সাজিদ মোহন
মানুষ এখন আর চিঠি লেখে না। চিঠি ব্যক্তিমানুষের প্রকাশ। মানুষ তার নিঃসঙ্গতা, অনুভূতি, মনোভাব অন্যের সঙ্গে বিনিময় করতে চায়। অথচ একটা সময় মানুষ চিঠি লিখত, লিখত প্রেমপত্র। কয়েক দিন আগে এমনই একটি পুরোনো চিঠির দেখা মিলেছে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত চিহ্নমেলায়। কলকাতার ফুটপাতের বইয়ের দোকানে বছর দেড়েক আগে একটি পুরোনো বইয়ের ভেতরে চিঠিখানা আবিষ্কার করেন সংগ্রাহক উজ্জ্বল সরদার। চিহ্নমেলায় উজ্জ্বল এনেছিলেন সেই চিঠি।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট রাত ১২টায় রাজশাহীতে বসে এক তরুণ লিখেছেন কলকাতার এক তরুণীকে। চিঠিতে দুজনের কারোরই নাম নেই। সম্বোধনের জায়গায় মেয়েটার ছবি। একইভাবে ছয় পাতার চিঠির শেষে নাম না লিখে ‘ইতি’র পরে ছেলেটা নিজের ছবি দিয়েছেন। প্রেমপত্রজুড়ে উঠে এসেছে ১৯৪৭ সালের বিয়োগান্ত গল্প। দেশভাগের কারণে মেয়েটা রয়ে গেছেন কলকাতায় আর ছেলেটা রাজশাহীতে।
এককালে সচিত্র প্রেমপত্র, চিঠি চালাচালির বই বিক্রি হতো রেলস্টেশন, ফুটপাতের দোকানে। পত্র ও প্রেমপত্রের যুগ শেষ। এখন ই-মেইল, হোয়াটস অ্যাপ, মেসেঞ্জারের যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যোগাযোগের অনেক সহজ ব্যবস্থা করে দিলেও চিঠির আবেদন ফুরিয়ে যাওয়ার নয়। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘বাছুর কাছে গেলে গরুর বাঁটে আপনি দুধ জুগিয়ে আসে, তেমনি মনের বিশেষ বিশেষ রস কেবল বিশেষ বিশেষ উত্তেজনায় আপনি সঞ্চারিত হয়, অন্য উপায়ে হওয়ার জো নেই। চিঠি মনের যে রস দোহন করতে পারে, কথা কিংবা প্রবন্ধ কখনোই তা পারে না।’
চিঠি লেখাকে সাহিত্যের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের দিকপালেরা। চিঠির মাধ্যমে গজিয়ে উঠত বন্ধুত্ব। চোখে না দেখেও মাসের পর মাস শুধু কাগজে লেখা অক্ষরেই বেঁচে থাকত সম্পর্ক। ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীর কাছে লেখা রবীন্দ্রনাথের ‘ছিন্নপত্র’ উঁচুদরের সাহিত্য। বালিকা কন্যা ইন্দিরা গান্ধীর উদ্দেশে রচিত জওহরলাল নেহরুর পত্রাবলির বৃহৎ সংকলন ‘লেটারস ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার’ ইতিহাসসমৃদ্ধ। বুদ্ধদেব গুহর পত্রোপন্যাস ‘সবিনয় নিবেদন’ অসাধারণ গ্রন্থ। নজরুলের পত্রোপন্যাস ‘বাঁধনহারা’। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন ‘পেনুর চিঠি’। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গল্প ‘স্ত্রীর পত্র’।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম চিঠি কাব্য মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’। আবার দেখি নিমাই ভট্টাচার্যের ‘মেম সাহেব’ উপন্যাস শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা চিঠি। আমাদের গৌরবের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ‘একাত্তরের চিঠি’তে।
পৃথিবীর ক্ষুদ্র চিঠিটি লিখেছিলেন ভিক্তর হুগো। তাঁর উপন্যাস ‘লা মিজারেবল’ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রকাশকের কাছে বইয়ের কাটতি জানতে চিঠি দিয়েছিলেন শুধু একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে। প্রকাশক একটি আশ্চর্যবোধক চিহ্ন দিয়ে চিঠির জবাব দিয়েছিলেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চিঠিটি লিখেছেন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের একজন নারী তাঁর প্রেমিককে। ৩ হাজার ফুট লম্বা চিঠি লিখতে সময় লেগেছিল এক মাস।
