Ajker Patrika

পঞ্চগড়ে পাথরের জাদুঘর প্রত্নতত্ত্বের কথা বলে

হোসেন রায়হান, পঞ্চগড়
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, ১৩: ৫২
পঞ্চগড়ে পাথরের জাদুঘর  প্রত্নতত্ত্বের কথা বলে

কক্ষের ভেতর রাখা বিভিন্ন শিলাপাথর। এসবের আকৃতিও ভিন্ন। কোনোটি গোল, কোনোটি লম্বা। অনেক পাথরে আঁকা রয়েছে সাংকেতিক চিহ্ন। নদীতে পাওয়া দুটি ডিঙি নৌকাও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে কক্ষে। এমন চিত্র দেখা যাবে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে অবস্থিত জাদুঘরে ঢুকলে। এটি আসলে একটি পাথরের জাদুঘর। কেউ কেউ একে রকস মিউজিয়াম বলে অভিহিত করেন।

১৯৯৭ সালে ওই কলেজের অভ্যন্তরে তৎকালীন অধ্যক্ষ নাজমুল হক গড়ে তোলেন জাদুঘরটি। এই অঞ্চলের ভূ-বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধান, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক এই জাদুঘর স্থাপন করা হয়।

জাদুঘরের বাইরে রাখা হয়েছে বড় আকারের নানান পাথর। প্রতিটি পাথরের নাম ও সংগ্রহের পদ্ধতি লেখা রয়েছে সাইনবোর্ডে। জাদুঘরের ভেতর উন্মুক্ত গ্যালারিতে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় পাথর। এখানে একটি জাতিতাত্ত্বিক সংগ্রহশালাও স্থাপন করা হয়েছে। এতে রয়েছে পঞ্চগড় অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং ৩০০ থেকে ২ হাজার বছরের পুরোনো ইমারতের ইট, পাথরের মূর্তি ও পোড়ামাটির নকশা।

স্থানীয় লোকজন জানান, পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত কয়েকটি বড় আকৃতির পাথরে নিয়মিত পূজা নিবেদন করা হতো। কয়েকটি পাথর সম্পর্কে প্রচলিত ছিল অলৌকিক কাহিনি। একটি পাথরের নাম ছিল ‘পাথর ঠাকুর’। বড় কয়েকটি পাথর সম্পর্কে স্থানীয় মানুষের ছিল খুব ভীতি। পাথর মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছে, এমন কথা প্রচলিত ছিল স্থানীয় অধিবাসীদের মনে।

পঞ্চগড় রকস মিউজিয়ামে রক্ষিত কোনো কোনো পাথরে রয়েছে নান্দনিক কারুকাজ। একটি পাথরে খোদিত রয়েছে ‘তীর-ধনুক’ ও দেবীর চোখের চিত্র। একটিতে খোদিত রয়েছে ‘শ্রী’ শব্দটি, অন্য একটি পাথরে খোদাই করা আছে তিব্বতি-চায়নিজ বর্ণমালা।

পাথরগুলোর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, পঞ্চগড় অঞ্চলে নব্য প্রস্তরযুগের সংস্কৃতি ও জীবনাচরণ ভালোভাবেই বিস্তার লাভ করেছিল।

কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শামস্ রায়হান হৃদি বলেন, ‘জেলার প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে এই রকস মিউজিয়াম একটি গবেষণার কেন্দ্র হতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি প্রয়োজন।’

পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মাইনুর রহমান বলেন, ‘সবার জন্য উন্মুক্ত এই জাদুঘর দেখতে প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন আসছে। কিন্তু এটি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা তেমন দেখা যায় না। মিউজিয়ামটি ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত