Ajker Patrika

মেঘপল্লী, সুইমিংপুল ও বাস্তবতা

সম্পাদকীয়
মেঘপল্লী, সুইমিংপুল ও বাস্তবতা

নামটা সুন্দর। মেঘপল্লী। মেঘের কাছে পল্লী অথবা মেঘ দিয়ে তৈরি পল্লী, যে যার মতো নামের অর্থ করে নিতে পারেন। তবে সাজেকে অবস্থিত মেঘপল্লী নামের রিসোর্টটিতে হঠাৎ করে এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটতে শুরু করল! রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে সেই সংবাদ এসে পৌঁছাল খোদ সংবাদপত্রের অফিসে। কী সেই খবর? খবর হলো, মেঘপল্লী রিসোর্টে পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে সুইমিংপুল। আপাতত সুসংবাদ রয়েছে একটা। পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর ভ্রাম্যমাণ আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য এই সুইমিংপুল নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এই কাণ্ডের কারণে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন মেঘপল্লী রিসোর্টকে।

আমাদের শঙ্কা, ‘অনির্দিষ্টকাল’ যদি কোনো কারণে ‘নির্দিষ্টকাল’-এ পরিণত হয় এবং আবার পাহাড় কেটে সুইমিংপুল বানানোর চেষ্টা করে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ, তখন কী হবে? আমাদের দেশে কত অসম্ভবই তো সম্ভব হয়। আইনের ফাঁকফোকর গলে কত ঘটনাই না ঘটে! ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা যে দেশে লোপাট হয়ে যেতে পারে, সেই দেশে স্রেফ পাহাড় কেটে সামান্য একটি সুইমিংপুল তৈরি করতে গিয়ে হেরে যাবে শক্তিমানেরা? বিশ্বাস হতে চায় না! আইন আছে এবং আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নানা কিছু করার নজিরও আছে আমাদের দেশে। সুতরাং, পাহাড় কেটে মেঘপল্লীতে সুইমিংপুল তৈরি হবে না—এ কথা এখনই বিশ্বাস করার কারণ নেই।

আমাদের দেশে পর্যটনশিল্পের কথা বলতে হয় বেদনার্ত হৃদয়ে। এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে পর্যটন এলাকাগুলোর নান্দনিকতাকে খুন করে ফেলল! কক্সবাজারের কথাই ধরা যাক। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, এই পর্যটন শহরটি গড়ে তোলার সময় নান্দনিকতার সঙ্গে যেন আড়ির সম্পর্ক পাতিয়েছিলেন হোটেল-মোটেল মালিক বা উদ্যোক্তারা। তাঁদের বেশির ভাগই ভেবে দেখার চেষ্টা করেননি, সমুদ্রপাড়ে যে অবকাশকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে, তা যেন বস্তির মতো না হয়ে ওঠে। এখানে এসে যেন প্রশান্তি পায় মানুষ। কিন্তু সেই পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে কি না, সেটা কক্সবাজারে গেলে যে কেউই বুঝতে পারবেন।

পর্যটনের বিকাশ বা ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছি না। প্রসঙ্গক্রমে এল কথাটা। সাজেক একটি দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সম্পদ। কক্সবাজার বা কুয়াকাটাও তাই। আমরা কেন প্রকৃতির লীলাভূমিগুলোর গলা টিপে ধরছি? কেন কোনো নিয়মনীতি মেনে এই পর্যটন এলাকাগুলো বাঁচানোর চেষ্টা করছি না? এত এত সরকারি কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে এত এত জায়গায়, অথচ সমুদ্র আর পাহাড়কে পরাজিত করতে কেন প্রতিনিয়ত এসে দাঁড়াচ্ছে দানব। ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে শুভ যা আছে তার সবটা। এ রকম অবস্থায় পাহাড় বা সমুদ্রকে বাঁচানো খুব কঠিন। কেন পাহাড় আর সমুদ্রকে বাঁচানো দরকার, সে ব্যাপারে একেবারে শিশুশ্রেণি থেকেই পড়ানো দরকার। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা না জন্মালে তো অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে যেকোনো কর্তৃপক্ষ যেকোনো দুষ্কর্মকে সনদ দিয়ে দেবে!

ভ্রাম্যমাণ আদালত সুইমিং পুল নির্মাণ বন্ধ করে ভালো করেছেন। কিন্তু সংশয় তো যাচ্ছে না মোটে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত