Ajker Patrika

টেরি দ্য ফিশারম্যান

অন্নদাশঙ্কর রায়
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ১০: ০৭
টেরি দ্য ফিশারম্যান

ইউরোপ ভ্রমণের সময় ইংল্যান্ডের দক্ষিণে একটা দ্বীপে কিছুদিন ছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়। এই দ্বীপটিতেই একটা অসাধারণ ঘটনা ঘটল। সেদিন ব্রেকফাস্ট খেয়ে বেড়াতে বেরিয়েছেন, এমন সময় ঘোড়ায় টানা গাড়ি এগিয়ে এল একটা। গাড়ির চালক বললেন, ‘গাড়িতে বসবেন?’ অন্নদাশঙ্কর বললেন, ‘বেশ তো!’

কোথায় যাওয়া হচ্ছে ঠিক না করেই বের হলেন তিনি। স্যানডাউন শহরে যাওয়া হবে বলে ঠিক হলো। তবে সে দিনটি আসলে এই ঘোড়ার গাড়ির চালকের সঙ্গেই কাটল সারা দিন।

অন্নদাশঙ্কর রায় ভেবেছিলেন বাড়ি ফিরে লাঞ্চ করবেন; কিন্তু সেটা তো সম্ভব হলোই না, রাতে ডিনারের জন্যও ছাড়তে চাইছিলেন না টেরি নামের ওই ভদ্রলোক। নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন ‘ফিশারম্যান’ বলে। তিনি তাঁর বাড়িতে নিয়ে প্রথমে লবস্টার খাওয়ালেন, বিকেলে বন্ধুর বাড়িতে চায়ের সঙ্গে কাঁকড়া খাওয়ালেন, সারা দিন ধরে দ্বীপের এ-গ্রাম, সে-শহর দেখিয়ে বেড়ালেন। আর বললেন, ৬৬ বছর বয়স হলেও তাঁর শরীরে ভীমের মতো শক্তি, বক্সিংয়ে তাঁর যোগ্য কেউ নেই। জীবনের প্রায় পুরোটা সময় এই দ্বীপে কাটিয়েছেন তিনি। কিন্তু খুব ইচ্ছে দেশভ্রমণে বের হবেন। প্রশ্ন করলেন, ‘ইন্ডিয়া কত বড়? লন্ডনের চেয়েও বড়?’

স্যানডাউন শহরে পৌঁছানোর পর যার সঙ্গেই দেখা হয় টেরির, তাঁর সঙ্গেই তিনি গল্প জুড়ে দেন। তারপর সবাইকে বলেন, ‘এই ছেলেটা এখানে নতুন এসেছে। ওকে আমি শহর ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি।’

একটু পরই বোঝা গেল, টেরি এখানে একজন মাতব্বরশ্রেণির লোক। সবাই তাঁকে সমীহ করছে, এটা দেখে তিনি আনন্দ পান। সবাই যে তাঁকে সম্মান দেয়, সেটা দেখানোর জন্যই অন্নদাশঙ্করকে সঙ্গে নিয়েছিলেন তিনি। ‘দেখেছ, এরা সবাই আমাকে চেনে?’ ‘দেখেছ, এরা সবাই আমাকে ভালোবাসে!’ তারপর বলেন, ‘তুমি যখন ইন্ডিয়া ফিরে যাবে, তখন তোমার বাবাকে বলবে, টেরি কেম্পের সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছিল। টেরি হচ্ছে একজন ফিশারম্যান!’

বাবাকে সে কথা কেন জানাতে হবে, সেটা অবশ্য খুলে বলেননি টেরি!

সূত্র: অন্নদাশঙ্কর রায়, ভ্রমণকাহিনী সমগ্র, ইউরোপের চিঠি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত