Ajker Patrika

যুদ্ধের মাঠে ছবি আঁকা

সম্পাদকীয়
যুদ্ধের মাঠে ছবি আঁকা

যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্যই মেলাঘরে এসেছেন শাহাবুদ্দিন। দেশটাকে স্বাধীন করতে হবে। মেলাঘরে তাঁদের গ্রুপকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন স্বয়ং সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ। ফরিদপুরের কর্নেল শওকত আলী তখন ছিলেন ক্যাপ্টেন। তিনি জেনে গিয়েছিলেন, শাহাবুদ্দিন আর্ট কলেজের ছাত্র। কিন্তু কথাটা অনেকেই বিশ্বাস করত না।

ক্যাপ্টেন শওকত ডাকলেন শাহাবুদ্দিনকে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি নাকি ছবিটবি আঁকো?’

শাহাবুদ্দিন মাথা নেড়ে জানালেন, কথাটা সত্য। এবার ক্যাপ্টেন শওকত কিছু টাকা দিলেন শাহাবুদ্দিনের হাতে। বললেন, ‘এখানে কিছু পাবে না। আগরতলায় যাও, সেখানে গিয়ে রংটং কিনে আনো।’

শাহাবুদ্দিন আগরতলায় গেলেন। যুদ্ধ তো করবেনই, এ জন্যই তো অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এর ফাঁকে ছবি আঁকা মন্দ নয়। প্রথমে কিনতে হবে কাগজ। কী কাগজ কেনা যায়? অনেক ভেবে তিনি দুই আনা দিয়ে কিছু ক্যালেন্ডার কিনলেন। সেখানে দুর্গা আর কালী দেবীর ছবি। এ ধরনের ক্যালেন্ডার কিনতে দেখে তো অনেকেই অবাক! আসলে ছবির উল্টোপাশের সাদা কাগজে ছবি আঁকবেন শাহাবুদ্দিন। এরপর কিনলেন আইব্রো পেনসিল আর কাজল। ব্যস, ছবি আঁকার সরঞ্জাম চলে এল হাতে।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ হতো সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এরপর বিরতি ২টা থেকে ৬টা। বিরতির সময় কিংবা দিনের ট্রেনিং শেষ হলে ক্যালেন্ডারগুলো উঠে আসত শাহাবুদ্দিনের টেবিলে। তিনি শুরু করতেন আঁকাআঁকি। অবশ্য ক্যালেন্ডারে আঁকতেন মূল ছবিটা। এর আগে আঁকতেন রুলটানা খাতায়। প্রশিক্ষণের ছবি, গেরিলাযুদ্ধের ছবি। বঙ্গবন্ধুর পোর্ট্রেট।
আঁকা হলে ছবি দেখার সুযোগ পেলেন মেলাঘরের ১ হাজার ২০০ মুক্তিযোদ্ধা। সবাই বাহবা দিলেন শাহাবুদ্দিনকে। এরপর একটা প্রদর্শনীও হয়ে গেল ছবির। সেই গেরিলা দলে ছিলেন শিল্পী আজম খানও। আজম খানের গান আর শাহাবুদ্দিনের ছবি মুক্তিযোদ্ধাদের চাঙা রাখল। তখন সবাই অস্ত্রের জন্য অপেক্ষা করছেন। কয়েক দিন পরেই শুরু হবে শত্রুর প্রতি আক্রমণ। 

সূত্র: বাংলানিউজ ২৪ ডট কম, ২০১৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত