Ajker Patrika

পা ও সম্মানবোধ

সম্পাদকীয়
পা ও সম্মানবোধ

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন বিচারক বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরতে বাধ্য করায় বদলি হয়েছেন। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত থাকবেন।

পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। যাঁরা এখনো শোনেননি, তাঁদের জন্য সংক্ষেপে বলে রাখি ঘটনাটি। স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়। এই বিচারকের মেয়ে কখনোই শ্রেণিকক্ষ ঝাড় দিত না। এ নিয়েই সহপাঠীদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয় তার। এরপর ফেসবুকে সহপাঠীদের কটাক্ষ করে পোস্ট লিখেছিল এই বিচারকের মেয়ে। তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। পরদিন অভিভাবক সমাবেশে বিচারক এসে তিন শিক্ষার্থী ও তাদের মায়েদের ডেকে আনেন। এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন।
এই দুঃখজনক ও অপমানকর ঘটনাটির পরিসমাপ্তি কীভাবে ঘটবে, তা সময়ই বলে দেবে। আমরা এই ঘটনার মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের অভাব ও সামাজিক অবক্ষয়ের একটা করুণ ছবি দেখতে পাচ্ছি। বিচারকেরই যদি বিচারের প্রশ্ন আসে, তাহলে বুঝতে হবে কোথাও না কোথাও একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে এবং কার কাজ কী, সে ব্যাপারে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

যেকোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ন্যূনতম রীতি-নীতি থাকে। সেগুলো মানা না হলে সেই প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা থাকে না। বড় কোনো পদ অধিকার করেন বলেই শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করার ক্ষমতা কেউ পেতে পারেন না। ক্ষমতার অধিকারী হয়ে শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করলে তাতে নিজের সম্মানই নষ্ট হয়, সে কথা অনেকেই বোঝেন না। বড় পদে অধিষ্ঠিত হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করার মানুষ বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে ভয়াবহ সময় অপেক্ষা করছে।

কাজী কাদের নেওয়াজের লেখা ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ নামের একটি কবিতার কথা প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ল। সে কবিতায় বাদশাহ আলমগীরের সন্তানের কথা রয়েছে। যে শিক্ষক মৌলভি বাদশাহর ছেলেকে পড়াতেন, তাঁর পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছিল বাদশাহর সন্তান। শিক্ষক বুঝলেন, বাদশাহ এই দৃশ্য দেখে ফেলেছেন। তাতে শুরুতে তিনি ভয় পেলেন। এরপর তিনি ভাবলেন, তিনি শিক্ষক, প্রাণ গেলেও নিজের সম্মানহানিকর কিছু করবেন না। পরদিন বাদশাহ শিক্ষককে ডেকে পাঠালেন। শিক্ষক ভাবলেন ভর্ৎসনা জুটবে কপালে। কিন্তু বাদশাহ বললেন, আমি দেখলাম, আমার ছেলে আপনার পায়ে শুধু পানি ঢালছে। সে আপনার পায়ে সযতনে হাত বুলিয়ে দিল না দেখে কষ্ট পেয়েছি আমি। শিক্ষক বুঝলেন, শুভবুদ্ধির জয় হয়েছে।

বগুড়ার ঘটনায় এর উল্টো ব্যাপার দেখতে পাচ্ছি আমরা। নিজ সন্তানের অনৈতিক কাজের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গেছেন মা এবং অন্য শিক্ষার্থীর মাকে তাঁর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন।

এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে না চাওয়া মেয়েটি কি আদৌ কোনো শিক্ষা পেল? সে কি তার আচরণে পরিবর্তন আনবে? আর বড় পদের অধিকারীরা?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লতিফ সিদ্দিকী অবরুদ্ধ, নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে

রূপপুর পরমাণু কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত