Ajker Patrika

ধান না চিংড়ি?

সম্পাদকীয়
ধান না চিংড়ি?

তিন বছর ধরে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এটা মূলত আমাদের দেশের কৃষকের কারণে সম্ভব হয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কাখাদ্যসংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে মানবিক বিপর্যয়সহ নানা ধরনের সংকটের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ধান উৎপাদনের বিকল্প নেই। মাঝেমধ্যে আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে কৃষকের ধান চাষে বিঘ্ন ঘটে। কৃষকেরা তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ধান উৎপাদন করতে পারেন না।

আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ৪ মার্চ ‘তীব্র লবণাক্ততায় নষ্ট হচ্ছে ডাকাতিয়া বিলের ধান’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে তীব্র লবণাক্ততায় ডাকাতিয়া বিলের কয়েক হাজার বিঘার ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কয়েক শ কৃষক। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল হলো ডাকাতিয়া। যেটি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় অবস্থিত।

স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে নব্বইয়ের দশকে স্থানীয় জনগণ ওয়াপদার বেড়িবাঁধ কেটে এই বিলে পানি আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এর পর থেকে এই বিলে কৃষকেরা ঘের তৈরি করে মাছ ও ধানের চাষ করে আসছেন। চিংড়ি চাষ ও মাছ ধরার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বেশ কয়েকটি স্লুইসগেট দিয়ে আশ্বিন-কার্তিক মাসে বিলে লোনাপানি প্রবেশ করিয়ে থাকে। লোনাপানির কারণে ধানগাছ মরে যাচ্ছে। এ ছাড়া একটি স্লুইসগেটের কপাট ভেঙে গেছে এবং দুটি গেটে কোনো ধরনের কপাটই নেই। এ কারণেও ডাকাতিয়া বিলে ব্যাপকভাবে লোনাপানি প্রবেশ করছে। লবণাক্ততায় ধানগাছ মারা যাওয়ায় ধানখেত পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন স্থানীয় অনেক কৃষক।

কিন্তু কৃষকের এ গুরুতর সমস্যার বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কেউই দায় না নেওয়ার নীতি নিয়েছে। ফলে সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। স্থানীয় সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।আবার পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, অপরিকল্পিতভাবে স্লুইসগেট খুলে মাছ ধরা এবং চিংড়ি চাষের জন্য স্থানীয়রাই দায়ী।

স্থানীয় সবাই কি লোনাপানি ঢোকানোর জন্য দায়ী? সম্ভবত চিংড়িঘের মালিকেরাই তাঁদের সুবিধার জন্য এ কাজটি করে থাকেন। প্রশ্ন হলো, ধান চাষ বেশি জরুরি, নাকি চিংড়ি চাষ? এ বিষয়টি নির্ধারণ করার দায়িত্ব কার? ধান চাষ যদি জরুরি হয়ে থাকে, তাহলে লোনাপানি নিষ্কাশন অবশ্যই করতে হবে। আর যদি চিংড়ি চাষকেই লাভজনক ভাবা হয়, তাহলে ধান চাষের ব্যবস্থা বাদ দিতে হবে। পরস্পরের ওপর দায় না চাপিয়ে সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে স্থানীয় সব পক্ষকে আলোচনায় বসতে হবে। সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকারি প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যেমন এ ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় থাকার সুযোগ নেই, তেমনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও চোখ বুজে থাকতে পারেন না। কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান নষ্ট হওয়া খুব সাধারণ ঘটনা নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লতিফ সিদ্দিকী অবরুদ্ধ, নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে

রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে

বড় ভাইসহ ডিবি হেফাজতে থাকা সবার সসম্মানে মুক্তি চাই: কাদের সিদ্দিকী

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত