Ajker Patrika

ছেঁড়া জার্সি যেভাবে ঠাঁই পেল মিলানের জাদুঘরে

হাসনাত শোয়েব, ঢাকা
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৩৭
ছেঁড়া জার্সি যেভাবে ঠাঁই পেল মিলানের জাদুঘরে

‘কিছু মানুষ মনে করে ফুটবল হলো জীবন-মরণ সমস্যা। তাদের এ আচরণ আমার পছন্দ নয়। তাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি, এটা তার চেয়ে বেশি কিছু।’ লিভারপুল কিংবদন্তি বিল শাঙ্কলির এই উক্তিটি কখনো বাড়াবাড়ি বলে মনে হতে পারে। তবে একটু গভীরভাবে দেখলে রূপক অর্থে এই উক্তিটি আরও অনেক কিছুই বলছে। ফুটবল অনেক সময় খেলার চেয়েও বড় কিছু হয়ে উঠতে পারে। যেমনটা হয়েছে উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ সুদানের ছোট্ট এক গ্রামের একটি শিশুকে ঘিরে। যেখানে শিশু, জার্সি ও ফুটবল প্রেম মিলিয়ে মঞ্চায়িত হয়েছে অনন্যসাধারণ এক মানবিক এক গল্পের।

সম্প্রতি ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান নিজেদের ১২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিশেষ প্রকল্পের কথা জানিয়েছে। যেখানে ইউনিসেফের সঙ্গে মিলে তারা দক্ষিণ সুদানের আর্থসামাজিক ও শিশুদের উন্নয়নে এই প্রকল্প পরিচালনা করবে। তবে মিলানের এই উদ্যোগের ভিত আরও পুরোনো।

যুদ্ধের ছবি তোলার জন্য বিখ্যাত ড্যানিশ ফটোগ্রাফার জান গ্রারুপ দক্ষিণ সুদানে অবস্থান করছিলেন তখন। সেখানে বন্যার মারাত্মক ভয়াবহ প্রভাবগুলো নথিভুক্ত করার কাজ করছিলেন তিনি। এই বন্যায় হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে এবং তাদের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট মারাত্মক দেখা দেয়। সেখানেই কানাল নামক এক গ্রামে এসি মিলানের ছেঁড়া জার্সি পরা এক শিশুর দেখা পান জান। বারবার পরিধানের কারণে সেই জার্সিটি একেবারে ছিঁড়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি জার্সিটির ছেঁড়া স্থানগুলোয় বারবার সুই-সুতো দিয়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টাও ছিল স্পষ্ট। নিজেও এসি মিলানের সমর্থক হওয়ায় জার্সির এমন দশা ড্যানিশ এই ফটোগ্রাফারকেও আবেগাপ্লুত করে। এরপর তাঁর কাছে থাকা মিলানের নতুন একটি জার্সি সেই শিশুকে দিয়ে ছেঁড়া জার্সিটি নিজে নিয়ে নেন জান। পরে সেই জার্সিটি মিলানকে দান করে দেন তিনি।

দক্ষিণ সুদানের সেই ছেঁড়া জার্সি এখন মিলানের জাদুঘরে। নিজের সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে জান বলেন, ‘আমি খুব গভীরভাবে একজন ফুটবল ভক্ত। বিশ্বব্যাপী আমি অসংখ্যবার শিশুদের দেখেছি যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও দুর্যোগ থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে রাখতে ফুটবল এবং অন্য খেলাকে ব্যবহার করতে। তাই এসি মিলানের মতো এত বড় ক্লাবকে এ ধরনের উদ্যোগে জড়িত হতে দেখে খুব আনন্দিত।’

এসি মিলান কর্তৃপক্ষ জার্সিটিকে বিশ্বব্যাপী সমর্থকদের ‘একাত্মতা, আবেগ ও নিবেদন’র প্রতীকস্বরূপ জানের কাছ থেকে গ্রহণ করে। বর্তমানে সেই জার্সির ঠাঁই হয়েছে মিলানের জাদুঘর ‘মন্ডো মিলানে’। যেখানে জার্সির বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে দক্ষিণ সুদানে ইউনিসেফের উদ্যোগে সহায়তার জন্যও এই জার্সি ব্যবহার করা হচ্ছে।

কানাল গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেঁড়া এই জার্সি এভাবেই জড়িয়ে গেছে সেখানকার মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে। আর ছেঁড়া জার্সির উত্থানই বলে দেয়, কেন লোকে ফুটবলকে সুন্দর খেলা বলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত