Ajker Patrika

টোলের খড়্গ নামছে সব মহাসড়কে

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৪৪
টোলের খড়্গ নামছে সব মহাসড়কে

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের সঙ্গে তাল মেলাতে যখন সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে, সে অবস্থায় খরচের খাতায় যোগ হতে যাচ্ছে নতুন টোল। সড়কের রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য খরচ ওঠানোর জন্য মহাসড়ক থেকে টোল আদায় শুরু করবে সরকার। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ-সংক্রান্ত পরিকল্পনা তৈরি করে সেটি ওই বিভাগের পরিকল্পনা অনুবিভাগে পাঠিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-সিলেট—এই চার মহাসড়ক থেকে টোল আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে ছয় লেন ও আট লেনের মহাসড়কে টোল আরোপ করা হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, মহাসড়কে টোল আদায়ের বিষয়ে গত ৩০ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। সেখানে সড়ক বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেসব সড়ক নতুন হচ্ছে সেগুলোর কাজ শেষ হলে তা থেকে আগে টোল আদায় প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই বিষয়ে এখনো পরিকল্পনা চলছে।

নতুন করে মহাসড়কগুলোকে টোলের আওতায় আনা হলে পরিবহন খরচ বাড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা। তাঁদের মতে, এর ফলে সাধারণ মানুষের খরচের বোঝা আরও ভারী হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, টোল ধার্য করা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন মালিকেরা। কারণ তাঁদের গাড়িগুলোই এইসব মহাসড়কে চলবে। এর একটি বড় ধরনের প্রভাব আছে। তিনি অবশ্য বলেন, যদি সরকার তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসে টোল নির্ধারণ ও ভাড়া সমন্বয় করে তাহলে হয়তো ইতিবাচক থাকবে।

মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হাজি আবুল কালাম বলেন, এই টোলের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। কারণ এটি ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হবে। তিনি বলেন, বাসের ভাড়া যদি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকে তাহলে পরিবহন ব্যবসাও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের তিনটি মহাসড়কে ভিন্ন ভিন্ন হারে টোল আদায় করা হচ্ছে। নতুন করে টোল আরোপের ক্ষেত্রে ওই তিনটি মহাসড়কের টোল-হার বিবেচনায় রাখা হবে। সে ক্ষেত্রে সড়ক বিভাগ অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে চায়।

সড়ক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মহাসড়কগুলোর কোন কোন জায়গায়, কয় ধাপে, কী পরিমাণ টোল আদায় করা হবে, সেসব বিষয়ে কাজ চূড়ান্ত করার পর তাঁরা মাঠপর্যায়ের কাজে হাত দিতে চান। টোল বাবদ আদায় করা টাকা সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারকাজে ব্যবহৃত হবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের টোল ও এক্সেল শাখার এক কর্মকর্তা জানান, তাঁদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি এসেছে। তবে এখানে পরিকল্পনার কিছু বিষয় আছে। এটি মহাসড়কের পরিকল্পনা অনুবিভাগ প্রক্রিয়া করছে। তিনি বলেন, সড়কে টোল আদায় এখনো আছে। এক্সপ্রেসওয়ে ও পাঁচটি মহাসড়ক থেকে টোল আদায় হচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে আছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, নলকা-হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহসড়কের ৫০ কিলোমিটার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর-শেরপুর অংশে ৭৪ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম পোর্ট অ্যাকসেস রোডের ১২ কিলোমিটার এবং মানিকগঞ্জের ধাতুলিয়া সড়ক।

ওই কর্মকর্তা জানান, মহাসড়কে টোল আরোপের ক্ষেত্রে এই চার সড়কের টোলের হার বিবেচনায় রাখা হবে। তবে এখানে অনেক যাচাই-বাছাইয়ের বিষয় আছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে হবে। এটি এখনো সময় সাপেক্ষ বিষয়।

সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. জাকির হোসেন জানান, তাঁরা একটি সভা করেছেন। সেখানে কোন কোন সড়ক থেকে টোল আদায় করা হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি সড়ক থেকে টোল আদায় হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এ বিষয়ে আরও একটা সভা হবে। সড়ক বিভাগ থেকে তালিকা দিলে সেটি নিয়ে কাজ করা হবে। তাঁরা তালিকা তৈরি করছেন।

গত বছরের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক মহাসড়কে টোল আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে অবকাঠামো নির্মাণ করছে। তাই আঞ্চলিক মহাসড়কে ন্যূনতম হারে হলেও টোল আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে মানুষের মধ্যে টোল দেওয়ার সংস্কৃতিও গড়ে উঠবে।  প্রধানমন্ত্রী এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় মহাসড়ক থেকে টোল আদায়ের তাগিদ দিয়েছিলেন।
জানা যায়, সরকার এরই মধ্যে ‘খসড়া টোল নীতিমালা-২০২৩ (সংশোধিত)’ প্রস্তুত করে মতামতের জন্য সেটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ওয়েবসাইটে রেখেছে।   
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় দেশে মোট ৯৯২টি সড়ক আছে যার দৈর্ঘ্য ২২ হাজার ৪৭৬ দশমিক ২৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১১০টি জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৯৯০ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার, ১৪৭টি আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৮৯৭ দশমিক ৭১ কিলোমিটার এবং ৭৩৫টি জেলা সড়কের দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার ৫৮৭ দশমিক ৮২ কিলোমিটার।

সূত্রমতে, প্রাথমিকভাবে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে টোল আদায় শুরু হবে। এটি চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এর কাজ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে। এই মহাসড়কে সার্ভিস রোড বা বিকল্প সড়ক রাখা হয়েছে।

যোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহাসড়কে টোল আদায়ের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো আরোপ করা হয় অপেক্ষাকৃত দ্রুতগামী ও আধুনিক সুবিধা-সংবলিত বিকল্প সড়কগুলোর ক্ষেত্রে। এ কারণে কেউ বাড়তি সুবিধা চাইলে তিনি টোল দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারেন। আবার যাঁর বাড়তি সুবিধার প্রয়োজন নেই তিনি টোল ছাড়া মূল সড়কে যাতায়াত করেন। কিন্তু বাংলাদেশে মহাসড়কের পাশে বিকল্প সড়ক নেই। এমনকি বিকল্প সড়ক করার জায়গাও নেই। এ ক্ষেত্রে টোল আরোপ করা হলে সেটি একক সড়কের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। কিন্তু বাংলাদেশে বেশির ভাগ মহাসড়কে এখনো এমন বিকল্প সড়ক নেই। এমনকি বিকল্প সড়ক করার জায়গাও নেই।

সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এটাকে সামষ্টিকভাবে চিন্তা করতে হবে। শুধু বাণিজ্যিক যানবাহন যেগুলো আছে তাদের থেকে টোল আদায়ের আগে স্থানীয় জনগণের কথা ভাবতে হব। তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য যারা মহাসড়কের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য বিকল্প কিছু মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ সামনে আনতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত