Ajker Patrika

খুঁটির জোর কোথায়

সম্পাদকীয়
খুঁটির জোর কোথায়

‘ছাগল নাচে খুঁটির জোরে’ বলে একটি কথা চালু আছে। খুঁটির জোর না থাকলে নাকি কেউ সাধারণত নিয়মবহির্ভূত কাজ করার সাহস পায় না। পেছনে শক্তিমান কেউ থাকলে বেপরোয়া মনোভাব দেখানো সহজ হয়। এসব কথা কেন বলা হচ্ছে? কারণ বৃহস্পতিবারের আজকের পত্রিকায় ‘বিল তুলে লাপাত্তা ঠিকাদার’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি খবর।

খবরে বলা হয়েছে, দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলায় ইছামতী নদীর সাঁকোরপাড় এলাকায় ২০০০ মিটার চেইনেজে ৬০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণকাজের জন্য রংপুর বিভাগ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৬ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের ইছামতী নদীর বটতলী সাঁকোরপাড়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণকাজও শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালের জুন মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে সেতুর পাইলিং ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি।

গোয়ালডিহি ও দুবলিয়া গ্রামের সংযোগ হওয়ার কথা এই সেতুর মাধ্যমে। কিন্তু নির্মাণে অগ্রগতি না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ বিকল্প চলাচলের জন্য কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেছে। অন্যদিকে সময়মতো সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে ইছামতী নদীর দুই পারের প্রায় ৩৫-৪০ হাজার মানুষ। যাতায়াতসহ অন্যান্য কাজে, বিশেষ করে বর্ষাকালে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই নদীর তীরে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীদের হয় চরম বিপদ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজ শুরুর পরপরই তা বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিকাদারের লোকজনের আর কর্ম এলাকায় দেখা না গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি অর্ধেক বিল তুলে নিয়েছে। অবশ্য দিনাজপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) বিল পরিশোধের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি এটাও বলেছেন, অবশিষ্ট কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর এই ‘কড়া’ নির্দেশনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে, তার নিশ্চয়তা কী? আর এই ‘কড়া’ নির্দেশনাও বা কেন এত পরে দেওয়া হলো? কাজ শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রম করেছে অনেক আগেই। এত দিন কেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি বিষয়টি?

নিশ্চয়ই সেতুটি নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়া হয়েছে, তা কি তাদের সক্ষমতা-যোগ্যতা বিবেচনা করে, নাকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুঁটির জোর দেখিয়ে অনিয়মের মাধ্যমেই কাজটি পেয়েছিল? বিশেষ কারও তদবির বা সুপারিশে যদি কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে ওই ‘খুঁটি’কেও খুঁজে বের করা দরকার। এলাকার শোভাবর্ধনের জন্য নয়, সেতুটি মানুষের প্রয়োজনেই নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কারণে জনস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না।

কাজে গাফিলতি ও দায়িত্বহীন আচরণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানকে সহায়তাকারীদেরও খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত