Ajker Patrika

নদীতে ২৪৭ প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ০৬ মে ২০২২, ১২: ২৫
নদীতে ২৪৭ প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস

বরিশালের মেঘনা, কালাবদর ও মাসকাটা নদীতে নির্বিচারে গলদা চিংড়ির রেণু শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চিংড়ির রেণু শিকারের সময় ধ্বংস করা হচ্ছে ২৪৭ প্রজাতির অন্য মাছের রেণু। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ৫০ লাখের বেশি চিংড়ির রেণু উদ্ধার করা হয়েছে। জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, রেণু ধরার তৎপরতা বন্ধের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হচ্ছে।

জানা গেছে, মেঘনা, তেঁতুলিয়া, মাসকাটা, কালাবদরের মিষ্টি পানি থেকে প্রতিবছর এই সময় রেণু ধরা হয়। বরিশাল সদরের মীরগঞ্জ, শায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহন, লাহারহাট, নেহালগঞ্জ, তালতলি থেকে এই রেণু খুলনা ও যশোরে পাচার হয়। গত এক মাসে ৫০ লাখের রেণু বেশি খুলনা ও যশোরে পাচার হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে অন্যান্য প্রজাতির মাছের।

বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে গলদা চিংড়ি ডিম ছাড়ে। গত পরশু ৮ লাখ ৮০টি রেণু তালতলী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত এক মাসে ৫০ লাখের বেশি রেণু খুলনা ও যশোরে পাচার হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস এলেই এক শ্রেণির প্রান্তিক মানুষ নদী থেকে রেণু ধরতে নেমে পড়েন। জেলার সদর উপজেলার কীর্তনখোলা, কালাবদর, মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনা, মাসকাটা, হিজলার মেঘনার তীরে নগদ টাকার লোভে শিশু ও নারীরাও গলদা চিংড়ির রেণু শিকারে নামেন। এর নেপথ্যে রয়েছে রেণু পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্র। এদের অপতৎপরতায় সর্বনাশ হচ্ছে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের রেণু।

মেঘনার ঘেরা মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, ডিম ছাড়ার এই মৌসুমে নদী তীরে শিশু ও নারীরা মিলে এই রেণু ধরছেন। প্রতিটি রেণু বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা ৮০ পয়সায়। এই মৌসুমে মেহেন্দীগঞ্জ থেকে দেড় লাখ রেণু উদ্ধার করা হয়েছে। উপজেলার গবিন্দপুর, উলানিয়া, সাদেকপুর সংলগ্ন মাসকাটা, মেঘনা নদীতে রেণু নিধন চলছে। মৎস্য কর্মকর্তা কামাল আরও বলেন, সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো চিংড়ির রেণু ধরতে গিয়ে ২৪৭ প্রজাতির অন্য মাছের রেণু ধ্বংস হচ্ছে। প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে এই রেণু কিনে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র।

একই ধরনের মন্তব্যে হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. পারভেজ বলেন, রেণু নিধন রোধে তাঁরা অভিযান চালাচ্ছেন। তবে এই দুই উপজেলার প্রান্তিক জেলে ও সাধারণ মানুষ বলেছেন তাঁরা পেটের দায়ে রেণু ধরছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নগদ টাকা দেন, তাই রেণু শিকার করছেন। এর মাধ্যমে অন্য পোনা ধ্বংস হওয়ার বিষয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

কেবল হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ নয়, সদর উপজেলার নদীগুলোতেও রেণু নিধন চলছে নির্বিচারে। বিশেষ করে চন্দ্রমোহন, লাহারহাট, সায়েস্তাবাদ এলাকায় ধরা এই রেণু পাচারের প্রধান গেটওয়ে নগরের আ. রব সেরনিয়াবাত সেতুর ঢাল। এখান থেকেই রেণু পাচার হচ্ছে খুলনা, যশোরের ঘেরে।

সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউপির জাতীয় মৎস্য সমিতির সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, ‘চন্দ্রমোহনের ওক্কার চর নামে একটি ডুবচরে এই রেণু ধরা হয়। এর মূল ঘাঁটি লাহারহাট। খুলনার পার্টি এই রেণু পাচার করছে।’

বরিশাল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জিব সন্যামত বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে ভোলার মোহনা থেকে আসা প্রায় ১০ লাখ চিংড়ির রেণু উদ্ধার করা হয়েছে। আইনে রেণু ধরলে জরিমানা অথবা ১ থেকে ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত