বিপিএলের ১০ বছরে খেলার চেয়ে ধুলাই বেশি

তিন দিন আগে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে তামিম ইকবাল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে সংবাদকর্মীদের টানা নেতিবাচক প্রশ্নে বিরক্তই হয়ে গেলেন। বাঁহাতি ওপেনার টুর্নামেন্টগুলোর ইতিবাচক দিক তুলে ধরার আহ্বান জানালেন। ১০ বছরে পা দেওয়া বিপিএলে খেলার চেয়ে ধুলা এত বেশি—ইতিবাচক দিকগুলো তাতে এমনিই আড়াল হয়ে যায়।

প্রচুর নেতিবাচক আলোচনা আছে বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো নিয়েও। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) নিয়ে কম নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে গত ১৪ বছরে? সব বিতর্ক ছাপিয়ে আইপিএল এখন এমন একটা মানদণ্ড তৈরি করেছে, সেটি নিয়ে প্রশংসা করতে বাধ্য হচ্ছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো। বিপিএল নিয়ে যদি ইতিবাচক দিকের পাল্লা ভারী থাকে, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম কেন সেটি তুলে ধরবে না।

এবার বিপিএলে বেশ শোরগোল হচ্ছে ডিসিশান রিভিউ সিস্টেম বা ডিআরএস না থাকায়। বিসিবি অবশ্য জানিয়েছে, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে ডিআরএসের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু মহামারিতে পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে গেছে, শেষ পর্যন্ত ডিআরএস আনতে পারছে না তারা। বিসিবি এখানে নিরুপায় হলেও গত ১০ বছরে বিপিএলকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিশ্চয়ই ছিল।

গত এক দশকে সুশৃঙ্খল, সৃজনশীল, উদ্ভাবনী উদ্যোগ আর পেশাদারির সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়ে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের টুর্নামেন্ট হিসেবে নিজেকে চেনাতে পারেনি বিপিএল। বিপিএলের লোগোই পরিবর্তন হয়েছে একাধিকবার। এখন পর্যন্ত বিপিএলের একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইটই দেখা যায়নি, যেটি বিশ্বের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বিরল। লোগো ও ওয়েবসাইট নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, ‘লোগো কিন্তু বেশি বার বদলায়নি। বর্তমান লোগোটাই আমরা চালিয়ে নেব। যদি নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়, সেটা পরে। আপাতত এটাই যাবে। আর আমাদের ওয়েবসাইট ছিল। বিপিএলের সময় আলাদা ওয়েবসাইট করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের যে মূল ওয়েবসাইট ছিল সেখানে টেকনিক্যাল কিছু সমস্যার কারণে একসঙ্গে করা হয়নি। এখন থেকে এটা একসঙ্গেই হবে।’

ঘন ঘন টুর্নামেন্টের ধরন বদলানো (স্বল্প মেয়াদে ফ্র্যাঞ্চাইজি, দীর্ঘ মেয়াদে ফ্র্যাঞ্চাইজি, কোনো বছর ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিকই নয়) নিয়ে আলোচনাটা অবশ্য পুরোনো। প্রায় প্রতি মৌসুমেই নতুন দল কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি যুক্ত হয় বিপিএলে। এতে একটি দলের নির্দিষ্ট সমর্থকগোষ্ঠী যেমন তৈরি হয় না, তেমনি লম্বা মেয়াদে ক্রিকেটীয় পরিকল্পনাও থাকে না ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর।

পেশাদারির অভাব, জোড়াতালি দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তি কিংবা খেলোয়াড় বেচা-কেনা, আকস্মিক টুর্নামেন্টের বাইলজ বদলে যাওয়া, ফিক্সিং কেলেঙ্কারি, ভালো উইকেটের হাপিত্যেশ, টুর্নামেন্টের জন্য বছরে নির্দিষ্ট কোনো স্লট না থাকা, তারকা কিংবা ভালো মানের বিদেশি ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতি, নিম্নমানের সম্প্রচার বা প্রডাকশন নিয়ে আলোচনা থাকে প্রতি মৌসুমেই। বিপিএলে আগ্রহী নন বেশির ভাগ নামীদামি ধারাভাষ্যকারেরা।

গত এক দশকে বিপিএলে চালু করা যায়নি হোম ও অ্যাওয়ে পদ্ধতি। এখানে অবশ্য বিসিবির নীতিনির্ধারকেরা কিছু সীমাবদ্ধতা সামনে আনেন। হোম ও অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে টুর্নামেন্ট করতে শুধু ভালো মাঠই নয়; জরুরি পাঁচ তারকা মানের হোটেল, বিমানবন্দর, যাতায়াতসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। সে কারণে এক মিরপুরের বিসিবি একাডেমি মাঠেই হয় সব দলের প্রস্তুতি ক্যাম্প।

বিশ্বের উন্নত ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে নতুন নতুন বিষয় যোগ হয়, লিগগুলো যতটা উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিনির্ভর—বিপিএলের অবস্থান ঠিক বিপরীত। আয়োজক কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বেশির ভাগই অন্যদের অনুকরণপ্রিয়—সে দলের নাম, লোগো, জার্সির নকশা থেকে শুরু করে প্রায় সব কার্যক্রমেই। নেতিবাচকের মাত্রা কমিয়ে বিপিএলকে আরও সুশৃঙ্খল, সমস্যামুক্ত আর ইতিবাচক করে তুলতে না পারা নিয়ে আফসোস আছে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদেরও। নিজাম উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, ‘কিছু আফসোস থাকবেই। তবু এই পরিস্থিতিতে যে বিপিএল হচ্ছে, প্রশংসা করা উচিত। আমাদের বার্তা পরিষ্কার, আগামী মৌসুম থেকেই আমরা চেষ্টা করব আরও পরিকল্পিতভাবে এবং লম্বা মেয়াদি ফ্র‍্যাঞ্চাইজি নির্ধারণ করার। দীর্ঘ মেয়াদে করলে বড় গ্রুপগুলো আসবে। সবকিছুর সঙ্গে বিনোদনের মাত্রাটাও (ভলিউম) তখন বাড়বে।’