Ajker Patrika

বরিশালে উৎসবের আমেজ

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১৩: ৫৯
বরিশালে উৎসবের আমেজ

কাল খুলে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর দ্বার। এর মাধ্যমে দক্ষিণের মানুষের সৌভাগ্যের চাকাও ঘুরতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলের অন্তত ছয়টি খাতে বড় উন্নয়নের আশা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদেরা এ জন্য বরিশালকে উন্নয়নের হাব হিসেবে বিবেচনায় এনেছেন।

এই ছয় খাত হচ্ছে কৃষিশিল্প, পর্যটনশিল্প, গার্মেন্টসশিল্প, মৎস্যশিল্প, পরিবহনশিল্প ও মানবসম্পদ। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে উপকারভোগী হবে ২১ জেলার প্রায় ৫ কোটি মানুষ। এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে বরিশালে বইছে উৎসবের আমেজ।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য ও বিএম কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান খান বলেন, পদ্মা সেতুর স্বল্পমেয়াদি প্রভাব তাৎক্ষণিক পড়তে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিবিদদের সমীক্ষা অনুযায়ী পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে। এতে ওই অঞ্চলের ২১টি জেলার ৩ থেকে ৫ কোটি মানুষ সুবিধাভোগী হবে। বরিশাল হবে অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’। উদাহরণ হিসেবে কৃষিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার কথা বলেন তিনি। এতে কৃষিপণ্যের বাজার বিস্তৃত হবে, ন্যায্যমূল্য পাবেন কৃষক। পচনশীল ফল তরমুজ, পেয়ারা, আমড়া দ্রুত অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে পাড়বে। ন্যায্যমূল্য পেলে কৃষকের আরও আগ্রহ বাড়বে। এ ক্ষেত্রে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প যেমন আমড়া, পেয়ারা, তরমুজ থেকে জ্যাম, জেলি, জুস তৈরি করে বাজারজাত করলে মূল্য সংযোজন হবে।

অর্থনীতিবিদ আক্তারুজ্জামান মৎস্যশিল্পের সম্ভাবনা দেখে বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে ইলিশসহ সামুদ্রিক ও মিষ্টিপানির বহু মাছ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। জাতীয় বাজারে বরিশালের ইলিশের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এর ব্র্যান্ডিং আছে। এ জন্য নীতিমালা করে বাজার উন্মুক্ত ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে।

পর্যটনশিল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, আটঘর কুড়িয়ানা ভাসমান বাজার, সাতলার লাল শাপলা, অশ্বিনী কুমার দত্তের বাড়ি, জীবনানন্দের বাড়ি, বিএম কলেজ, শেরেবাংলার বাড়ি, দুর্গাসাগর, আড়জ আলী মাতব্বরের বাড়ি, ইয়ারউদ্দিন খলিফার মাজার, কুয়াকাটা, মনপুরা দ্বীপে পর্যটকের ঢল নামবে।

তিনি পরিবহন সেক্টরে ব্যাপক প্রসারের কথা জানিয়ে বলেন, নতুন নতুন বাস আসায় যাত্রীসেবা বাড়বে। এখন এ অঞ্চলের সব খাতে দক্ষ জনবল দরকার। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে এ অঞ্চল হবে উন্নয়নের হাব।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিক বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলের পণ্য বিশেষ করে পচনশীল ফল বাজারজাত সহজ ও ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে। পেয়ারা, আমড়া, তরমুজ, সবজি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।’

বরিশাল নগরের পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দ্রুত পাঠানো যাবে। এতে তাঁরা লাভবান হবেন।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে এখানকার অভ্যন্তরীণ মাছ যেমন ইলিশ, চিংড়ি পরিবহন সহজ হবে। বরিশালের ৪৮ ভাগ উদ্বৃত্ত থাকা মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠালে মৎস্য খাতে আয় বেড়ে যাবে।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আনিচুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল বিভাগের মৎস্য খাতে ২০ ভাগ বাড়লে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা উৎপাদন বাড়বে।

বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে গার্মেন্টশিল্পের প্রসার ঘটবে। অনেক উদ্যোক্তা এখানে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করছেন। তিনি এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনিয়োগবান্ধব অর্থনৈতিক পরিবেশ আশা করছেন।

বরিশাল বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে তাঁরা ৩৭ একর জমিতে ১১০টি প্লট করছেন। তবে এ জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেন।

বরিশালের দুর্গাসাগর দিঘি দেখভালের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এখানকার দুর্গাসাগর পাড় এবং বায়তুল আমান মসজিদ দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়বে।

কুয়াকাটা হোটেল, মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হাওলাদার বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায় রাজধানী থেকে কুয়াকাটা পৌঁছানো যাবে। পর্যটকদের ভিড়ে গরগরম হবে সৈকত। বিনিয়োগও বাড়বে।

বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হতে যাওয়ায় গ্রিনলাইন, সোহাগ, ইলিশসহ নানা ধরনের নতুন পরিবহনের বাস ঢুকছে। এতে এ খাত সমৃদ্ধ হবে।

এদিকে পদ্মা সেতু ঘিরে বরিশালে উৎসবের আমেজ বইছে। কাল শনিবার নগরে শোভাযাত্রা করবে—এমনটাই জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বরিশাল বিভাগ থেকে প্রায় ৬০টি লঞ্চযোগে ১ লাখ মানুষ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন বলে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও লঞ্চমালিক নেতা সাইদুর রহমান রিন্টু জানিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী থেকে বরিশালের পথে পথে তোরণ এবং দোয়ারিকা শিকারপুর সেতুতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত