যে পথে এসেছে শ্রীলঙ্কার শিরোপা

কয়েক মাস আগেই নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। সেই সংকট এখনো কাটেনি তাদের। এই ক্রান্তিকালে দেশটির মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কাজ করছেন ক্রিকেটাররা। দ্বীপরাষ্ট্রে উৎসবমুখর দিন এসেছে দাসুন শানাকা-ভানুকা রাজাপক্ষেদের সৌজন্যে। ষষ্ঠবারের মতো তাঁরা জিতেছেন এশিয়া কাপ।

১৯৯৬ থেকে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব যেন নিয়েছেন দেশটির ক্রিকেটাররা। অর্জুনা রানাতুঙ্গার নেতৃত্বে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয় ছিল দলটির অভূতপূর্ব এক সাফল্য। বিশ্বকাপ জয় দিয়েই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের নতুন এক উত্থানও শুরু হয়েছিল। শুরু হয় শ্রীলঙ্কার নতুন ক্রিকেটের ব্র্যান্ডিং। সেই ব্র্যান্ডিংয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠা অরবিন্দ ডি সিলভা গতকাল হোয়াটসআপ বার্তায় এশিয়া কাপ জয়ের প্রতিক্রিয়ায় আজকের পত্রিকাকে বললেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা আমাদের জন্য অসাধারণ এক মুহূর্ত। একটি তরুণ দলের দুর্দান্ত এক জয়।’

বদলে যাওয়া শ্রীলঙ্কার অসাধারণ এই সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর ক্রিস সিলভারউড। গত এপ্রিলে কঠিন একসময়ে দলটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন ইংলিশ কোচ। তাঁর অধীনে এ পর্যন্ত সব সংস্করণ মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা ২০টি ম্যাচ খেলেছে। তাতে ৭ হারের বিপরীতে জয় ১২টি। শ্রীলঙ্কার দুর্দান্ত শুরু গত মে মাসে, বাংলাদেশ সফরে এসে।

সাকিবদের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে লঙ্কানরা জিতেছিল ১-০। এরপর দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারলেও ওয়ানডেতে ৩০ বছর 
পর সফরকারীদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ জেতে শ্রীলঙ্কা। টেস্ট সিরিজ হয়েছিল ১-১ ড্র। অস্ট্রেলিয়ার পর পাকিস্তানের বিপক্ষেও টেস্ট সিরিজ ড্র ১-১ ব্যবধানে। 
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ভালো হলেও শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপ জিতবে, টুর্নামেন্টের আগে এমনটা ভাবার লোক কমই ছিল। দুবাইয়ে এশিয়া কাপের শুরুটাও হলো তাদের হার দিয়ে। তবে টুর্নামেন্ট যত সামনে গড়িয়েছে, দলটি ততই দুর্দান্ত হয়ে উঠেছে। এখানেও ‘বাংলাদেশ’ জড়িয়ে। প্রথম পর্বে বাঁচা-মরার সেই ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েই তো শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানো।

টুর্নামেন্ট শেষে শ্রীলঙ্কাই শিরোপার হাসি হেসেছে। ক্রিকেটারদের নিষ্ঠা, একতা, একাগ্রতা, পরিশ্রম আর চেষ্টা তো আছেই। তারা দেখিয়েছে নিজেদের শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা। দাসুন শানাকার অসাধারণ নেতৃত্ব আর ছিল কোচ সিলভারউডের ব্যতিক্রম উদ্ভাবনী রণকৌশল। ডাগআউট থেকে সিলভারউডের বিশেষ সংকেত পাতানো রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। সব মিলিয়ে দলীয় পারফরম্যান্সের অনুপম প্রদর্শনী দেখিয়েছে লঙ্কানরা। যখন যাঁর প্রয়োজন হয়েছে, তিনিই এগিয়ে এসেছেন। 

ফাইনালে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে দলকে টেনে তুললেন লোয়ার মিডল অর্ডারে নামা ভানুকা রাজাপক্ষে আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। নিজেদের মধ্যে এই রসায়ন নিয়ে মাহেশ থিকসানা তাই বলেছিলেন, ‘আপনার যখন ১১ ভাই থাকবে, তখন বিশ্ব মানের খেলোয়াড় দরকার নেই।’ কথাটা আসলে বাংলাদেশ টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের জবাব দিয়েছিলেন মাহেশ। কিন্তু অবশ্যই এটি লঙ্কানদের দলীয় একতা বুঝিয়েছে।

আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী টুর্নামেন্ট লঙ্কাতেই হওয়ার কথা ছিল। দেশের সংকটে টুর্নামেন্ট শ্রীলঙ্কায় না হলেও শিরোপাটা ঘরে ফিরেছে। অথচ এ দলটি আগামী মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে বাছাই পর্ব পেরিয়ে।