নেপোলিয়ন, উইনস্টন চার্চিল, বিটোফেন, মোৎসার্ট, জন কিটস, অস্কার ওয়াইল্ড, কাফকাসহ আরও বিখ্যাত মানুষদের প্রেমপত্রের গল্প এখনো ফিরে ফিরে আসে আলোচনায়। ফ্যানি ব্রনকে লেখা জন কিটসের প্রেমপত্রগুলো অমর, অম্লান। বাংলা কবিতা ও গান ভরে আছে চিঠির নানান প্রসঙ্গে। চিঠি নিয়ে কবি মহাদেব সাহার বিখ্যাত কবিতা ‘চিঠি’।
‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও,
খামে ভরে তুলে দিও
আঙুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়,
বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও,
তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।...’
কবি হেলাল হাফিজ ‘প্রস্থান’ কবিতায় লিখেছেন—
‘এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো।
এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তালপাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে পত্র দিয়ো।
ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত
ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো।...’
১৯৪৭ সালে রাজশাহীতে বসে কলকাতার প্রেমিকাকে লেখা প্রেমিকের চিঠির বয়স এখন ৭৫। চিঠির প্রেরক ও প্রাপকের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বেঁচে থাকলেও তাঁদের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। যদি খুঁজে পাওয়া যেত, যদি জানা যেত, সীমানার কাঁটাতার পেরিয়ে দুটি হৃদয় কী এক হতে পেরেছিল!
লেখক: শিশুসাহিত্যিক
মানুষ এখন আর চিঠি লেখে না। চিঠি ব্যক্তিমানুষের প্রকাশ। মানুষ তার নিঃসঙ্গতা, অনুভূতি, মনোভাব অন্যের সঙ্গে বিনিময় করতে চায়। অথচ একটা সময় মানুষ চিঠি লিখত, লিখত প্রেমপত্র। কয়েক দিন আগে এমনই একটি পুরোনো চিঠির দেখা মিলেছে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত চিহ্নমেলায়। কলকাতার ফুটপাতের বইয়ের দোকানে বছর দেড়েক আগে একটি পুরোনো বইয়ের ভেতরে চিঠিখানা আবিষ্কার করেন সংগ্রাহক উজ্জ্বল সরদার। চিহ্নমেলায় উজ্জ্বল এনেছিলেন সেই চিঠি।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট রাত ১২টায় রাজশাহীতে বসে এক তরুণ লিখেছেন কলকাতার এক তরুণীকে। চিঠিতে দুজনের কারোরই নাম নেই। সম্বোধনের জায়গায় মেয়েটার ছবি। একইভাবে ছয় পাতার চিঠির শেষে নাম না লিখে ‘ইতি’র পরে ছেলেটা নিজের ছবি দিয়েছেন। প্রেমপত্রজুড়ে উঠে এসেছে ১৯৪৭ সালের বিয়োগান্ত গল্প। দেশভাগের কারণে মেয়েটা রয়ে গেছেন কলকাতায় আর ছেলেটা রাজশাহীতে।
এককালে সচিত্র প্রেমপত্র, চিঠি চালাচালির বই বিক্রি হতো রেলস্টেশন, ফুটপাতের দোকানে। পত্র ও প্রেমপত্রের যুগ শেষ। এখন ই-মেইল, হোয়াটস অ্যাপ, মেসেঞ্জারের যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যোগাযোগের অনেক সহজ ব্যবস্থা করে দিলেও চিঠির আবেদন ফুরিয়ে যাওয়ার নয়। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘বাছুর কাছে গেলে গরুর বাঁটে আপনি দুধ জুগিয়ে আসে, তেমনি মনের বিশেষ বিশেষ রস কেবল বিশেষ বিশেষ উত্তেজনায় আপনি সঞ্চারিত হয়, অন্য উপায়ে হওয়ার জো নেই। চিঠি মনের যে রস দোহন করতে পারে, কথা কিংবা প্রবন্ধ কখনোই তা পারে না।’
