তরিত নারীর জীবনের পূর্ণতা কোন পথে আসে, এ প্রশ্নের কী জবাব দেবেন, যাঁরা বলেন মাতৃত্বেই পূর্ণতা? একটা সন্তান ‘মা’ ডাকলেই কেবল নারীর জীবন পূর্ণ?
জীবনে যখন কোনো অবসর, আনন্দ-বিনোদন থাকে না, সন্তানের পেট ভরানোর জন্য নিজের খাবারটাও ছেড়ে দিতে হয়, অনেকগুলো সন্তান জন্মের জন্য শরীরের সব রক্ত পানি করতে হয়, আবার সেসব সন্তান লালন-পালন করার জন্য বছরের পর বছর নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়, শীতের রাতে ভেজা কাপড়ে থাকতে হয়! যখন সন্তান জন্মদানের জন্য শিক্ষার্থী নারীকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়, কর্মজীবী নারীকে পেশা ছেড়ে দিয়ে পরমুখাপেক্ষী হতে হয়। ক্রীড়া, সংগীত, নৃত্যকলা, চিত্রকলা, লেখালেখির যোগ্যতাসম্পন্ন নারীকে তাঁর প্রতিভার গলা টিপে মেরে ফেলতে হয়! এ কেমন পূর্ণতা?
মানুষের জীবনে পূর্ণতা তো তখনই আসে, যখন তার মৌলিক সব চাহিদা পূরণ হয়। জীবনে আনন্দ-বিনোদন, মানুষের ভালোবাসা, বিশ্বাস, সম্মান ও মর্যাদাপ্রাপ্তির ভেতর দিয়ে যখন তিনি একজন পূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন, তখনই বলা যায় এ জীবন পূর্ণ। একজন নারীর জীবনে যদি এসব প্রাপ্তিযোগ না থাকে, শুধু মাতৃত্বের মিছে অহংকারে ভুলিয়ে তাঁকে তুষ্ট রাখা হবে? পুরুষ তো সারা জীবন সম্পদ, ক্ষমতা প্রতিপত্তি, নাম-যশের পেছনে ছুটে বেড়ান। উপভোগের বিপুল আয়োজন না থাকলে শুধু পিতৃত্ব লাভের মধ্যে তিনি পূর্ণতা পান না।
তবে কেন একজন নারী কেবল মাতৃত্বেই পূর্ণতা খুঁজবেন? বলছি না যে নারীর জীবনের পূর্ণতার জন্য মাতৃত্ব বিসর্জন দিতে হবে। শুধু বলতে চাই, জীবনের বহুবিধ চাহিদাকে বিসর্জন না দিয়েও মাতৃত্ব অর্জন করা যায়। সারা পৃথিবীতে এবং আমাদের দেশেও অসংখ্য নারী আছেন যাঁরা জীবনের সব ক্ষেত্রে সফলতার পাশাপাশি মা হিসেবেও সফল।
বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতির পরও গর্ভধারণের ক্ষমতা পুরুষ বা অন্য কেউ অর্জন করেনি। তাই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির ধারা অব্যাহত রাখতে নারীই সেই অনন্য ভূমিকা পালন করবেন বৈকি! তবে সেটা হওয়া উচিত শুধু নারীর ইচ্ছেতেই। যদি কোনো নারী সন্তান ধারণ করতে না চান, তবে তাঁকে পরিবার পরিকল্পনা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি নিতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে যে কথা বলা যায় সে ধারণাই রাখে না গ্রামীণ কিশোরী বধূরা। এমনকি যে নারীটি কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ছেন, পড়া শেষ না করে তিনি সন্তান নিতে চান না, এসব কথা তিনিও বলতে পারেন না। কারণ এখনো আমাদের দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত একজন নারী তখনই নিতে পারেন, যখন তাতে তাঁর বরের সম্মতি থাকে। তাহলে কোনো নারীর যদি সন্তান জন্ম দেওয়ার ইচ্ছে না হয়, তাঁর ওপর জোরজবরদস্তি চালানো কি অসভ্যতা নয়? মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? অথচ আমাদের ঘরে ঘরে এ রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। অনেক পরিবারে সন্তান জন্ম নিয়ে এমনভাবে কথা বলা হয় যেন একজন নারীকে বিয়ে করে আনা হয়েছে কেবল সন্তান জন্মদানের জন্য।
এ প্রসঙ্গে এ বছর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ক্লডিয়া গোলডিনের ‘শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণের আসল চিত্র’ গবেষণাপত্রের বিষয়টির উল্লেখ প্রাসঙ্গিক মনে করছি। ক্লডিয়া আমেরিকার গত দুই শ বছরের ইতিহাস ঘেঁটে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ ও উপার্জনের ওঠানামার অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন। তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, নারীরা কীভাবে ক্যারিয়ার ও পরিবারের মধ্যে সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করেন, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ তাঁদের মোকাবিলা করতে হয় এবং বিবাহ ও গর্ভধারণের ব্যাপারে নারীদের সিদ্ধান্ত কীভাবে প্রভাবিত হয়। ইতিহাসে উঠে এসেছে কৃষি খামারে বা কলকারখানায় নারী কাজ করলে সন্তানদের দেখাশোনা হবে না বলে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, নয়তো কর্মজীবন বা পরিবার যেকোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হয়েছে। এ চিত্রটি উন্নত দেশ আমেরিকার।
তবে পৃথিবীর অনেক অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের চিত্র তো আরও করুণ। আমাদের দেশেও মাতৃত্ব, সন্তান লালনই প্রধান কাজ বলে এখনো নারীর বাইরের কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতায়নের অন্যতম উপাদান সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার। তাই মাতৃত্ব গ্রহণ করা না-করা এবং মাতৃত্বের কারণে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া আটকানো, কোনোটাই যখন নারীর হাতে থাকে না, তখন মাতৃত্বের মহার্ঘতা নিয়েও ভাবতে হবে বৈকি।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, মহিলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