চিঠি লেখাকে সাহিত্যের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের দিকপালেরা। চিঠির মাধ্যমে গজিয়ে উঠত বন্ধুত্ব। চোখে না দেখেও মাসের পর মাস শুধু কাগজে লেখা অক্ষরেই বেঁচে থাকত সম্পর্ক। ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীর কাছে লেখা রবীন্দ্রনাথের ‘ছিন্নপত্র’ উঁচুদরের সাহিত্য। বালিকা কন্যা ইন্দিরা গান্ধীর উদ্দেশে রচিত জওহরলাল নেহরুর পত্রাবলির বৃহৎ সংকলন ‘লেটারস ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার’ ইতিহাসসমৃদ্ধ। বুদ্ধদেব গুহর পত্রোপন্যাস ‘সবিনয় নিবেদন’ অসাধারণ গ্রন্থ। নজরুলের পত্রোপন্যাস ‘বাঁধনহারা’। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন ‘পেনুর চিঠি’। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গল্প ‘স্ত্রীর পত্র’।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম চিঠি কাব্য মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’। আবার দেখি নিমাই ভট্টাচার্যের ‘মেম সাহেব’ উপন্যাস শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা চিঠি। আমাদের গৌরবের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ‘একাত্তরের চিঠি’তে।
পৃথিবীর ক্ষুদ্র চিঠিটি লিখেছিলেন ভিক্তর হুগো। তাঁর উপন্যাস ‘লা মিজারেবল’ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রকাশকের কাছে বইয়ের কাটতি জানতে চিঠি দিয়েছিলেন শুধু একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে। প্রকাশক একটি আশ্চর্যবোধক চিহ্ন দিয়ে চিঠির জবাব দিয়েছিলেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চিঠিটি লিখেছেন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের একজন নারী তাঁর প্রেমিককে। ৩ হাজার ফুট লম্বা চিঠি লিখতে সময় লেগেছিল এক মাস।
নেপোলিয়ন, উইনস্টন চার্চিল, বিটোফেন, মোৎসার্ট, জন কিটস, অস্কার ওয়াইল্ড, কাফকাসহ আরও বিখ্যাত মানুষদের প্রেমপত্রের গল্প এখনো ফিরে ফিরে আসে আলোচনায়। ফ্যানি ব্রনকে লেখা জন কিটসের প্রেমপত্রগুলো অমর, অম্লান। বাংলা কবিতা ও গান ভরে আছে চিঠির নানান প্রসঙ্গে। চিঠি নিয়ে কবি মহাদেব সাহার বিখ্যাত কবিতা ‘চিঠি’।
‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও,
খামে ভরে তুলে দিও
আঙুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়,
বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও,
তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।...’
কবি হেলাল হাফিজ ‘প্রস্থান’ কবিতায় লিখেছেন—
‘এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো।
এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তালপাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে পত্র দিয়ো।
ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত
ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো।...’
১৯৪৭ সালে রাজশাহীতে বসে কলকাতার প্রেমিকাকে লেখা প্রেমিকের চিঠির বয়স এখন ৭৫। চিঠির প্রেরক ও প্রাপকের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বেঁচে থাকলেও তাঁদের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। যদি খুঁজে পাওয়া যেত, যদি জানা যেত, সীমানার কাঁটাতার পেরিয়ে দুটি হৃদয় কী এক হতে পেরেছিল!
লেখক: শিশুসাহিত্যিক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